ড্রেসিং করছিলেন ওয়ার্ডবয়, থামছিল না রোগীর গোঙানি
Published: 31st, May 2025 GMT
‘ও আল্লা গো। উ...হু,। ও মাগো...’—এভাবেই থেমে থেমে চিৎকার করছিলেন এক নারী। পাশে দাঁড়িয়ে ওই নারীর হাত-পা চেপে ধরে আছেন আরেক নারী। অন্যদিকে এক যুবক ওই নারীর হাতের কেটে যাওয়া গভীর অংশে ড্রেসিং করছিলেন। পরে যুবকটি হাতে ব্যান্ডেজও করে দেন। তবে চিকিৎসা শেষেও নারীর চিৎকার-গোঙানি থামছিল না।
এটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দৃশ্য। হাসপাতালে গিয়ে গত সোমবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে চেয়ারে বসে থাকা দায়িত্বরত চিকিৎসক ও তাঁর পাশে দাঁড়ানো নার্স বাধা দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড্রেসিংয়ের কাজ করা যুবকটি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। তাঁর নাম জাকারিয়া হোসেন।
দুর্ঘটনায় হাত কেটে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ওই নারীর সঙ্গে এক যুবকও ছিলেন। এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবক তীব্র গোঙানি শুনে ভেতরে ঢুকে চিকিৎসকের কাছে কারণ জানতে চান। হাতের কেটে যাওয়া অংশে সেলাই করার আগে নারীকে কেন ‘লোকাল অ্যানেসথেসিয়া’ দেওয়া হয়নি এবং চিকিৎসক কেন নিজে সেলাই করলেন না, এ নিয়ে যুবকটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। দায়িত্বরত চিকিৎসক যুবককে জানান, ‘অ্যানেসথেসিয়া দিয়েই নারীর সেলাই হয়েছে। একটু-আধটু ব্যথা হবেই।’ এমন জবাবে যুবক ও চিকিৎসকের মধ্যে কিছুক্ষণ মৃদু বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে যুবকটি বাইরে চলে যান।
যুবক বাইরে চলে যাওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে এ প্রতিবেদক প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে কি ওয়ার্ডবয় সেলাই করেছেন? ড্রেসিংয়ের কাজ ওয়ার্ডবয় কেন করছিলেন?’ প্রশ্নের জবাবে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, ‘কখনো ওসমানী কিংবা অন্য বড় হাসপাতালে গিয়েছেন? যাননি মনে হয়! তাহলে জানবেন কীভাবে? ওয়ার্ডবয় এমন কাজ সবখানেই করেন।’ তবে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আর কোনো কথা বলতে চাননি।
জরুরি বিভাগ থেকে এই প্রতিবেদক যান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.
সালাহ্উদ্দিন মিয়া জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতলে গড়ে প্রতিদিন ৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ জন চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে তীব্র লোকবলের সংকট সত্ত্বেও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে লোকবলের সংকটে ছয় মাস ধরে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বন্ধ। ল্যাব টেকনোলজিস্ট না থাকায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। যক্ষ্মা (টিবি) রোগের যিনি পরীক্ষা করেন, তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সীমিত পরিসরে ল্যাবের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ওয়ার্ডের শয্যায় খুব বেশি রোগী নেই। গত সোমবারের ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র করছ ল ন য বকট
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?