পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদের আনন্দ চিন্তাই করা যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাবির ফেব্রিক, রং, ডিজাইন ও কাটিংয়ের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। তবে ফ্যাশনে ছেলেদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই পাঞ্জাবির স্থান শীর্ষে। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে ডিজাইনাররা নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন কাটছাঁট ও রং-ঢংয়ের পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। এবার ঈদেও ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন উদ্যমে পাঞ্জাবির বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে।
পাঞ্জাবির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
পাঞ্জাবির প্রচলন শুরু হয় মূলত মোগল আমলে, যার আদি নাম ছিল কুর্তা। পরে পাঞ্জাব অঞ্চলসহ পূর্ব ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘পাঞ্জাবি’ নামকরণ করা হয়। ইতিহাসের শুরু থেকেই পাঞ্জাবি বাঙালি ছেলেদের পছন্দের পোশাক হয়ে দাঁড়ায়। ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে সে সময় পাঞ্জাবি বানানো হতো মসলিন, খাদি, সিল্ক ও তুলার আবরণের কাপড় দিয়ে। তখন ডিজাইনে থাকত সূচিকার্য ও হাতের কাজের প্রতিচ্ছবি।
তবে কালের পরিক্রমায় পাঞ্জাবির আধুনিকায়ন হয়েছে। ফেব্রিক ও ডিজাইনে পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বয়স, ব্যক্তিত্ব ও চলতি ফ্যাশনের পার্থক্য অনুযায়ী পাঞ্জাবির ডিজাইনে থাকছে নানা বৈচিত্র্য।
ঈদে পাঞ্জাবির সমাহার
ফিউশন ক্লাসিক: এ ধরনের পাঞ্জাবিতে ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্মে আধুনিক কাট ও হাতা লম্বা ও হাই-লো হেমলাইন থাকে। এটির ফেব্রিক সিল্ক ও কটনের হওয়ায় একদিকে যেমন পরতে আরামদায়ক, অন্যদিকে দেখতেও বেশ স্টাইলিশ টাচ; যা অতিরিক্ত জাঁকজমক ছাড়া একটু ভিন্নভাবে পরিপাটি লুক এনে দেয়। সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের পুরুষের পছন্দের তালিকায় এটি স্থান করে নিয়েছে।
ডিজিটাল প্রিন্ট বা ব্লক প্রিন্ট
এ ধরনের পাঞ্জাবিতে মিনিমাল ক্যালিওগ্রাফি ও জ্যামিতিক মোটিফ দিয়ে কারুকাজ করা থাকে।
স্লিম ফিট ও স্ট্রাকচার্ড কাট: এবার ঈদে তরুণদের বেশ নজর কাড়ছে স্লিম ফিট ও স্ট্রাকচার্ড কাটের পাঞ্জাবি। এটির কাঁধ ও কোমরে টেইলার্ড ফিট থাকায় মডার্ন লুক এনে দেয়।
ন্যাচারাল টেক্সচার ও আর্থ টোন: এ ধরনের পাঞ্জাবিও এবার ঈদে বেশ চলছে। এটি মূলত পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলে। এতে র-মিল ফিনিশ বা আনফিনিশড টেক্সচারের সঙ্গে কাঠের বোতাম ও হ্যান্ড স্টিচ অ্যাকসেন্টের থিম ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩০ থেকে ৫৫ বছরের পুরুষের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
নতুনত্বের ছোঁয়া
এবার ঈদকে কেন্দ্র করে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো ডিজাইন ও থিমে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। এগুলোর মধ্যে লা রিভ, সেইলর, রিচম্যান, আড়ং, লুবানান, রঙ বাংলাদেশ ও জেন্টল পার্ক নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব রং-ঢংয়ের পাঞ্জাবি। এতে গলা, বুক, হাতা ও কাঁধের কাটছাঁটে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। বিভিন্ন বয়সের কথা মাথায় রেখে রেগুলার ফিট, স্লিম ফিট ও স্লিম শার্টের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।
টুয়েলভ ক্লদিংয়ের শোরুম ঘুরে জানা যায়, এবারের ঈদুল আজহায় টুয়েলভের আয়োজনে থাকছে মোগল থিম, সফট ফ্লোরাল ডিজাইন আর প্যাস্টেল প্যালেট মিলে তৈরি করা এক রাজকীয় সংমিশ্রণ। ডিজাইনাররা আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে গরমের জন্য আরামদায়ক হবে এমন হালকা রংয়ের কাপড়কেই বেছে নিয়েছেন পাঞ্জাবিতে। এ ক্ষেত্রে লাইট কটন আর জ্যাকার্ড ফেব্রিককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবিগুলোয় রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্যাস্টেল, অফ হোয়াইট, পিচ ও মিন্ট। বাহারি পাঞ্জাবিতে করা হয়েছে মিনিমাল এবং ক্লাসি পিন টাক বা জ্যাকার্ড কাটওয়ার্কের সেলাই। রয়েছে ক্লাসিক পাঞ্জাবি, প্রিমিয়াম পাঞ্জাবি ও কাবলি সেট।
কোথায় পাবেন
দেশের বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক, রাপা প্লাজা, পুলিশ প্লাজার মতো নামকরা বড় শপিংমলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোয় পাওয়া যাবে এবার ঈদের পাঞ্জাবি। একটু কম দামের জন্য আপনাকে যেতে হবে নিউ মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর শাহ আলী মার্কেট, বেইলি রোড, বঙ্গ বাজারসহ ছোট-বড় লোকাল মার্কেটগুলোয়।
দরদাম
ঈদের পাঞ্জাবির ফেব্রিক ও ম্যাটারিয়ালসের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন দরদামে পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। ‘ক্লাব হাউস’-এ এবারের ঈদের পাঞ্জাবির দাম এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। ‘সেইলর’-এর পাঞ্জাবি বিক্রি করছে দুই হাজার ৭৫০ থেকে আট হাজার টাকায়। ‘লা রিভ’-এ পাঞ্জাবির জন্য গুনতে হবে এক হাজার ৬০০ থেকে ছয় হাজার টাকা। ‘আড়ং’-এর পাঞ্জাবির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া দেশের লোকাল শপিংমলগুলোয় পাঞ্জাবির দাম অনেকটাই কম। সেখানে আপনি চাইলে দরদাম করে আরও কমিয়ে নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবি সেখান থেকে কিনতে পারবেন ৩০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
ছবি সৌজন্য: কে ক্রাফট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ য শন ধরন র প ঞ জ ব র পছন দ র এক হ জ র ড জ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরের সংখ্যালঘু নির্যাতন: ৫ দিনেও অপরাধী গ্রেপ্তার না হওয়ায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে ২০টি সংখ্যালঘু পরিবারের বসতঘরে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনায় পাঁচ দিনেও অপরাধী গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় সংগঠনটি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা বাড়িঘরে হামলা করে সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করেছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ২০টি পরিবারকে বাস্তুহারা করেছে। নারীদের শারীরিক নির্যাতন করেছে। বর্তমানে ভুক্তভোগী পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার কুণ্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্ত শর্মা, যশোর জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় রাসেল মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক তিমির ঘোষ জয়, অভয়নগর উপজেলা ঐক্য পরিষদ সভাপতি শংকর কুমার সিংহসহ অভয়নগর কমিটির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।