মডেলিং কিংবা অভিনয় অথবা আইটেম গানের ধামাকা নৃত্যশিল্পী নায়লা নাঈম। দর্শক তাকে অনেক রূপে দেখেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিতও হয়েছেন। তবে এখন শোবিজ অঙ্গনে অতটা সরব নন এই অভিনেত্রী।

সোমবার (২ জুন) নায়লা তার অফিশিয়ালে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে একসময় বুলিংয়ের শিকার হতেন এই অভিনেত্রী। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা এই লেখায় বর্ণনা করেছেন।

নায়লা নাঈম বলেন, “আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি বুলিংয়ের শিকার হয়েছি, যখন এইচএসসি পড়তাম। আমি অনেক বেশি শুকনা! আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফ্লাট এই ধরনের প্রচুর মন্তব্য শুনতাম। কম বয়সি ছিলাম, এই ধরনের মন্তব্যগুলো খারাপ লাগতো! আত্মীয়-স্বজন অথবা ক্লাসমেট অথবা তখনকার ছেলে বন্ধুদের কাছে। আমি শুকনা শুনতে শুনতে কান পচে যেত।”

আরো পড়ুন:

দয়াল সাহার চিত্রনাট্যে ‘দোষটা কার?’

ঈদে প্রিয়া-তন্ময়ের ‘ধোকা’

প্রেমিকের কাছ থেকে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন নায়লা নাঈম। সেই ঘটনা বর্ণনা করে এই অভিনেত্রী বলেন, “বয়ফ্রেন্ডকে ইমপ্রেস করার জন্য শাড়ি পরেছিলাম একদিন। নীল রঙের শাড়ি। তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। খুব আশা নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার সামনে। আমাকে দেখামাত্র তার প্রথম মন্তব্য ছিল, শাড়ি তোমাকে মানায় না, কেন পড়েছ? চোখ ছলছল করছিল। ফুপিয়ে ফুপিয়ে সে রাতে অনেক কেঁদেছিলাম।”

নায়লার শারীরিক গড়নের একাংশ তার দাদির মতো। এ তথ্য উল্লেখ করে নায়লা নাঈম বলেন, “আমি সুন্দরী কোনোদিনও ছিলাম না! কারো সাথে দেখা করতে গেলেই হাত লুকিয়ে ফেলতাম। পায়ে পড়তাম এমন জুতো যাতে পায়ের আঙ্গুলগুলো দেখা না যায়। আমার হাতের আঙ্গুল পায়ের গঠন এগুলো হয়েছে আমার দাদির মতো। একদম গ্রাম্য। একদা এক বয়ফ্রেন্ড পায়ের একজোড়া পায়েল এনে পরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিছুতেই আমি তার সামনে পা বের করব না। পায়েল জোড়া হাতে নিয়ে বাসায় ফিরি।”

শরীর নিয়ে একসময় বুলিংয়ের শিকার হওয়া নায়লার ফেসবুক মেসেঞ্জারে এখন অসংখ্য প্রশংসাসূচক মেসেজ জমা হয়। এ তথ্য উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “অথচ বুলিংয়ের শিকার মেয়েটি প্রতিদিন হ*ট, সে*ক্স সিম্বল, সে*ক্স আইকন, ডিভা, ফিটনেস কুইন, সেরা সুন্দরী— ভর্তি ভর্তি মেসেজ দিয়ে ভরে যায় তার ইনবক্স। ঠোঁটের কোণাতে চিলতে হাসি থাকে তার। জীবনের প্রতি চাওয়া-পাওয়া আমার একেবারেই কম। আমাকে কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারেনি আর এখন আমি এত বেশি আত্মবিশ্বাসী, কেউ ভাঙতে পারবেও না! কারণ একটাই, আমি মারাত্মক নিরঅহংকারী একজন মানুষ।”

তন্ময় তানসেন ‘রানআউট’ সিনেমায় আইটেম গানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখেন নায়লা নাঈম। এরপর কাজী হায়াত পরিচালিত ‘মারুফ টাকা ধরে না’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী।

ঢাকার একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে ২০১২ সালে স্নাতক শেষ করেন নায়লা নাঈম। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ে সরব না থাকলেও ডেন্টিস্ট হিসেবে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নায়লা নাঈম।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক

এছাড়াও পড়ুন:

আমের বিপণনব্যবস্থা পাল্টে যাওয়ায় স্বস্তিতে কৃষক

রাজশাহীর পুঠিয়ার আমচাষি মাহবুব ইসলাম একসময় বাগান ধরে ব্যবসায়ীদের কাছে আম বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করে টাকা দিতেন। অনেক সময় টাকার জন্য ঘুরতেও হতো তাঁকে। ব্যবসায় ভালো করলে ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে দিতেন। আর যদি ব্যবসা না হতো, তখন চাষিরা চুক্তি অনুযায়ীও টাকা পেতেন না। এতে মাহবুবের খুব বেশি পোষাত না। তবে তিন থেকে চার বছর ধরে তাঁকে আর আমবাগান ধরে বিক্রি করতে হয় না। আম পরিপক্ব হতে না হতেই বাগানে চলে আসেন ক্রেতা কিংবা নিজেই হাঁটে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে মাহবুব দামও ভালো পাচ্ছেন। আড়তদার বা অন্য ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি থাকতে হচ্ছে না তাঁকে।

মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় আমার বাগানের আম আমি ছুঁতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে বাগান ধরে বিক্রি করে দিতে হতো। এখন আমার আম আমি বিক্রি করি। লস হলেও আমার, লাভ হলেও আমার। আগে বাগান ধরে বিক্রি করতে হতো অথবা আড়তদারের কাছে। এখন আম বেচার অনেক বিকল্প পথ তৈরি হয়েছে।’

আমচাষি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে কয়েক বছর আগেও মুকুল আসার পর চাষিরা আমবাগান বিক্রি করতেন। এ ধরনের রেওয়াজ বহুদিন আগের। সে সময় আরেকটি উপায় ছিল বাজারের আড়তদারের কাছে আম বিক্রি করা। কিন্তু বর্তমানে আম ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তি আসায় পাল্টে গেছে বিপণনব্যবস্থা। আমের এই বিকল্প বিপণনে যুক্ত হয়েছেন অনেক তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পৌঁছে দিচ্ছেন। আমের মৌসুম শুরু হলেই তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিপণনে।

রাজশাহীর বিশুদ্ধ আম পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। অনলাইনভিত্তিক এই উদ্যোগের পেছনে তরুণেরাই বেশি জড়িত। এই তরুণেরা রাজশাহীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরও অনেকে নানাভাবে আম ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আছেন নারীরাও। আম পরিবহনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সেবায় ভিন্নতা এনেছে।

বাঘার আমচাষি নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও বাগান ধরে আম বিক্রি করতে না পারলে গাছতলায় পড়ে থাকত। ব্যবসায়ী বা আড়তদারেরা যে দাম দিতেন, তাই বিক্রি করতে হতো। টাকাপয়সাও ঠিকঠাক দিতেন না। এখন তিনি বাঘা বা আশপাশের কুরিয়ার থেকেও বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠাতে পারছেন। আর এখন যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো।

রাজশাহীতে গত ১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। এখন আম বেচাকেনা নিয়ে একরকম আমেজ চলছে। মৌসুমের শুরুতে গুটি আমসহ নানা জাতের আম বিভিন্ন কোম্পানি আচার তৈরির জন্য কিনে নেয়। আগে আম শুধু হাটে বিক্রি হতো। এখন আমের হাট ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তার পাশে, মোড়ে বসে অনেকেই আম বিক্রি করছেন। রাস্তার ধার থেকে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

আলমগীর হোসেন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা জানালেন, তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে রাজশাহীর আম কুরিয়ারে করে পাঠাচ্ছেন। বাগান থেকে আম পেড়ে পাঠান তাঁরা। ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করায় তাঁদের এই উদ্যোগ আজও ভালোভাবে টিকে আছে। গত বছরও ১০০ টনের মতো আম শুধু কুরিয়ার করেছেন। তিনি বলেন, আমচাষিরা একসময় চিন্তায় থাকতেন আম বিক্রি নিয়ে। এখন আর তাঁদের চিন্তা করতে হয় না। ক্রেতারা বাগানে চলে যান আম কিনতে। তাঁরাই চাষির বাগান থেকে আম নিয়ে ক্রেতাদের পৌঁছে দেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর আম এখন অনলাইনে বিক্রি হয়। এখানে আমের বহুমুখী বাজার তৈরি হয়েছে। তরুণেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আমচাষিদের আম বিক্রি করতে আগের মতো চিন্তা করতে হয় না। এ কারণে আমের ব্যবসা ও বাজার বেড়েছে। এ বছর রাজশাহী থেকে ২০০ টন আম বিদেশেও বিক্রি হওয়ার চুক্তি হয়েছে। রাজশাহীতে আমের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বলে তিনি দাবি করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমের বিপণনব্যবস্থা পাল্টে যাওয়ায় স্বস্তিতে কৃষক
  • ৪০ বছর ধরে মিষ্টি-পুরি বেচে ‘অনেক ভালো আছেন’ জামাল