রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অচলাবস্থা কাটেনি। পাঁচ দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা গতকাল রোববারও হাসপাতালে যাননি।

চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে গত বুধবার থেকে এমন অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসাধীন জুলাই আহতরা গত মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন। এ সময় বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি ছুটিতে আছেন।

সংকট নিরসনে চেষ্টা চলছে। যাঁরা চিকিৎসার মাঝপথে আছেন, তাঁদের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। জানে আলম, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সংকট নিরসনে চেষ্টা চলছে। যাঁরা চিকিৎসার মাঝপথে আছেন, তাঁদের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। তবে রোগীরা ঠিকই এসেছেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় ফেরত যান তাঁরা। অনেকে কী করবেন বুঝতে না পেরে অপেক্ষা করছিলেন। প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্যরা জানান, সকাল সাতটার পর থেকে অনেক রোগী এসে ফিরে গেছেন। তাঁদের কেউ নতুন রোগী। কেউ কেউ আগে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, এখন আবার চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন। অনেকের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল গতকাল।

হাসপাতালে ভেতরে কথা হয় মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে। তাঁর ভাই এখনো ভর্তি আছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা না করিয়ে ফিরে গেলে আবার আসতে হবে। তবে এখন মনে হচ্ছে, আর কোনো উপায় নেই। সামনে ঈদ, আর অপেক্ষা করতে পারছি না। বাড়ি চলে যেতে হবে।’

২৫০ শয্যার বিশেষায়িত এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেবা চালু অবস্থায় জরুরি ও সাধারণ বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি অস্ত্রোপচার করা হয় এখানে। আর বহির্বিভাগসহ প্রতিদিন এ হাসপাতাল থেকে তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। পাঁচ দিন ধরে সব সেবা বন্ধ আছে।

চাঁদপুরের মতলব থেকে ৭০ বছর বয়সী মায়ের চোখের চিকিৎসা করাতে এসেছেন অমল বিশ্বাস। আসার পর দেখতে পান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। তিনি বলেন, গত রোববার মায়ের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। গতকাল আবার চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল। তাঁর মায়ের শরীর অত ভালো নয়। অনেক দূর থেকে এসেছেন।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, বর্তমানে এখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী আছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসার মাঝপথে থাকায় তাঁরা কোথাও যেতে পারছেন না। তাঁদের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০।

মারামারি-সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালটিতে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা কেউ আসছেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর থ ক চ ক ৎসক এস ছ ন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ