নওবা তাহিয়া হোসাইন। অভিনেত্রী। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’তে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর অভিনীত নাটক ‘গ্যাংস্টার ব্রোস’। এ নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমদাদুল হক মিলটন
‘গ্যাংস্টার ব্রোস’ নাটকটির দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার কী সুযোগ হয়েছে?
কাছের মানুষরা নাটকটি দেখে ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন। সবাই আমার লুকটা বেশি পছন্দ করেছেন। গল্পটি অসাধারণ। এ কারণে কাজটি দর্শকের ভালো লেগেছে। ইরফান সাজ্জাদ ও পাভেল ভাইয়ের সঙ্গে এটিই ছিল আমার প্রথম কাজ। সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও ভালো ছিল।
শুনেছি, এবারের ঈদে নাটকে কাজ করেননি। কারণ কী?
পড়াশোনা নিয়েই একটু ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। এ কারণে ঈদে নতুন কোনো নাটকে অভিনয় করিনি। অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একই রকমের অনেকগুলো কাজ করেছি। ভালো কাজ করার জন্য মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া দরকার। বিরতি নিলে কাজের একঘেয়েমি দূর হয়। কাজ করতে করতে হাফিয়ে উঠেছিলাম। তবে এটি সাময়িক বিরতি। আগস্টের পরে পুরোদমে কাজে ফিরব। পরবর্তী উৎসবগুলোতে আমাকে পর্দায় বেশি বেশি দেখা যাবে বলে আশা করছি। গত রোজার ঈদে অনেকগুলো কাজ করেছিলাম। এমনকি চাঁদরাত পর্যন্ত শুটিং হয়েছে। অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই ছিল আমার ব্যস্ততম ঈদ। অভিনয় শুরুর পর এর আগেও একবার ঈদ পালন করেছি। এতটা ব্যস্ত ছিলাম না; তবে এই ঈদে দর্শকরা একেবারেই নিরাশ হবেন না। আগে কিছু কাজ করা ছিল, যা এই ঈদে প্রচার হবে।
ওটিটি দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন। সেখানে খুব একটা পাওয়া যায় না আপনাকে?
হ্যাঁ, ওটিটি আমাকে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে। তবে ওটিটি থেকে খুব একটা কাজ এসেছে, তেমন নয়। মাঝে একটা কাজ এসেছিল, তবে ব্যাটেবলে মেলেনি। ওটিটির কাজে বেশি সময় দরকার। ওই সময়ে আমার হাতে বেশি সময় ছিল না। আমি ওটিটির ভক্ত। এটি অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। এখানে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমি ওটিটিতেও বেশি বেশি কাজ করতে চাই।
এবার ঈদের পরিকল্পনা কী?
আমি ঢাকার মেয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় ঈদ উদযাপন করব। দাদাদাদি, মাবাবাসহ পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা ঢাকায় থাকেন। সবার সঙ্গে ঈদে আনন্দময় সময় কাটবে। আমার ঈদের সকাল শুরু হয় মায়ের হাতের সেমাই দিয়ে। বিকেলে একটু ঘোরাঘুরি করব। রাতটা শেষ হয় খুশির ঘুম দিয়ে।
অভিনয় নিয়ে স্বপ্নের কথা বলুন?
আমি এখনও পড়াশোনা করছি, সঙ্গে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ছি। দুটি একসঙ্গে ভারসাম্য করা কঠিন। পড়াশোনা ঠিক রেখে যতটুকু অভিনয়ে মন দেওয়া যায়, সেটা চেষ্টা করি। নিরীক্ষাধর্মী কাজ আমার পছন্দের। এ কারণে বেশি বেশি নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে চাই। আগামীতে অসাধারণ সব কাজ আসুক। সর্বোপরি ভালো কাজ দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেতে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ ন ত র ট ভ ন টক ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও গুরুতর নিপীড়ন চালাচ্ছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার এ কথা বলেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির দখল করা এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, নির্বিচারে আটক ও খারাপ আচরণ, বাধ্যতামূলক শ্রম এবং জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর মতো নানা নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। জাতিবিদ্বেষের মতো চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ এরই অংশ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, আরাকান আর্মিও ঠিক সে রকম দমননীতি অনুসরণ করছে। তাদের উচিত, এই বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।’
২০২৩ সালের নভেম্বরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে কিছু এলাকা দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তখন আরাকান আর্মি সেসব অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদের জীবন এখনো কঠিন ও শৃঙ্খলিত। আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান বৈষম্যমূলক নীতি-বিধি ও চর্চা অব্যাহত রেখেছে।
‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীমিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং উপজেলা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, ‘আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে জীবন অসম্ভব রকম কড়াকড়ির মধ্যে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’
এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের মধ্যে আটকে পড়েছেন রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। দুই পক্ষই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও বেআইনিভাবে বাহিনীতে ঢোকানোর মতো গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।
২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে চার লাখের বেশি মানুষ দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর এ সময় প্রায় ২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা সংস্থাটিকে বলেছেন, আরাকান আর্মি তাঁদের কৃষিজমি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাছ ধরার সরঞ্জাম, জ্বালানির কাঠ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।
বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার পর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আবারও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে।
বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর ফলে মুসলিম রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন করে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা কোনো সরকারি ত্রাণ বা সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে, সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তবে জাতিসংঘ ও উদ্বিগ্ন দেশগুলোর উচিত জোর দিয়ে বলা যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিবেশ এখন নেই।