নেত্রকোনায় গোসলে নেমে দুই শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু
Published: 23rd, May 2025 GMT
নেত্রকোনায় পুকুর ও খালে গোসলে নেমে পানিতে ডুবে দুই শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দুয়া ও মোহনগঞ্জ উপজেলার দুটি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলো কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা গ্রামের আলম মিয়ার মেয়ে মাহমুদা নূর (৮) ও মোহনগঞ্জ পৌরসভার সাতুর এলাকার সিরাজ মিয়ার মেয়ে তানিয়া জাহান (৯)। মাহমুদা স্থানীয় মাসকা ইকরা বিদ্যা নিকেতনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী এবং তানিয়া জাহান মদিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তানিয়া গত বুধবার পরিবারের সঙ্গে মোহনগঞ্জ পৌরসভার কাজিরহাটি এলাকায় মামার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়। গতকাল বিকেলে সে নুসরাত ও বৃষ্টিকে নিয়ে পাশের সাপমারা খালের ধারে ঘুরতে যায়। সেখানে তিনজন খালের পানিতে গোসলে নামে। একপর্যায়ে পানির স্রোতে তানিয়া তলিয়ে যায়। সহপাঠীরা চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তানিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেন।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। কোনো অভিযোগ না থাকায় পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল দুপুরে মাহমুদা প্রতিদিনের মতো বাড়ির পাশের পুকুরে গোসলে যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে পুকুরে তাঁর মরদেহ ভেসে উঠলে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হনগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, বিদ্যালয় বন্ধ
রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে উপজেলার নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ আছে। বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়ালে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়টি আবার খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত সোমবার রাতে বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসে ধূমপান করছিল। তখন নবম শ্রেণির এক ছাত্রের নেতৃত্বে কয়েকজন অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রকে গালাগালের পর শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়। পরে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্ষুব্ধ হয়ে তার বন্ধুদের বিদ্যালয়ে ডেকে আনে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধর করা হয়। পরে ওই ছাত্রের বন্ধু ও স্বজনেরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, এ ঘটনার পর মীমাংসার জন্য ওই দুই ছাত্রের অভিভাবকদের সোমবার ডাকা হয়। কিন্তু এক পক্ষ উপস্থিত না থাকায় সালিস হয়নি। পরে আহত ছাত্রের স্বজনেরা স্থানীয় শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ওই দিন রাত আটটার দিকে পাশের চারা বটতলা গ্রামে অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী ও তার আরেক বন্ধুর বাড়িতে হামলা চালান। একপর্যায়ে চারা বটতলা গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন।
চারা বটতলা গ্রামে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে। অথচ আমি ভালো–মন্দ কিছুই জানি না। কিন্তু শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন এসে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো না করলে আরও বেশি ক্ষতি হতো।’
এদিকে শ্রীখন্ডী গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি জানানোর জন্য অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চারা বটতলা গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের বাবাও আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্বের কারণে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বাদ দিয়ে পাশে বিলের ধারে গিয়ে সিগারেট খায়। এখন ক্লাসরুমে খাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। এমনিতেই ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে, এর আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনায় বেশ ক্ষতি হবে।
নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি। এ জন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিদ্যালয়ে তিন দিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। নাওদাড়া গ্রামের মিঠু সরকার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করে গতকাল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।