নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জীবনযাপনের খরচও বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের আয় তো সে অনুপাতে বাড়েনি। দেখা যায় এক খাতে খরচ বাড়লে তার প্রভাব অন্য সব খাতে পড়ে। তখন অন্য জায়গা থেকে খরচ কাটছাঁট করে সমন্বয় করতে হয়। ফলে বাজেটে প্রথম প্রত্যাশা থাকবে আমাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ যেন তৈরি হয় ও জিনিসপত্রের দাম যেন কমে।

গত কয়েক বছরে সব জায়গাতেই জীবনযাপনের খরচ অনেক বেড়েছে। যেমন ছোটখাটো গন্তব্যের জন্য আমার কাছে রিকশা হচ্ছে নিরাপদ বাহন। কিন্তু ৩০-৪০ টাকার নিচে রিকশা ভাড়া নেই। এভাবে গত দু-তিন বছরের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুতের দামসহ প্রায় সব ধরনের পরিষেবা ব্যয় বেড়েছে। এসব কারণে বেড়েছে সংসার খরচ। পরিবারের বেশির ভাগ বড় ব্যয়ই নির্দিষ্ট থাকে। ফলে বাচ্চাদের শিক্ষা, পরিবহন ব্যয়, নিত্যদিনের বাজার ও ক্ষেত্রবিশেষ ওষুধের ব্যয় থেকে বাড়তি খরচ কাটছাঁট করতে হয়।

একটা বিষয় এখানে বলতে চাই। ঢাকায় বাচ্চাদের শিক্ষার খরচ অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। স্কুলগুলোর ভর্তি ফি ও মাসিক ফি অনেক বেশি, যা সাধারণ পরিবারগুলোর পক্ষে বহন করা কঠিন। একটু ভালো স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতে চাইলেই ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ ধরনের শিক্ষা ব্যয় কমানোর বিষয়ে বাজেটে নির্দেশনা থাকা উচিত।

আমরা চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকুক। গত দু-তিন বছরে খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। বর্তমানে আলু, পেঁয়াজসহ সবজির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; তবে মাছ, মাংস, ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেশি। একবার যে দাম বেড়েছে, সেগুলো আর কমেনি। মূলত এই বিষয় আমাদের মতো পরিবারগুলোকে বেশি ভোগাচ্ছে।

বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মুরগি ও সাধারণ কিছু মাছই প্রোটিনের একমাত্র উৎস। তারা পছন্দের কোনো মাছ সাধারণত খান না। কারণ, দাম বেশি। যেমন চার-পাঁচজনের একটা পরিবারে একটি বড় ইলিশ মাছ দিয়ে এক বেলার বেশি খাওয়া যায় না। সেই ইলিশ মাছের কেজি দুই হাজার টাকার ওপরে। আর্থিক টানাটানির কারণে অনেক পরিবার যথাযথ পুষ্টি পাচ্ছে না। এসব পরিবার ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট এক-দুইটা মাছ ও ব্রয়লার মুরগি ও নির্দিষ্ট কিছু সবজি খাচ্ছে। আর গরুর দুধ বা ফলের কথা না-ই বা বললাম। সব ধরনের ফলের দামই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয়ের পরিমাণ কমেছে। ফলে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে কঠিন।

সাবরিনা ইসলাম, গৃহিণী, মুগদা, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ন সপত র র দ ম পর ব র আম দ র অন ক ব র খরচ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে কারখানার ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু, উত্তেজিত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিল পুলিশ

গাজীপুরের শ্রীপুরে জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের কারখানার আটতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে ওই কারখানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা করেন শ্রমিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, কারখানা থেকে ছুটি চাওয়ায় জাকির হোসেন নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে তিনি কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জাকির হোসেন (২৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মুক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর নতুন বাজার এলাকার জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের কারখানায় চাকরি করতেন।

ওই ঘটনার পর জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা আজ সকাল ৯টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা কারখানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। তবে এর আগেই গতকাল রাত থেকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা প্রতিরোধের মুখে পুলিশের একটি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়িতে ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, জাকির হোসেন ছু্টি চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিয়ে দুর্ব্যবহার করে। এ কারণে জাকির হোসেন হতাশ হয়েছিলেন। তবে কোন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইতে গিয়েছিলেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।

কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, পারিবারিক কলহের কারণে হতাশ ছিলেন জাকির। এ অবস্থায় ছাদে হাঁটাহাঁটির সময় অসাবধানতাবশত পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। কারখানার এজিএম জুবায়ের এম বাশার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ছুটি চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানতে পেরেছেন, ওই শ্রমিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মল আবদুল বারিক বলেন, উত্তেজিত শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। তাঁরা পুলিশের এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সেখানে শিল্প পুলিশ, থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ