আমাদের সবারই জানা, জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ শুধু একটি কাল্পনিক কাহিনি নয়; এটি ইতিহাসের গহিনে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবের বাস্তবতা ও স্বৈরতন্ত্রের গঠন সম্পর্কে একটি গভীর রাজনৈতিক রূপক। ১৯৪৫ সালে যখন বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন এটি বলশেভিক বিপ্লব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্তালিন যুগের ভীতিকর বাস্তবতার ব্যঙ্গাত্মক চিত্রায়ণ ছিল। আজও এই উপন্যাস পৃথিবীর নানা দেশে রাজনৈতিক বিপ্লব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কাকে বুঝতে এক অমূল্য রোশনাই।

বর্তমান বাংলাদেশে যেখানে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে সংঘাত ও বিভাজনে নিমজ্জিত, সেখানে ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আমাদের জন্য এক কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় আয়না। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, যেকোনো বিপ্লবের সত্যিকারের সাফল্য আসে আদর্শের প্রতি স্থিরতা ও নৈতিক দায়বদ্ধতা বজায় রেখে। ক্ষমতার লোভ ও স্বার্থপরতা যদি দমন না করা যায়, তবে নতুন ফ্যাসিবাদের উত্থান অবশ্যম্ভাবী।

অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আমাদের আজও বলে, সততা ও সমালোচনার অভাবে বিপ্লবের আদর্শ ম্লান হয়ে যায়, আর নতুন শোষণকারীর হাতেই দেশ ও সমাজ ঢেলে সাজানো হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বার্তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্র রক্ষায় এই শিক্ষা অন্তত আজকের প্রজন্মকে স্বচ্ছভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

উপন্যাসটি শুরু হয় এক পশু খামারে, যেখানে মালিক মিস্টার জোনস প্রাণীদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করান, কিন্তু সেভাবে খাবার বা বিশ্রাম দেন না। শূকর, ঘোড়া, গরু, ভেড়া, কুকুরসহ সব প্রাণী একদিন সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা আর এই অন্যায় সহ্য করবে না।

বয়স্ক শূকর ওল্ড মেজর এক রাতে সবাইকে বিপ্লবের আহ্বান জানায়। কিছুদিন পর সে মারা যায়। কিন্তু তার আদর্শ থেকে যায় প্রাণীদের মনে। এরপর দুই তরুণ শূকর স্নোবল আর নেপোলিয়নের নেতৃত্বে প্রাণীরা বিদ্রোহ করে। তারা মিস্টার জোনসকে খেদিয়ে দেয় এবং খামারটির নাম বদলে রাখে ‘অ্যানিমেল ফার্ম’।

প্রাণীরা নিজেদের জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করে, মানুষদের আচরণ নিষিদ্ধ করে, এমনকি জাতীয় সংগীতের মতো একটি গানও গ্রহণ করে—‘বিস্টস অব ইংল্যান্ড’। শুরু হয় এক নতুন শাসনব্যবস্থা, যেটি সমতার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই শাসনেই জন্ম নেয় নতুন অন্যায়।

‘অ্যানিমেল ফার্ম’–এর পটভূমি একটি সাধারণ খামারের প্রাণীর গল্প হলেও এর আখ্যানে লুকিয়ে আছে বিপ্লবের জটিলতা। প্রথমে তাদের সংগ্রাম ছিল শোষকের বিরুদ্ধে, যেখানে আদর্শ ছিল ‘সব প্রাণী সমান’। কিন্তু বিপ্লবের পর নেপোলিয়ন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা শোষণের নতুন রূপ প্রতিষ্ঠা করে। তারা ত্যাগের বদলে লোভ, ন্যায়বিচারের বদলে অন্যায়, মুক্তির বদলে নতুন বন্দিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

এখানে সবচেয়ে ব্যতিক্রম বিষয় হলো, যে বিপ্লবের ভেতরই তার আদর্শিক শত্রু জন্ম নেয়। সেই শত্রু হলো ক্ষমতার লোভ, আত্মকেন্দ্রিকতা ও সম্পূর্ণ নৈতিক শূন্যতা, যা নতুন শাসকদের মধ্যে প্রবেশ করে। তারা নিজেকে আগের শোষকদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর বানিয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়াই ‘অ্যানিমেল ফার্ম’–এ অত্যন্ত স্পষ্ট ও নির্মমভাবে ফুটে ওঠে।

অরওয়েল নিজে একজন সমাজতন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু তিনি সমাজতন্ত্রের স্বপ্নকে অন্ধভাবে পূজা করতেন না। তাঁর লেখায় দেখা যায়, সমাজতন্ত্রের ভেতরে থাকা সমালোচনার অভাব ও আদর্শের অপব্যবহারের কারণে নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের সৃষ্টি হতে পারে। এটি তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানের কঠোর আত্মসমালোচনা ছিল, যা অনেক সময় তাঁকে বামপন্থী মহলে বিতর্কিত করেছে।

‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আমাদের শেখায়, সমাজতন্ত্রী রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও সমালোচনার অব্যাহত প্রক্রিয়া অপরিহার্য। আদর্শের প্রতি অন্ধবিশ্বাস‌‌ ও ক্ষমতার অপব্যবহার একসঙ্গে মিললে সেটিই পারে সবচেয়ে ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের জন্ম দিতে।

বামপন্থী চিন্তাবিদেরা, বিশেষ করে ২০ শতকের মধ্যভাগে, যেমন হার্বার্ট মারকুজ ও রাল্ফ মিলিব্যান্ড, অরওয়েলের সমালোচনাকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছিলেন। তাঁরা বুঝেছিলেন যে সমাজতন্ত্রের টেকসই সাফল্যের জন্য দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্নিহিত সমালোচনা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য। বাংলাদেশের বামপন্থী ইতিহাসেও এই পাঠ স্পষ্ট, যেখানে আত্মসমালোচনার অভাবে অনেক সময় বিভাজন ও দুর্বলতা দেখা গেছে।

ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে যেখানে শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত, সেখানে ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। বিপ্লবের শক্তিগুলো যখন আদর্শের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তখন জাতীয় ঐক্য ভেঙে যায় এবং শোষণকারীর চেয়ে ভয়ংকর নতুন শোষণ শুরু হয়। এখানে সরাসরি উল্লেখ না করলেও পাঠক স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে এটি বর্তমান বাংলাদেশের সংকটের আঙুলে আঙুল রেখে দেওয়া এক ধারালো পর্যালোচনা।

অরওয়েল উপন্যাসটি লেখেন এক এমন সময়ে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একই জোটে অবস্থান করছিল। এই জোট রক্ষার কূটনৈতিক প্রয়োজনেই পশ্চিমা প্রকাশকেরা অরওয়েলের লেখাকে বিপজ্জনক বলে বিবেচনা করেছিলেন। অরওয়েল সাহস করে রুশ বিপ্লবের বিকৃতি ও স্ট্যালিনতন্ত্রের নির্দয় বাস্তবতা তুলে ধরেন, যার ফলে তাঁকে বহু প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। এমনকি ব্রিটিশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত একটি প্রকাশককে পরামর্শ দেয় এই বই না প্রকাশ করার জন্য।

তবে শুধু সেই সময়েই নয়, এই উপন্যাস এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তে বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই বই স্কুল পাঠক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এতে শূকর ও মদ্যপানের উল্লেখ রয়েছে যা ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়। চীনে বইটির অনলাইন প্রচার কড়া সেন্সরশিপের আওতায় রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ‘অ্যানিমেল ফার্ম’–সংক্রান্ত যেকোনো পোস্ট, আলোচনা বা ছবি প্রায়ই মুছে ফেলা হয়। অন্যান্য স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীন দেশেও এই বই নিষিদ্ধ বা সীমিতভাবে অনুমোদিত।

এসব তথ্য একটি বড় সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে—রাজনৈতিক সমালোচনা, বিশেষত শাসকের মুখোশ খুলে দেওয়ার সাহস সব সময়ই এক বিপজ্জনক কাজ। ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি সেই বিপদের দলিল, যা সাহিত্যের ভেতর দিয়ে সত্য বলা মানে কতখানি আত্মত্যাগ হতে পারে, তা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়।

‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আমাদের শেখায়, যেকোনো বিপ্লবের পর আদর্শকে রক্ষা করতে হলে স্বচ্ছতা, সমালোচনা ও দায়বদ্ধতা জরুরি। ক্ষমতা ও স্বার্থপরতার হাত থেকে বিপ্লবকে রক্ষা করতে হবে, নতুবা নতুন শোষণ ও ফ্যাসিবাদের জন্ম দেওয়া অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি গম্ভীর পাঠ, যা বিপ্লবের শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ভাবার আহ্বান জানায়।

জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ উপন্যাসটি ৭০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রকাশনা যেমন পেঙ্গুইন ক্ল্যাসিক এবং অরওয়েল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এটি এখন পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০টি ভাষায় পাওয়া গেছে।

যদিও নির্ভুলভাবে অনুবাদের সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন, তবে অনুমান করা হয় যে শতাধিক আলাদা সংস্করণ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বড় ভাষাগুলো যেমন ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, রাশিয়ান, চীনা ও আরবি—প্রতিটির একাধিক অনুবাদ রয়েছে।

এই উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে শিল্পী ও নির্মাতাদের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে। উপন্যাসটি অবলম্বনে এখন পর্যন্ত দুটি প্রধান চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। প্রথমটি ১৯৫৪ সালে যুক্তরাজ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র, যেটি ইতিহাসের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য রাজনৈতিক অ্যানিমেশন হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সিআইএর সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল। দ্বিতীয়টি ১৯৯৯ সালে টিএনটি চ্যানেলের প্রযোজনায় তৈরি হয়—একটি লাইভ-অ্যাকশন টেলিফিল্ম, যেখানে অ্যানিমেট্রনিক প্রাণী ও বাস্তব অভিনেতাদের সমন্বয়ে উপন্যাসটির কাহিনি রূপায়িত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে ছোট-বড় বহু অ্যানিমেটেড ও নাট্যরূপ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে অনেক শিক্ষামূলক ও রাজনৈতিক ব্যাখ্যাধর্মী সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রও রয়েছে।

নাট্যমঞ্চেও ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ বারবার ফিরে এসেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশে এটির নাট্যরূপ মঞ্চস্থ হয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক সংকটকালে এই নাটক নতুন তাৎপর্য নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছে। নাট্যরূপগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ নাট্যনির্মাতা পিটার হল ও গাই মাস্টারসনের প্রযোজনা উল্লেখযোগ্য, যা দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।

বাংলাদেশেও জুলাইপরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অল্পবিস্তর এই বইয়ের প্রসঙ্গ এসেছে। সম্প্রতি একটি সংবাদে দেখা গেছে, ৩০ মে সন্ধ্যা ৬টায় এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত জনস্টিফেনসনের চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সেখানে দর্শকদের জন্য একটি আলোচনা পর্বও থাকবে। বিশেষ আলোচনায় থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যকার ড.

শাহমান মৈশান। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর বাংলাদেশে এটি মঞ্চে এনেছে প্রাচ্যনাট স্কুল, নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা জগন্ময় পাল। যেভাবে চলছে, আশা করছি এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আরও আলোচনা হবে। আলোচনাটা প্রয়োজনীয়ও বটে।

অরওয়েলের এই রচনা আজকের বাংলাদেশে একটি সতর্কবার্তা। বিপ্লবের আদর্শকে রক্ষা না করলে হয়তো আরেকটি নতুন ফ্যাসিবাদ দানবীয় রূপ নেবে এবং সেই পুনরুত্থান থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ হলো সততা, সমালোচনা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র জন ত ক ব স তবত আদর শ র র আদর শ ক ষমত র দ র জন র জন য প রক শ অন য য় র র জন আম দ র নত ন শ

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ শনিবার সকালে সীমান্তের ভাগজোত এলাকায় একটি নৌকা থেকে এই ৯ জনকে নামতে দেখা যায়। পরে তাঁদের ক্যাম্পে নিয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

আজ বিকেলে ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ঠেলে পাঠানো ৯ জনকে বিজিবির স্থানীয় ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ১০টার দিকে সীমান্ত পিলার ১৫৪ থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভাগজোত ঘাট এলাকায় একটি নৌকা থেকে ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নামতে দেখা যায়। স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তাঁরা বিষয়টি বিজিবিকে জানান। বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, প্রায় চার বছর আগে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে তাঁরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির দিল্লিতে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তাঁরা নিজেরাই স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শুক্রবার ওই ৯ জনকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলঙ্গি থানার নিকটবর্তী একটি বিএসএফ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বিএসএফ কাঁটাতারবিহীন চরাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। বাংলাদেশে ঢোকার পর তাঁরা হেঁটে ও ভাড়া করা মোটরসাইকেলে করে ভাগজোত ঘাট এলাকায় পৌঁছান। বিএসএফের ঠেলে পাঠানো ৯ জনের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ২ জন নারী, ২ জন কিশোর ও ১টি শিশু।

বিজিবি জানায়, এ ব্যাপারে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত পিলার ৮৫/১০-এস এর কাছে বিজিবি চরচিলমারী কোম্পানি ও ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের জলঙ্গি কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিজিবি পুশ-ইনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানায়। তবে বিএসএফ তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে বলে উল্লেখ করেছে বিএসএফ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ