সাগরে নিম্নচাপ: কক্সবাজারে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত
Published: 29th, May 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। তিন দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজারসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে অবস্থানরত সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের শ্রমজীবী মানুষ ও চাকরিজীবীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই কর্মস্থলে যেতে পারেননি। রাস্তা-ঘাটে সাধারণ মানুষের চলাচলও কমে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো.
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে। সৈকতে লাল পতাকা উড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে মাইকিং করে পর্যটকদের উত্তাল সাগরে গোসল করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চার দিন ধরে সেন্টমার্টিন নৌ চলাচল বন্ধ:
বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা চার দিন ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফ নৌরুটে যাত্রী ও মালবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেছেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চার দিন ধরে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে মালামাল পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেছেন, ‘নৌ পরিবহন বন্ধ থাকায় দ্বীপে কাঁচাবাজারের পণ্য প্রায় শেষ। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যও আজ-কালকের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। দ্বীপবাসী চরম সংকটে পড়েছে।”
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেছেন, “আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সাগর স্বাভাবিক হলে পুনরায় চলাচল শুরু হবে।”
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন টম র ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্বোধনের আগেই বিলীনের পথে মেরিন ড্রাইভ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রে বিলীনের পথে। সমুদ্রতীরঘেঁষা এ সড়কে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডবে মেরিন ড্রাইভটির তিন-চার স্থানের অনেকাংশ ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশ ঢেউয়ের তোড়ে সমুদ্রে চলে গেছে। এমনকি মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় তৈরি গাইডওয়াল, ওয়াকওয়ে ভেঙে পড়ে রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নিম্নমানের কাজ ও সঠিক তদারকি না থাকায় মেরিন ড্রাইভটি টেকসই হয়নি। ফলে অতিদ্রুত এটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা– আইলা, সিডর বা এই ধরনের শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে নির্মাণাধীন এই সড়কটি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে।
জানা যায়, ২০২৪ সালে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের সুবিধা ও কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় মেরিন ড্রাইভের আদলে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ হাতে নেয় কুয়াকাটা পৌরসভা। এর কাজের মান নিয়ে স্থানীয় অনেকের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম জানান, তাদের চোখের সামনে জনগণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। নামমাত্র মেরিন ড্রাইভ, যেখানে নেই কোনো রড, নেই টেকসই কোনো গাইড ওয়াল। এটি ভেঙে পড়েছে। আসছে বর্ষাকালে সমুদ্রের ঢেউ আরও তীব্র হবে। প্রতি বর্ষাতেই সমুদ্র আগ্রাসী রূপ ধারণ করে, উপকূলের অনেক ক্ষতি হয়।
মিজানুর রহমান নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মেরিন ড্রাইভের কাজের নামে চলছে হরিলুট। কাজে কতটা অনিয়ম হয়েছে তা এখন স্পষ্ট। এখানে একটি টেকসই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা সৈকতের আশপাশের পুলিশ বক্স এলাকা, সরদার মার্কেট, ফুচকা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনার অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাইকিং করে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার মো. বেল্লালকে কল করলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী নিয়াজ মাহমুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাদের খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদিক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে সড়কটি রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের পর শত তদবির করা হলেও ঠিকাদারকে রাস্তার বাকি বিল দেওয়া হয়নি। বিল ও জামানত জমা আছে। এই রাস্তার ক্ষতিপূরণ আদায় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।