রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনসহ তিন দাবিতে অনশনে শিক্ষার্থীরা
Published: 22nd, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনসহ তিন দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অনশনে বসেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে বিভাগের সামনে তাঁরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।
তিন দফা দাবি হলো ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তন বা সংস্কার করতে হবে, যাতে বিষয়ের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে; পিএসসি ও ইউজিসিতে ফোকলোর বিষয়ের নাম সংযুক্ত করে কোড প্রদান নিশ্চিত করতে বিভাগীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল এক মাসের মধ্যে ও নির্ধারিত সময়ে ক্লাস রুটিন প্রকাশ করতে হবে।
অনশনে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘এই মুহূর্তে দরকার, ফোকলোর বিভাগের সংস্কার’, ‘আমাদের দাবি, আমাদের দাবি, মানতে হবে, মানতে হবে’, ‘সিন্ডিকেট না মুক্তি, মুক্তি মুক্তি’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফোকলোর বিভাগের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে তাঁরা তিন দফা দাবি জানিয়েছিলেন। শিক্ষকেরা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করার বদলে বিভিন্ন ছলচাতুরী করছেন। এ জন্য তাঁরা আজ অনশনে বসেছেন। দাবি মানা না পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।
বিভাগের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার শুভ বলেন, ফোকলোর একটি বহুমাত্রিক বিষয়ভিত্তিক বিভাগ। যেখানে তাঁরা শুধু লোককাহিনি বা গান-নৃত্য নয়; বরং সমাজ, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও সংস্কৃতির সমন্বিত পাঠ নিয়ে থাকেন। তাঁদের পাঠ্যক্রম আধুনিক, প্রাসঙ্গিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম। তবে অনেকেই বিভাগের পরিধি ও গুরুত্ব বুঝতে পারে না। অনেকেই মনে করেন এটি শুধু পুরোনো গান, নাচ বা লোকগল্পের পড়াশোনা, যা বাস্তবজীবনে কাজে লাগবে না। চাকরির ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন। শুধু এই নামের কারণে তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিলয় দে সরকার বলেন, বিভাগের শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কবে তাঁরা আন্দোলনের ফলাফল পাবেন, তা নিশ্চিত নন। তাঁরা কালক্ষেপণ নয়, দ্রুত দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত চান। সেই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
এ বিষয়ে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিগুলো উত্থাপন করেছিলেন। তাঁরা সেগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ মে একটি উপকমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব পেশ করবে। ইতিমধ্যে কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছে। তাঁদের দাবিগুলোর সঙ্গে শিক্ষকেরাও একমত। তবুও তাঁরা কেন আন্দোলন করছেন, তা বুঝতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, দাবিগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নিতে হবে, কিন্তু সেটি তো সম্ভব নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ কল র ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ৮২ ফিলিস্তিনির
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এদিন আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
রোববার সারাদিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং একাধিক পরিবারের সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন।
এর মধ্যে গাজার শেখ রাদওয়ান ও আল-নাসর এলাকায় দুইটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। সেখানে বাস্তুচ্যুত বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন, যাদের অনেকেই ছিলেন শিশু ও নারী। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকেই আটকা পড়ে আছেন।
ওয়াদি গাজার দক্ষিণে এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে ৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন। গাজা শহর ও মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলায় ৬ জন নিহত হন।
এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি।
উত্তর গাজার আল-সাফতাওয়ি এলাকায় এক বেসামরিক গাড়িতে ড্রোন হামলায় তিন ভাই মারা যান। শেখ রাদওয়ানে এক আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে ড্রোন হামলায় আরও ৩ জন নিহত হন। গাজার পশ্চিমের শাতি শরণার্থী শিবিরে, একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর বিমান হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতাল জানায়, নিহতদের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় এসেছে এবং আহতদের সংখ্যা ছিল অনেক। খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় দুটি অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশু ও এক গর্ভবতী নারী রয়েছেন।
আল আলবানী মসজিদের কাছে অপর এক ড্রোন হামলায় ৪টি মরদেহ উদ্ধার হয়, তাদের তিনজনই শিশু। গাজার আল-তুফাহ ও আল-দারাজ এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের ৮ সদস্য ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন, অন্য একটি হামলায় আরও ৩ জনের প্রাণ গেছে।
এদিকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য ও পানি সংকটে থাকা মানুষজন যখন ত্রাণের আশায় লাইন দিচ্ছেন, তখনই এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে।
যদিও আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে, তবুও ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার ধারা অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এমন অবস্থায় গত নভেম্বরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।