বাউফলে ইউএনওর অপসারণের দাবিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলন হামলায় পণ্ড
Published: 1st, June 2025 GMT
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের অপসারণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলন সন্ত্রাসী হামলায় পণ্ড হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের ভেতরে ডাকবাংলোর সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ইউএনও কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে দিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শুরুর পর কয়েকজন তরুণ এসে ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্য পাঠ করা শুরু করলে তাঁরা হামলা চালিয়ে লিখিত বক্তব্যের কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইউএনওর দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা এসে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এতে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়।
বাউফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা শিক্ষার্থী শুভ চন্দ্র শীল বলেন, ‘সাংবাদিককে প্রকাশ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণসহ দুর্নীতিবাজ ইউএনওর অপসারণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউএনওর ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হামলায় তা পণ্ড হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুনপ্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও১৯ মে ২০২৫সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক আরেক সদস্য মোছা.
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
আরও পড়ুন‘মালিককে শাস্তিও দিতে পারি’ বলা ইউএনওর অপসারণ দাবি২১ মে ২০২৫গত ১৯ মে ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসেই ক্ষুব্ধ হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেপে গিয়ে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী, মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর গত ২১ মে বিকেলে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়। পরে ২৩ মে ইউএনওর পক্ষে পাল্টা মিছিল ও সমাবেশ করেন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন‘মালিককে শাস্তিও দিতে পারি’ বলা ইউএনওর পক্ষে শিক্ষকদের মিছিল২৩ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম র আয় জ ব উফল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী