বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের সময়সীমা বাড়িয়েছে। গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করার পরিকল্পনা করছে পররাষ্ট্র দপ্তর। দূতাবাসগুলোতে পাঠানো চিঠিতে রুবিও বলেছেন, ‘পরবর্তী নির্দেশনা জারি না হওয়া পর্যন্ত’ এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
বার্তায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ভিসা এবং বৈদেশিক বিনিময় কর্মসূচির আওতাধীন ভিসার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাইকরণ বাড়ানো হবে। এর মাধ্যমে দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, আমেরিকার এ সিদ্ধান্তের কারণে সে দেশে বাংলাদেশিদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে। ভর্তিচ্ছু অনেকের বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান গুনতে হতে পারে।
বিবিসি জানায়, এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের সর্বশেষ পদক্ষেপ। এমন এক সময় এ পদক্ষেপ এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ চলছে।
বিবিসির মার্কিন সহযোগী সংস্থা সিবিএস নিউজ জানায়, মার্কিন দূতাবাসগুলোকে এখনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তবে যাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এরই মধ্যে নির্ধারিত, তারা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের তহবিলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করে। এরা প্রায়ই বেশি টিউশন ফি নেয়।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি কার্যকলাপের মাধ্যমে ইহুদি বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে হোয়াইট হাউস। কলেজগুলো অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘনচেষ্টার অভিযোগ তুলেছে।
ওপেন ডোর্স রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী পাঠানোর ক্রমানুযায়ী ভারত (৩ লাখ ৩১ হাজার ৬০২), চীন (২ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৮), দক্ষিণ কোরিয়া (৪৩ হাজার ১৪৯), কানাডা (২৮ হাজার ৯৯৮), তাইওয়ান (২৩ হজার ১৫৭), ভিয়েতনাম (২২ হাজার ৬৬) এবং নাইজেরিয়ার (২০ হাজার ২৯) পরে বাংলাদেশের (১৭ হাজার ৯৯ জন) অবস্থান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ