মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অবশেষে এইচআইভি আক্রান্ত সেই প্রসূতি রোগীর অস্ত্রোপচারের (প্রসব) সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। গাইনি বিভাগের তিনজন চিকিৎসকের একটি দল অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হোসাইন সাফায়েত বলেন, সংক্রমণ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনায় এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রসূতি রোগীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালের চারটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কক্ষের একটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সাধারণ অস্ত্রোপচার আজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গাইনিসহ জরুরি অস্ত্রোপচার অপর তিনটি ওটি কক্ষে করা হবে।

আরও পড়ুনএকদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা৩০ মে ২০২৫

এই রোগীর চিকিৎসা নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাদানকারীরা দ্বিধা-বিভক্তিতে পড়েন। একদিকে প্রসূতি ওই নারীর চিকিৎসাপ্রাপ্তির মানবিক চাহিদা; অন্যদিকে অন্য রোগীদের সংক্রমণ ঝুঁকি ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সদের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গাইনি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, মাস তিনেক আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই নারীর দেহে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এখন এই নারীর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু এইডসে আক্রান্ত এই রোগীর অস্ত্রোপচার এই হাসপাতালে করা হলে পরবর্তী তিন দিন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন। এ ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রোপচার করা হয় আরও ১৫ থেকে ২০টি।

হাসপাতালের চিকিৎসকসহ একাংশের দাবি ছিল, এইডসে আক্রান্ত প্রসূতিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঢাকায় তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশিদ টুলু বলেন, ‘অস্ত্রোপচারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে করতে পারলে বেশি ভালো হতো। কিন্তু প্রসূতি আর্থিকভাবে দরিদ্র। ওই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য নেই। যে কারণে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া এই হাসপাতালে এর আগে এ রকম একজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালে সে ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে।’

তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সাফায়েত বলেন, ‘আমাদের তো অস্ত্রোপচার করতে সমস্যা নাই। সমস্যা হচ্ছে জায়গা নেই। এই হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক রোগী রাখতে হচ্ছে। হাসপাতালে কেবিনের তীব্র সংকট আছে। এইচআইভি সংক্রমণ রোগীকে এমন জনাকীর্ণ হাসপাতালে রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেবিন ছাড়া তাঁকে রাখাও যাবে না। কিন্তু ওই কেবিন সংকটের কারণে অস্ত্রোপচারে বিলম্ব হচ্ছিল।’ এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার জন্য খুলনা বিভাগে একটি বিশেষায়িত কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক রমণ চ ক ৎসক প রস ত

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতি অস্ত্রোপচারে জন্ম দিলেন ছেলেসন্তান

ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন এইচআইভি আক্রান্ত যশোরের সেই প্রসূতি নারী। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক আজ রোববার দুপুর ১২টায় অস্ত্রোপচার শেষ করেন। নবজাতকের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কি না, তা এখনো পরীক্ষা করা হয়নি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হোসাইন সাফায়েত প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর দ্বিতীয়বারের মতো সুস্থ একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই নারী। নবজাতকের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কি না, তা দুই থেকে তিন দিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এখন মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারটি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকেরা। নিরাপত্তার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের রোগীদের জন্য নির্ধারিত অস্ত্রোপচার কক্ষটি দুই দিন বন্ধ রাখা হবে। এর আগে ওই নারীর অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনায় অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার আছে। ওই সেন্টারের অধীনে যশোরসহ আশপাশের জেলার ১০০ এইচআইভি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। আজ সন্তান প্রসব করা নারী তাঁদেরই একজন। তিনি যখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন এআরটি সেন্টারের কর্মকর্তারা বিষয়টি যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানান। দুই মাস আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত নারীর অস্ত্রোপচার করলে হাসপাতালে পরবর্তী তিন দিন অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে ওই নারীকে ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রসূতি আর্থিকভাবে দরিদ্র হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনএকদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা৩০ মে ২০২৫

নবজাতক ও তার মাকে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে। প্রসূতির স্বামী, মা-বাবা ও স্বজনেরা সঙ্গে আছেন। সাধারণ রোগীর মতোই তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সাফায়েত বলেন, হাসপাতালের চারটি অস্ত্রোপচার কক্ষের একটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সাধারণ অস্ত্রোপচার আজ ও আগামী দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রসূতিসহ জরুরি অস্ত্রোপচার অন্য তিনটি কক্ষে করা হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন। এ ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রোপচার করা হয় ১৫ থেকে ২০টি। অস্ত্রোপচারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে করতে পারলে বেশি ভালো হতো। কিন্তু প্রসূতি আর্থিকভাবে দরিদ্র। এ জন্য মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া আগেও হাসপাতালে এমন একজন রোগীর অস্ত্রোপচারের ইতিহাস আছে।

আরও পড়ুনযশোর জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত সেই অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার হয়েছে৭ ঘণ্টা আগে

হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এইচআইভি আক্রান্ত নারীর প্রথমে বাঘারপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে তাঁদের একটি ছেলেসন্তান হয়। কিন্তু জন্মের কিছুদিন পরে ছেলেটি মারা যায়। কয়েক মাস পরে অজ্ঞাত রোগে তাঁর স্বামীও মারা যায়। ২০১৬ সালে ওই নারীর মনিরামপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে অ্যাপেনডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের সময় জানা যায়, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। পরে তাঁকে খুলনায় এআরটি সেন্টারের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি প্রথমবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হন। এরপর তিনি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। সেই ছেলেটির বয়স এখন সাড়ে চার বছর। তার শরীরে কোনো এইচআইভি ভাইরাস নেই। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো আজ তিনি আরেকটি সন্তানের জন্ম দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতি অস্ত্রোপচারে জন্ম দিলেন ছেলেসন্তান
  • যশোরে এইচআইভি আক্রান্ত নারীর সন্তান প্রসব