ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর বিনিময়ে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি ও কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন তিনি। রয়টার্সকে  বিষয়টি জানিয়েছে আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন রুশ সূত্র।

সূত্রগুলো জানায়, ইউক্রেন, জর্জিয়া ও মলদোভাকে ন্যাটো সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়ার নিশ্চয়তা চাচ্ছেন পুতিন। পাশাপাশি ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ, রুশ ভাষাভাষীকে সুরক্ষা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ প্রত্যাহারসহ রাশিয়ার জব্দকৃত সার্বভৌম সম্পদের বিষয়ে নিষ্পত্তি চান তিনি।

সূত্রগুলোর একজন বলেন, পুতিন শান্তি চান; কিন্তু যে কোনো মূল্যে নয়। ওই সূত্রের মতে, নিজের শর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলে ইউরোপ এবং কিয়েভকে সামরিক অগ্রগতির মাধ্যমে দেখাতে চান পুতিন, যে ভবিষ্যতের শান্তি হবে আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল। ক্রেমলিন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও আগেও বহুবার বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের মূলে রয়েছে ন্যাটো সম্প্রসারণ ও পশ্চিমাদের সহযোগিতা।

অন্যদিকে ইউক্রেন জানিয়ে এসেছে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাশিয়া ঠেকাতে পারবে না। দেশটি পশ্চিমা নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ আক্রমণ ঠেকাতে পারবে না বলেও মত দিয়েছে কিয়েভ। ন্যাটো আগেও বলেছে, তাদের ‘ওপেন ডোর পলিসি’ রাশিয়ার দাবির জন্য বন্ধ করা হবে না। জোটটি এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

আলজাজিরা জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় বিরক্ত হয়ে উঠছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সেই বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে মঙ্গলবার বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, আমি না থাকলে রাশিয়ার সঙ্গে ভয়াবহ কিছু ঘটত। আমি বলছি, ভয়াবহ মানে সত্যিকার ভয়াবহ। কিন্তু পুতিন তো সেটা আমলে নিচ্ছেন না। তিনি আসলে আগুন নিয়ে খেলছেন। ট্রাম্প তাঁর দাবির বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

এদিকে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে আক্রমণ চালানোর জন্য রাশিয়া ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা জড়ো করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, আক্রমণের জন্য রাশিয়া তাদের সেরা কিছু বাহিনীও মোতায়েন করেছে। তারা যেন বড় ধরনের হামলা চালাতে না পারে, তার জন্য কিয়েভ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে দেশি গরুর চাহিদা বেশি

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ফরিদপুরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বাজার। এ জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পশু মজুত আছে। এসবের মধ্যে চলাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশে পালিত দেশি গরুর চাহিদা বেশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুরে এবার ১ লাখ ৮ হাজার ৯১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ জেলায় ১ লাখ ৮ হাজারটি কোরবানির পশুর চাহিদা আছে। ফরিদপুরে ৮ হাজার ১৭৮টি গরুর খামার আছে। কোরবানির জন্য গরুর পাশাপাশি ছাগল-ভেড়াসহ অন্যান্য পশুও প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চরদোলায় গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে ক্ষুদ্র খামার। এসব খামারে প্রাকৃতিকভাবে পালিত গরুগুলোর চাহিদা ব্যাপক। নদী পার হয়ে ব্যাপারীরা ছুটে আসছেন এসব গরু কিনতে। 

আরো পড়ুন:

৪০ মণের ‘যুবরাজ’কে ঘরের বাইরে নিতে হবে দেয়াল ভেঙে 

প্রতিদিন হাজার টাকার খাবার খায় ১১০০ কেজির ‘জেট ব্ল্যাক’

ওই গ্রামের খামারি ইসরাক মুন্সি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “আমরা প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন: ঘাস, ভুট্টা, ভুষি আর খৈল খাওয়াই। এই চরে ঘাস আর ভুট্টা লাগাই, তাতেই গরুগুলো মোটা-তাজা হয়েছে।” 

একই গ্রামের খামারি বিলকিস বেগম বলেন, “আমরা গরুগুলোকে বেঁধে রাখি না। তারা চরে ঘুরে ঘুরে ঘাস-পাতা খায়। মুক্তভাবে পালন করায় গরুগুলো চঞ্চল ও স্বাস্থ্যবান।” 

আরেক খামারি রাজু মুন্সি বলেন, “আমাদের চরের গরুগুলো মোটা-তাজা। দামও ভালো পাচ্ছি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার নিচে এখানে কোনো গরু নেই। প্রতিদিনই ব্যাপারীরা আসছেন।” 

তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের চরে পশু হাসপাতাল নেই। গরু অসুস্থ হলে শহরে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই, এখানে একটি পশু হাসপাতাল হোক।”

চরদোলায় গ্রামের আরেক ক্ষুদ্র খামারি মালেক শেখ রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা কষ্ট করে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালছি। কিন্তু, ভারত থেকে চোরাই পথে বেশি গরু এলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ব। আমাদের গরুর ভালো দাম পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই, কোনোভাবেই যেন ভারত থেকে গরু না আসে।”

চরাঞ্চলে গরু কিনতে আসা ব্যাপারী মো. তানভীর রহমান বলেন, “ফরিদপুরের চরাঞ্চলের গরুগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেন, তাদের প্রথম পছন্দ এই প্রাকৃতিকভাবে পালিত গরু। শহরের ছোট-বড় খামারের গরুগুলোও মানসম্পন্ন।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু আছে। বিশেষ করে, চরাঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের গরুগুলোর চাহিদা বেশি। আমরা সব সময় তাদের সহযোগিতা করছি। গরু অসুস্থ হলে ফোন পেলেই আমরা দ্রুত পৌঁছে চিকিৎসা দিচ্ছি।” 

চরাঞ্চলে পশু হাসপাতালের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “খামারিরা এ বিষয়ে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে, লিখিত কোনো আবেদন পাইনি। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”

চরাঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু পালন এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা ফরিদপুরের কোরবানির বাজারকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তবে, পশু হাসপাতালের অভাব দূর করতে পারলে এই অঞ্চলের খামারিরা আরো বেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ