কৃষি বিভাগের পিপি গুদাম পরিত্যক্ত, জায়গা দখল
Published: 29th, May 2025 GMT
মির্জাপুরে কৃষি বিভাগের পিপি গুদাম দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জায়গাটি দখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর বাজারের শহীদ মিনারের উত্তর পাশে থানা রোডে ৩০ দাগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মির্জাপুরের ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। এই জমির ওপর রয়েছে ‘পিপি গোডাউন’ নামে একটি ভবন। যা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার পর পিপি গুদামটি নির্মাণ করে কৃষি বিভাগ। এখান থেকে বীজ বিতরণ এবং ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের কাজ চলত। আশির দশকে কীটনাশক বাজারে বিক্রি শুরু হলে পিপি গুদামটির কার্যক্রম আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর কয়েক বছর গুদামটিতে জনবল থাকলেও পরে ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তাদের প্রত্যাহার করা হয়। এর পর নৈশপ্রহরী কয়েক বছর সেখানে দায়িত্ব পালন করে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে নৈশপ্রহরীও জরজীর্ণ ভবনে থাকছেন না। এ অবস্থায় ভবনটির দেখভাল বন্ধ এবং আশপাশের জায়গা দখল হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্দেশ্যে জায়গাটি পরিমাপের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। পরিমাপে পুরো ২৪ শতাংশ জায়গা না থাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ থেমে যায়। পরিমাপে দেখা যায়, ২৪ শতাংশ জমির মধ্যে রয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া গুদামটির সামনে পৌরসভার ময়লা ফেলার ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের উপকরণ সামগ্রী ও পিকআপ, রিকশা, ভ্যান গুদামটির আশপাশ ঘিরে রাখা হয়। পরিত্যক্ত গুদামটি এখন ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে গেছে। এতে আশপাশের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। এই পিপি ভবনের পূর্ব পাশ দিয়ে রয়েছে সরকারি রাস্তা, যা নিয়ে কৃষি বিভাগের কোনো অভিযোগ নেই।
দক্ষিণ পাশের ভবনের মালিক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি আমার কেনা জমিতেই ভবন নির্মাণ করেছি। এখানে কৃষি বিভাগের কোনো জায়গা নেই।’
একই ভবনের দক্ষিণ পাশে নির্মিত হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজের চারতলা ভবন। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।
এ ছাড়া ভবনের উত্তর পাশের একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে যার মালিক অরুন, বরুন ও করুন সাহা। যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তাদের ছয় শতাংশ জমি কৃষি বিভাগের লোকজনের উপস্থিতিতে পরিমাপ করা হয়েছে। তবে পশ্চিম পাশে কোনো স্থাপনা নির্মিত না হওয়ায় জমির মালিক কে তা জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পশ্চিম পাশে অব্যবহৃত ছোট একটি পুকুরও রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের সঙ্গে যোগোযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের ওই জায়গাটি পরিমাপ করতে গিয়ে আশপাশের জায়গা দখল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করতে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছেন তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে