ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম (সিনিয়র সচিব) ও স্ত্রী লায়লা জেসমিন দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একই অভিযোগে সাবেক প্রথম সচিব (এনবিআর) ঈদতাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর শর্মি মালা আনসারীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২১ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো.

জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপ পরিচালক সাইদুজ্জামান।

আবেদনে বলা হয়, আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম, ঈদতাজুল ইসলাম এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে নিজ নামে ও পরিরাদের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগরর অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রা রোধ করা প্রয়োজন। 

২০২০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুন মুনীম। সে সময় তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব দায়িত্বরত ছিলেন। পরে একই বছর জানুয়ারির ৫ তারিখ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদের সময় শেষ হলে, তার স্থলাভিষিক্ত হন তিনি আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম।

ঢাকা/এম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ শত য গ রহম ত

এছাড়াও পড়ুন:

লারার রেকর্ড ভাঙার চেষ্টাই করলেন না মুল্ডার, অপরাজিত রয়ে গেলেন ৩৬৭ রানে

নিজের রেকর্ড অন্য কেউ কেড়ে নিলে তাঁকে অভিনন্দনবার্তা জানানোর লৌকিকতা খেলাধুলা শেখালেও কাজটা অবশ্যই কষ্টের। সেটা বুকে চেপে রেখেই ২০০৩ সালে অক্টোবরে হেইডেনকে (৩৮০) অভিনন্দন জানাতে হয়েছিল লারাকে। তখনো খেলা না ছাড়ায় প্রায় ছয় মাস পর ২০০৪ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডটি পুনরুদ্ধার করে ৪০০ রানের এভারেস্ট গড়েছিলেন লারা। রেকর্ড ভাঙার জন্যই গড়া হয়—ক্রিকেটে এমন কথা প্রচলিত থাকলেও লারার সেই রেকর্ড কেউ ভেঙে দিতে পারেন, তা সম্ভবত কারও মাথায় আসেনি।

কিন্তু ক্রিকেট খেলাটা এমনই। গৌরবময় অনিশ্চয়তায় ভরপুর। বুলাওয়েতে আজ দ্বিতীয় দিন সকালের সেশনে মুল্ডার যখন ট্রিপল সেঞ্চুরি পেলেন, তখন লারা নিশ্চয়ই প্রমাদ গুনেছেন। জিম্বাবুয়ের বোলিং একেবারে নির্বিষ, উইকেটও পাটা আর মুল্ডার খেলছিলেন ঠান্ডা মাথায়। অতিরিক্ত কিছুই করতে হচ্ছিল না। প্রতি ওভারেই ড্রাইভ, কাট, পুল-হুক খেলার বল পাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে দেখে মনে হচ্ছিল, পাড়ার বোলিং দলের বিপক্ষে ব্যাট করছিলেন মুল্ডার! ওই মুহূর্তে টিভিতে কিংবা স্ট্রিমিংয়ে চোখ থাকলে আর সবার মতো লারাও নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন, তাঁর রেকর্ড সম্ভবত টিকবে না! একটু কি অসহায় লেগেছে কিংবদন্তির? ১৮ বছর আগেই অবসর নেওয়ায় হারানো রেকর্ড তো আর নিজের করে নেওয়ার সুযোগ নেই ৫৬ বছর বয়সী এই কিংবদন্তির।

ক্রিকেটে সতীর্থদের মাঝে ‘টেলিপ্যাথিক’ যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু মুল্ডার ও লারার মাঝে এমন কিছুই যে নেই তা নিশ্চিত। তবু মুল্ডার যেন কীভাবে লারার মনের কথা পড়ে ফেললেন! ব্যক্তিগত ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিলেন মুল্ডার। গোটা পৃথিবী তখন দ্বিতীয় সেশনে তাঁর বিশ্ব রেকর্ড দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্যাটিংয়ে নামেনি! দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে রেখে এবং নিজে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন অধিনায়ক মুল্ডার! লারা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন?

তবে বুলাওয়ে টেস্টের গতিপ্রকৃতি দেখে তাঁর মনে একটি প্রশ্নও জাগতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা কেন দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামল না? কেবল দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষ হয়েছে, যদি আজ সারাদিনও তাঁরা ব্যাট করে তবু ড্র নয়, জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকতে তাদের। কারণ হাতে আরও তিন দিন। এর মধ্যে জিম্বাবুয়েকে দুই ইনিংসেই অলআউট করার মতো বোলিং শক্তি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। তাহলে?

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ইতিহাস তো প্রথম সেশনেই গড়েছেন মুল্ডার। সেটাকেই ব্যক্তিগতভাবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে নেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। একবার ভাবুন তো, একেবারে নির্বিষ বোলিংয়ের বিপক্ষে পাটা উইকেটে একজন ব্যাটসম্যান প্রায় দুই দিন ধরে ব্যাট করে ৩৩৪ বলে ৩৬৭ রানে অপরাজিত। স্ট্রাইকরেট ১০৯.৮৮! এই অবস্থায় দ্বিতীয় সেশনে লারার অপরাজিত ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙতে আর কয়টা ডেলিভারিই বা লাগত মুল্ডারের? বড়জোর ৫ থেকে ১০ ওভার? এই সময়টুকু নিলে সেটা দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের লক্ষ্যে কি বাধা হয়ে দাঁড়াত? মোটেও না।

তাহলে কি লারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আর ব্যাটিংয়ে না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুল্ডার? এমনও হতে পারে, টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি লারার মতো কিংবদন্তির নামের পাশেই মানায়—এটা ভেবেই আর ব্যাটিং করেননি? যেভাবে ১৯৯৮ সালে পেশোয়ার টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যানকে সম্মান দেখিয়ে ব্যক্তিগত ৩৩৪ রানেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন অধিনায়ক মার্ক টেলর। তখন পর্যন্ত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রানই ছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু এই ভাবনাতেও একটি প্রশ্নের অবকাশ আছে।

মুল্ডার কিন্তু পারতেন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলে থামতে। মানে হেইডেনের ৩৮০ রান পেরিয়ে লারাকে সামনে রেখে থামতে পারতেন। তিনি সেটাও করেননি। তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত? সেটা নিশ্চয়ই আজ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানা যাবে। তার আগ পর্যন্ত এসব প্রশ্ন ঘুরছে সবার মনে।

তবে মুল্ডার থামলেও নতুন ইতিহাসও হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের রেকর্ড এখন তাঁর। হাশিম আমলার পর টেস্টে দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান এখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে। শুধু কী তাই, বীরেন্দর শেবাগের ২৭৮ বলের পর দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন মুল্ডার। এর পাশাপাশি মুল্ডার পেছনে ফেলেছেন হানিফ মুহাম্মদের একটি কীর্তিকেও। ১৯৫৮ সালে বার্বাডোজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৩৭ রানের ইনিংসটি এত দিন ছিল টেস্টে প্রতিপক্ষের মাঠে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ৬৭ বছর পর রেকর্ডটি এখন মুল্ডারের।

কিন্তু ওই প্রশ্ন থাকছেই। মুল্ডার কেন আর ব্যাটিংয়ে নামলেন না? দলের জয়ের কথা ভেবে নাকি লারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে? কে জানে!

সম্পর্কিত নিবন্ধ