ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। নানা কারণে এই অংশের ৪৭ দশমিক ৮ কিলোমিটারে বছরজুড়ে দুর্ভোগ লেগে থাকে। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখেও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলামুখী মানুষকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জমি অধিগ্রহণ ও পাথর আমদানির জটিলতা, ডলারের দর বাড়ার পাশাপাশি বিল বাড়িয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত বিলম্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। 
এ সড়কে যাত্রী দুর্ভোগের সাক্ষী প্রধানত পরিবহন কর্মীরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি কথা হয় সিরাজগঞ্জ-রংপুর রুটে চলাচলকারী জেনিন সার্ভিসের সুপারভাইজার শাওন আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কের দুই পাশের পার্শ্বরাস্তার (সাইড লেন) কাজ শেষ হয়নি। যে কারণে তিন চাকার ছোট ছোট যানবাহন মূল মহাসড়ক 
ধরেই দাপিয়ে বেড়ায়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা এ বিষয়ে তেমন তৎপর নন। 
টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের ১৯০ কিলোমিটার সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের অংশ। এ পথেই পড়েছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা জেলা। এই প্রকল্পের আওতায় আগের মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজটি শুরু হয় ২০১৬ সালে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। সব মিলিয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির ১৩টি প্যাকেজের মধ্যে দুটি পড়েছে সিরাজগঞ্জে। ৬ নম্বর প্যাকেজে পড়েছে যমুনা সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ। এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে মীর আকতার লিমিটেড। ইতোমধ্যে তারা ৭৯৩ কোটি টাকা বিলের মধ্যে ৭৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। ৭ নম্বর প্যাকেজের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। এ প্যাকেজে পড়েছে হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার। এই অংশের নির্মাণব্যয় ধরা হয় ১১৭৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮৯০ কোটি টাকার বিল পেয়েছে। আরও ৪০ কোটি টাকার বিল প্রক্রিয়াধীন। 
উভয় প্যাকেজের কাজ ৮০-৮২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দাবি। তবে যমুনা সেতু-হাটিকুমরুল অংশের ঝাঐল ওভারপাস, ইকোনমিক জোন ওভারপাস, বাইলেন বা পার্শ্বরাস্তা নির্মাণ, রাস্তার উপরিভাগে দুই স্তরের বিটুমিন বা সিমেন্টের আবরণ, রোড-মার্কিং এখনও অসম্পূর্ণ। হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা অংশে পার্শরাস্তাসহ অন্যান্য কাজ বাকি। যে কারণে ঢাকা ও উত্তরের যাত্রীরা সিরাজগঞ্জের অংশ দুটিতে চার লেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 
এর বাইরেও একই প্রকল্পের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ অংশের কাজেও ধীরগতি দেখা গেছে। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তৌহিদুজ্জামান ইমনের বাড়ি দিনাজপুরে। প্রতি মাসেই বাড়িতে যেতে হয় তাঁকে। এ পথের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীসহ সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা, হাটিকুমরুল, ভূঁইয়াগাতী, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঝাঐল অংশে এখনও প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিন সিরাজগঞ্জের দুটি অংশেই দেখা যায়, মহাসড়কের কোথাও বিটুমিনের প্রথম স্তর, কোথাও দ্বিতীয় স্তর দেওয়া হয়েছে। কোথাও তৃতীয় স্তরের আবরণ পড়েনি। বাইলেন সম্পন্ন হয়নি কোনো জায়গাতেই। এমনকি রোড মার্কিংও করা হয়নি। এর বাইরে ঝাঐল ওভারপাসের চার লেনের মধ্যে দুটি লেন চলতি বছরের ২০ মার্চ খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই লেন এখনও নির্মাণাধীন। ইকোনমিক জোন ওভারপাসটি অসম্পূর্ণ।
এ বিষয়ে কথা হয় সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আসলাম উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ অংশে সমস্যা ছিল। কিন্তু সিরাজগঞ্জে এই সমস্যা ছিল না। হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোনার অংশ নির্মাণের ধীরগতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই শ্রমিক নেতার অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি ও ধীরগতি জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। 
তিন চাকার যান মহাসড়কে ঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু পার্শ্বরাস্তা নির্মাণে সাসেক প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, পার্শ্বরাস্তা তৈরি না হওয়ায় তিন চাকার যানবাহন মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা প্রায়ই ধরে ধরে মামলা দিচ্ছেন, আটকে থানায় রাখছেন। এর পরও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। একই রকম 
মন্তব্য করেন বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের এসপি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তাঁর কথা, পার্শ্বরাস্তা নির্মিত হলে মহাসড়কে তিন চাকার ক্ষুদ্র যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না।
৬ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী একলাছ উদ্দিনের ভাষ্য, ঝাঐল ওভারপাসের একটি অংশের দুটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যে বাকি অংশ খুলে দেওয়া হবে। ঝাঐল ওভারপাস ও সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের ওভারপাসের নকশায় পরিবর্তনের কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। তাদের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে। 
এ অংশের তদারকের দায়িত্বে থাকা যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির পাভেলের নম্বরে কল দিলেও ধরেননি।
প্রকল্পে গড়িমসির বিষয়ে ৭ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিমের নম্বরে কল দিলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে রাজি হননি। একই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইন উদ্দিন মোনেমের দাবি, ‘৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগস্ট মাসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে, ইনশাআল্লাহ।’  
সাসেক প্রকল্পের উপপরিচালক সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, ‘আবদুল মোনেম লিমিটেডকে পাঁচ দফায় সুযোগ দিতে সময় বাড়ানো হয়। এর পরও গতি বাড়াতে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।’
এমন ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার। তাঁর ভাষ্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসিতে প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে খরচও বেড়েছে, তবে চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেনি। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সমন্বয়হীনতায় বিব্রত বোধ করছেন বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড.

ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সময় আছে। আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাঁর ভাষ্য, ১৩টি প্যাকেজের কাজে অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে কাজ শুরু করতেই দেরি হয়। সেখানে ওভারব্রিজের কাজ চলছে। সার্ভিস লেনও চালু হয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মাত্র আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যায়। ডিসেম্বরের মধ্যেই সন্তোষজনক অগ্রগতির আশা করছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র শ বর স ত স র জগঞ জ র গ ব ন দগঞ জ প রকল প র প রক শ র চ লক ধ রগত

এছাড়াও পড়ুন:

ধীরগতিতে সুফলবঞ্চিত উত্তরের মানুষ

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। নানা কারণে এই অংশের ৪৭ দশমিক ৮ কিলোমিটারে বছরজুড়ে দুর্ভোগ লেগে থাকে। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখেও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলামুখী মানুষকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জমি অধিগ্রহণ ও পাথর আমদানির জটিলতা, ডলারের দর বাড়ার পাশাপাশি বিল বাড়িয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত বিলম্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। 
এ সড়কে যাত্রী দুর্ভোগের সাক্ষী প্রধানত পরিবহন কর্মীরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি কথা হয় সিরাজগঞ্জ-রংপুর রুটে চলাচলকারী জেনিন সার্ভিসের সুপারভাইজার শাওন আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কের দুই পাশের পার্শ্বরাস্তার (সাইড লেন) কাজ শেষ হয়নি। যে কারণে তিন চাকার ছোট ছোট যানবাহন মূল মহাসড়ক 
ধরেই দাপিয়ে বেড়ায়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা এ বিষয়ে তেমন তৎপর নন। 
টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের ১৯০ কিলোমিটার সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের অংশ। এ পথেই পড়েছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা জেলা। এই প্রকল্পের আওতায় আগের মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজটি শুরু হয় ২০১৬ সালে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। সব মিলিয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির ১৩টি প্যাকেজের মধ্যে দুটি পড়েছে সিরাজগঞ্জে। ৬ নম্বর প্যাকেজে পড়েছে যমুনা সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ। এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে মীর আকতার লিমিটেড। ইতোমধ্যে তারা ৭৯৩ কোটি টাকা বিলের মধ্যে ৭৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। ৭ নম্বর প্যাকেজের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। এ প্যাকেজে পড়েছে হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার। এই অংশের নির্মাণব্যয় ধরা হয় ১১৭৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮৯০ কোটি টাকার বিল পেয়েছে। আরও ৪০ কোটি টাকার বিল প্রক্রিয়াধীন। 
উভয় প্যাকেজের কাজ ৮০-৮২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দাবি। তবে যমুনা সেতু-হাটিকুমরুল অংশের ঝাঐল ওভারপাস, ইকোনমিক জোন ওভারপাস, বাইলেন বা পার্শ্বরাস্তা নির্মাণ, রাস্তার উপরিভাগে দুই স্তরের বিটুমিন বা সিমেন্টের আবরণ, রোড-মার্কিং এখনও অসম্পূর্ণ। হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা অংশে পার্শরাস্তাসহ অন্যান্য কাজ বাকি। যে কারণে ঢাকা ও উত্তরের যাত্রীরা সিরাজগঞ্জের অংশ দুটিতে চার লেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 
এর বাইরেও একই প্রকল্পের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ অংশের কাজেও ধীরগতি দেখা গেছে। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তৌহিদুজ্জামান ইমনের বাড়ি দিনাজপুরে। প্রতি মাসেই বাড়িতে যেতে হয় তাঁকে। এ পথের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীসহ সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা, হাটিকুমরুল, ভূঁইয়াগাতী, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঝাঐল অংশে এখনও প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিন সিরাজগঞ্জের দুটি অংশেই দেখা যায়, মহাসড়কের কোথাও বিটুমিনের প্রথম স্তর, কোথাও দ্বিতীয় স্তর দেওয়া হয়েছে। কোথাও তৃতীয় স্তরের আবরণ পড়েনি। বাইলেন সম্পন্ন হয়নি কোনো জায়গাতেই। এমনকি রোড মার্কিংও করা হয়নি। এর বাইরে ঝাঐল ওভারপাসের চার লেনের মধ্যে দুটি লেন চলতি বছরের ২০ মার্চ খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই লেন এখনও নির্মাণাধীন। ইকোনমিক জোন ওভারপাসটি অসম্পূর্ণ।
এ বিষয়ে কথা হয় সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আসলাম উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ অংশে সমস্যা ছিল। কিন্তু সিরাজগঞ্জে এই সমস্যা ছিল না। হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোনার অংশ নির্মাণের ধীরগতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই শ্রমিক নেতার অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি ও ধীরগতি জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। 
তিন চাকার যান মহাসড়কে ঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু পার্শ্বরাস্তা নির্মাণে সাসেক প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, পার্শ্বরাস্তা তৈরি না হওয়ায় তিন চাকার যানবাহন মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা প্রায়ই ধরে ধরে মামলা দিচ্ছেন, আটকে থানায় রাখছেন। এর পরও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। একই রকম 
মন্তব্য করেন বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের এসপি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তাঁর কথা, পার্শ্বরাস্তা নির্মিত হলে মহাসড়কে তিন চাকার ক্ষুদ্র যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না।
৬ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী একলাছ উদ্দিনের ভাষ্য, ঝাঐল ওভারপাসের একটি অংশের দুটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যে বাকি অংশ খুলে দেওয়া হবে। ঝাঐল ওভারপাস ও সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের ওভারপাসের নকশায় পরিবর্তনের কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। তাদের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে। 
এ অংশের তদারকের দায়িত্বে থাকা যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির পাভেলের নম্বরে কল দিলেও ধরেননি।
প্রকল্পে গড়িমসির বিষয়ে ৭ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিমের নম্বরে কল দিলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে রাজি হননি। একই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইন উদ্দিন মোনেমের দাবি, ‘৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগস্ট মাসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে, ইনশাআল্লাহ।’  
সাসেক প্রকল্পের উপপরিচালক সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, ‘আবদুল মোনেম লিমিটেডকে পাঁচ দফায় সুযোগ দিতে সময় বাড়ানো হয়। এর পরও গতি বাড়াতে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।’
এমন ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার। তাঁর ভাষ্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসিতে প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে খরচও বেড়েছে, তবে চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেনি। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সমন্বয়হীনতায় বিব্রত বোধ করছেন বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সময় আছে। আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাঁর ভাষ্য, ১৩টি প্যাকেজের কাজে অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে কাজ শুরু করতেই দেরি হয়। সেখানে ওভারব্রিজের কাজ চলছে। সার্ভিস লেনও চালু হয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মাত্র আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যায়। ডিসেম্বরের মধ্যেই সন্তোষজনক অগ্রগতির আশা করছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ