হজ বিশ্বমুসলিম ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইসলামী মহাসম্মেলন। পবিত্র কাবাগৃহকে কেন্দ্র করে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে সামর্থ্যবান সচ্ছল মুসলমান হৃদয়পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আবেগজড়িত চিত্তে মক্কায় উপস্থিত হন এবং হজের আহকামগুলো সম্পাদন করেন।
হজ মুসলিম জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ঐক্য এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন। হজের প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ। আদি পিতা হজরত আদম (আ.
হজ পালনের প্রথম শর্ত হলো নিয়তের পরিশুদ্ধতা। অর্থাৎ আপনি একমাত্র আল্লাহর উদ্দশে হজ পালনের নিয়ত করেছেন। প্রতিটি আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়তের পরিশুদ্ধতা একান্ত প্রয়োজন। বিশুদ্ধ মনে আল্লাহর জন্য হজ করার নিয়ত মনেপ্রাণে গ্রহণ করে হজের প্রস্তুতি শুরু করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল (বুখারি: ১)।
পরিশুদ্ধ নিয়তের পর আপনার প্রাথমিক প্রস্তুতি দরকার। হজে গমনকারী প্রথমত প্রাক-নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসা কার্যক্রম, মেডিকেল চেকআপ, টিকা গ্রহণ, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করবেন।
হজে গমনের আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া তিনি স্বীয় কর্মস্থল বা নিয়মিত ব্যস্ততা থেকে প্রায় দুই মাসের জন্য অবসর নেবেন, যেন তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবার-পরিজনসহ কর্মস্থলে তাঁর অভাববোধ কোনো ব্যত্যয় সৃষ্টি না করে। এর পর দরকার হজ সফরের পাথেয় সংগ্রহ করা।
হজের সফরকালীন প্রায় ৫০ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় সঙ্গে রাখতে হবে। যেমন– আবশ্যকীয় পোশাক, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ওষুধ, ব্যাগ, লাগেজ, জুতা, স্যান্ডেল, মিসওয়াক, সাবান, নেল কাটার, আয়না, চিরুনি, তায়াম্মুমের সামগ্রী, নারীদের ক্ষেত্রে হিজাব-নিকাব প্রভৃতি প্রস্তুত রাখতে হবে। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত জিনিসপত্র নিতে গিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
হজে আর্থিক ব্যয়ের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ক্ষেত্রে বেশ অর্থের দরকার পড়ে। সুতরাং পূর্বপ্রস্তুতি থাকা অত্যাবশ্যক। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী এজেন্সির মাধ্যমে সব বিষয়ে অবগত হবেন ও একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। তিনি মক্কা-মদিনায় হোটেল ভাড়া, খাবার ব্যবস্থাপনা, কোরবানির প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নেবেন এবং তার জন্য পরিমাণমতো সৌদি রিয়াল সংগ্রহ করবেন।
হজের নিয়মকানুন জেনে নেওয়া জরুরি। হজ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট মাসআলা-মাসায়েল ভালোভাবে বুঝে নেবেন। মুআল্লিমের সাক্ষাতের আশায় বসে না থেকে হজের ফরজ, ওয়াজিব, নফল হুকুম-আহকাম, মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান থাকা দরকার। এ ছাড়া তিনি জিয়ারত, মর্যাদাপূর্ণ স্থান ও তৎস্থানে পালনীয় আমলগুলো সম্পর্কে অবগত থাকবেন। তিনি এ বিষয়ে মাতৃভাষায় লিখিত বই-পুস্তিকা সঙ্গে নিতে পারেন।
মুমিন অন্তরে পবিত্র মক্কা-মদিনা জান্নাতুল বাকি-মুয়াল্লা, বদর-উহুদ প্রান্তরের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ আবহমানকাল থেকে চলে আসছে, তার পূর্ণতা পায় হজ আদায়ের মাধ্যমে। হজযাত্রী নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে হজ ক্যাম্প, বিমানবন্দর, মক্কা-মদিনা, আরাফাহ-মিনা-মুজদালিফা সফর করবেন। সেখান থেকে তাওয়াফ, সায়ি কোরবানি, জিয়ারা সম্পন্ন শেষে নিজ বাড়িতে সহি সালামতে ফেরার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর তাওফিক চাইবেন। তাঁর কৃত হজ যেন ‘হজ্জে মাবরুর’ হিসেবে আল্লাহতায়ালা কবুল করেন– কায়মনোবাক্যে সে দোয়া করতে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ, উল্লিখিত নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখলে হজ পালনকালে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না।
মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা,
কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ত র জন য আল ল হ দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ