ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কট কাটাতে অনেক কারখানা বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করলেও তাতে দ্বিগুণ খরচ গুনতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এতে উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সরবরাহ ঘাটতির নির্দিষ্ট সমাধান নেই। তবে শনিবার (৩১ মে) থেকে কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করছেন, যার ফলে উৎপাদন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হবে।

আরো পড়ুন:

সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে কাজ করতে হবে: শিল্পমন্ত্রী

‘কুটির শিল্পের উন্নয়নে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে’

অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, ‘‘আমাদের এখানে গ্যাসের চাপ কিছুটা পাচ্ছি, তবে অর্ধেক ঘাটতি রয়েছে। আগে তো একেবারেই আসত না, এখন একটু আসে। ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি বার্ন করে কোনোভাবে চলছি।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘মাসে দুইটা কারখানায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ডিজেল খরচ হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ছে। আশা করছি, সরকার বাড়তি গ্যাস দেবে। আজকে শুনলাম কিছুটা বাড়বে, এখন অপেক্ষায় আছি।’’ 

উইন্টার ফ্যাশনের জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একদম গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার পর দুই ঘণ্টা থাকে, তারপর আবার বন্ধ। এখন ডিজেলই ভরসা। জেনারেটর বন্ধ, বয়লার কোনোমতে চলছে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন ১২০০ লিটার ডিজেল লাগে। ১০৮ টাকা দরে দিনে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়। গ্যাস থাকলে অর্ধেক খরচেই হতো।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘তিতাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা জানিয়েছে পরিস্থিতির উন্নতি দ্রুত হবে না। অন্তত ৮০ ভাগ গ্যাস ঘাটতি রয়েছে।’’ 

তিতাস গ্যাস কী বলছে?
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের মানিকগঞ্জ-ধামরাই জোনের প্রকৌশলী মো.

আসগার আলী বলেন, ‘‘গত ১০-১৫ দিন ধরে সরবরাহ আরো কমে গেছে। মানিকগঞ্জে প্রায় গ্যাস নেই বললেই চলে। আমাদের ভালব সব খোলা, কিন্তু চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছি না।’’ 

সমাধান কবে নাগাদ হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এটি আমাদের হাতে নেই, অনেক ওপরে সিদ্ধান্ত আসে।’’ 

সাভার জোনের প্রকৌশলী তৌফিক এলাহী সবুজ বলেন, ‘‘সাভারে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি। গ্যাসের চাপ অনেক জায়গায় একেবারেই কম। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা ঠিক হতে পারে।’’ 

সরকার কী বলছে?
শনিবার (৩১ মে) সকালে আশুলিয়ার কয়েকটি শিল্পকারখানায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজ থেকে গ্যাস মূল সঞ্চালন লাইনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন সেই সমস্যা কেটে গেছে।’’ 

তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ৫০ এমএমসিএফডি সরবরাহ বেড়েছে, আরও এক থেকে দেড়শত এমএমসিএফডি বাড়বে।
 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ল পমন ত র সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান

দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। আড়ং, প্রাণ, মিল্ক ভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দুধের দাম বাড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে আড়ংয়ের এক লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ১০৫ টাকা, মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধের দাম ১০০ টাকা। দাম বাড়ায় অনেক ভোক্তা এরই মধ্যে তাদের দৈনিক দুধ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের দাম বাড়ায় এই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক পরিবার।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আজ রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
জানা গেছে, লোকসানের মুখে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই দাম বাড়ানোর পথে হেঁটেছে মিল্ক ভিটা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে দুধের ক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৪ শতাংশ ফ্যাটযুক্ত দুধের দাম ৫৮ টাকা প্রতি লিটার, পরিবহন খরচসহ ৬১ টাকার বেশি। প্রক্রিয়াজাতকরণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে আমাদের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮২ টাকার ওপরে। তবে পরিবেশকদের কাছে আমরা দুধ বিক্রি করছি ৭৮ টাকায়। ফলে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

দুধের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রাণের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খামারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে দুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। যেটা আমরা ভোক্তা পর্যায়ে বাড়িয়েছি। খামারিদের দাবি ছিল, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে জন্য তাদের লোকসান হচ্ছে। তারা বাড়তি দাম চাচ্ছিলেন, যে কারণে আমাদেরও বিক্রির দাম বাড়াতে হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে দুগ্ধ খামারির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার টন। এর পরের তিন অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৭২ লাখ টনের বেশি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয় ৯২ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টন আর ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টন হয়েছে। বিপরীতে দেশে বছরে তরল দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টনের বেশি। বাকি চাহিদা মেটানো হয় গুঁড়া দুধ আমদানি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ লাখ টন দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুত করছে। বাকি দুধ খামারিরা মিষ্টি তৈরির দোকান এবং খোলাবাজারে বিক্রি করেন।

দাম নিয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আতিক ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আল মাহমুদ বলেন, আমরা মিল্ক ভিটাকে দুধ সরবরাহ করি। আমার খামারে দৈনিক ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ লিটার দুধ পাই। এগুলো ৫৮ থেকে ৬১ টাকার মধ্যেই সাধারণত বিক্রি করি। তবে বাজার কখনও কখনও নেমেও যায়।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের দাম বাড়ালেও খামারিদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। অনেক খামারি বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা গো-খাদ্যের খরচ মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।

শাহজাদপুরে দুগ্ধ খামারি আছেন প্রায় ৩০ হাজার। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ৫ লাখ লিটার। খামারির কাছ থেকে বড়-ছোট দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান দিনে সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, ইগলু ও আকিজের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র রয়েছে শাহজাদপুরে।
উল্লাপাড়ার পশ্চিমপাড়া গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুধের টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। খাবারের দামের চেয়ে দুধের দাম পেলে কিছুটা আয় হতো।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য তো বটেই, বড়দের খাদ্য তালিকায়ও দুধ থাকা উচিত। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে দুধ। এতে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে দুধের গ্রহণ কমে যাচ্ছে; যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক 
ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুধ শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবার। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক খামারিদের জন্য দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা বাড়াতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পরিবহন সমস্যা সমাধান ও পণ্য বহুমুখীকরণে। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে পুষ্টি সংকট ও খামারিদের লোকসান আরও বাড়বে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, খামারিদের ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা গো-খাদ্যের খরচ কমাতে সহায়ক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শনিবার থেকে নতুন টাকা পাবেন গ্রাহকরা  
  • দুধ উৎপাদনে দিনবদলের গল্প
  • দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান
  • ক্রেতা বলছেন দাম চড়া বিক্রেতার ভাষ্য কম
  • শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে তীরে চার জাহাজ
  • বৃষ্টির প্রভাবে বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি চাল মুরগিতে
  • উত্তাল সাগর, চট্টগ্রামে তীরে উঠে গেল চারটি জাহাজ
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ