বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে দেশের বেশিরভাগ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে আরও তিন দিন পানিবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পাশাপাশি দেশের ছয় জেলা- ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

আজ শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে ও মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। ফেণী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নদীসমূহের পানি সমতল আগামীকাল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী রোববার পানি কমতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোরাইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময়ে নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, রংপুর বিভাগের ভিন্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল আগামী  ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং ভিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ১ দিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক উচ্চতায় জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।

বন্যার পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৩ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন স্থিতিশীল ও পরবর্তী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গতকালের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ তারপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি পরবর্তীতে উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থলনিম্নচাপ আকারে টঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ নৌপথের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত (পুনঃ) ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। তিনি বলেন, এখনও চালু হয়নি লঞ্চ চলাচল। 

এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূলীয় এলাকা। মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ফুঁসতে থাকে নদনদী। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন য ব পৎস ম র ন চ সমতল ব বর শ ল নদ নদ সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ