‘সে রাতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অনেক কেঁদেছিলাম’
Published: 2nd, June 2025 GMT
মডেলিং কিংবা অভিনয় অথবা আইটেম গানের ধামাকা নৃত্যশিল্পী নায়লা নাঈম। দর্শক তাকে অনেক রূপে দেখেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আলোচিত-সমালোচিতও হয়েছেন। তবে এখন শোবিজ অঙ্গনে অতটা সরব নন এই অভিনেত্রী।
সোমবার (২ জুন) নায়লা তার অফিশিয়ালে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে একসময় বুলিংয়ের শিকার হতেন এই অভিনেত্রী। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা এই লেখায় বর্ণনা করেছেন।
নায়লা নাঈম বলেন, “আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি বুলিংয়ের শিকার হয়েছি, যখন এইচএসসি পড়তাম। আমি অনেক বেশি শুকনা! আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফ্লাট এই ধরনের প্রচুর মন্তব্য শুনতাম। কম বয়সি ছিলাম, এই ধরনের মন্তব্যগুলো খারাপ লাগতো! আত্মীয়-স্বজন অথবা ক্লাসমেট অথবা তখনকার ছেলে বন্ধুদের কাছে। আমি শুকনা শুনতে শুনতে কান পচে যেত।”
আরো পড়ুন:
দয়াল সাহার চিত্রনাট্যে ‘দোষটা কার?’
ঈদে প্রিয়া-তন্ময়ের ‘ধোকা’
প্রেমিকের কাছ থেকে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন নায়লা নাঈম। সেই ঘটনা বর্ণনা করে এই অভিনেত্রী বলেন, “বয়ফ্রেন্ডকে ইমপ্রেস করার জন্য শাড়ি পরেছিলাম একদিন। নীল রঙের শাড়ি। তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। খুব আশা নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার সামনে। আমাকে দেখামাত্র তার প্রথম মন্তব্য ছিল, শাড়ি তোমাকে মানায় না, কেন পড়েছ? চোখ ছলছল করছিল। ফুপিয়ে ফুপিয়ে সে রাতে অনেক কেঁদেছিলাম।”
নায়লার শারীরিক গড়নের একাংশ তার দাদির মতো। এ তথ্য উল্লেখ করে নায়লা নাঈম বলেন, “আমি সুন্দরী কোনোদিনও ছিলাম না! কারো সাথে দেখা করতে গেলেই হাত লুকিয়ে ফেলতাম। পায়ে পড়তাম এমন জুতো যাতে পায়ের আঙ্গুলগুলো দেখা না যায়। আমার হাতের আঙ্গুল পায়ের গঠন এগুলো হয়েছে আমার দাদির মতো। একদম গ্রাম্য। একদা এক বয়ফ্রেন্ড পায়ের একজোড়া পায়েল এনে পরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিছুতেই আমি তার সামনে পা বের করব না। পায়েল জোড়া হাতে নিয়ে বাসায় ফিরি।”
শরীর নিয়ে একসময় বুলিংয়ের শিকার হওয়া নায়লার ফেসবুক মেসেঞ্জারে এখন অসংখ্য প্রশংসাসূচক মেসেজ জমা হয়। এ তথ্য উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “অথচ বুলিংয়ের শিকার মেয়েটি প্রতিদিন হ*ট, সে*ক্স সিম্বল, সে*ক্স আইকন, ডিভা, ফিটনেস কুইন, সেরা সুন্দরী— ভর্তি ভর্তি মেসেজ দিয়ে ভরে যায় তার ইনবক্স। ঠোঁটের কোণাতে চিলতে হাসি থাকে তার। জীবনের প্রতি চাওয়া-পাওয়া আমার একেবারেই কম। আমাকে কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারেনি আর এখন আমি এত বেশি আত্মবিশ্বাসী, কেউ ভাঙতে পারবেও না! কারণ একটাই, আমি মারাত্মক নিরঅহংকারী একজন মানুষ।”
তন্ময় তানসেন ‘রানআউট’ সিনেমায় আইটেম গানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখেন নায়লা নাঈম। এরপর কাজী হায়াত পরিচালিত ‘মারুফ টাকা ধরে না’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী।
ঢাকার একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে ২০১২ সালে স্নাতক শেষ করেন নায়লা নাঈম। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ে সরব না থাকলেও ডেন্টিস্ট হিসেবে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নায়লা নাঈম।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মহামারি, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ, সভ্যতার তিন শত্রুকে ঠেকাব কী করে
ইউভাল নোয়াহ হারারি তাঁর বহুল আলোচিত হোমো ডিউস বইয়ে যুক্তি দিয়েছেন, মানবজাতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছে তিনটি প্রধান বিপদ। এক. মহামারি, দুই. দুর্ভিক্ষ, এবং তিন. যুদ্ধ।
হারারির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমরা প্রথম দুটি বিপদ (মহামারি ও দুর্ভিক্ষ) অনেকটাই জয় করেছি।
মহামারির ইতিহাস নিঃসন্দেহে ভয়ংকর ও বিভীষিকাময়। কিন্তু আশার কথা হলো, আধুনিক মাইক্রোবায়োলজির সাফল্যে আমরা কোভিড-১৯-এর মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসকে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।
ম্যালেরিয়া মশার কামড়ে ছড়ায়—রোনাল্ড রস ও তাঁর সহকর্মীরা কীভাবে তা আবিষ্কার করেন, ছেলেবেলায় আমরা সেই গল্প পাঠ্যবইয়ে পড়েছি। তার আগে বহু মানুষ ম্যালেরিয়ার জন্য সন্ধ্যার বাতাস বা অলৌকিক কারণকে দায়ী করতেন। কুসংস্কার ছিল মানুষের একমাত্র ব্যাখ্যা। অথচ প্রকৃতিতেই ছিল প্রতিষেধক—দক্ষিণ আমেরিকার সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি কুইনাইন।
আরও পড়ুনগাজা থেকে ইউক্রেন—যে কারণে এত যুদ্ধ২১ জুলাই ২০২৫কলেরাকে একসময় বলা হতো ‘ওলা ওঠা’; শরৎচন্দ্রের রচনায় ‘ওলাদেবী’র মতো পৌরাণিক চরিত্রের কথা আমরা পড়েছি, যিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে প্রাণ হরণ করেন। অথচ এই মরণব্যাধির মূল কারণ ছিল দূষিত পানি। আজ এক চিমটি লবণ, এক মুঠো গুড় ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বানানো ওরস্যালাইনই সেই ‘ওলাদেবী’কে হার মানিয়েছে।
টাইফয়েড, প্লেগ, ব্ল্যাক ফিভার, সিফিলিস ইত্যাদি বহু রোগ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল স্মলপক্স বা বসন্ত, যা দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী জনপদকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
আজ বিজ্ঞান সে রোগকেও চিরতরে বিলুপ্ত করেছে—বসন্ত এখন কেবল গবেষণাগারের বিষয়।
হারারির দ্বিতীয় শত্রু—দুর্ভিক্ষ। মানব ইতিহাসে হাজারো দুর্ভিক্ষ নথিবদ্ধ আছে। কিন্তু গত ১৫০ বছরে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৭ থেকে ১২ কোটি মানুষ। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল একটির কারণ, তবে যুদ্ধ, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অবহেলা ছিল আরও বড় কারণ।
আরও পড়ুনমহামারি ও যুদ্ধ অপুষ্টি বাড়িয়েছে৩১ জানুয়ারি ২০২৪আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, খাদ্যশস্যের অধিক উৎপাদন, গুদামজাতকরণ ও বৈজ্ঞানিক বিতরণব্যবস্থা আজ দুর্ভিক্ষকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
তৃতীয় বিপদ—যুদ্ধ। ১৮০০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। হারারি মনে করেন, যুদ্ধের পেছনের যুক্তিগুলো আজকাল আর তেমন কার্যকর নয়। একসময় যুদ্ধ হতো জমি, সম্পদ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য। কিন্তু আধুনিক যুগে সেই প্রয়োজন অনেকটাই বিলুপ্ত।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যদি চীন আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি সামরিক শক্তি দিয়ে দখল করতে চায়, তবে তার খরচ হবে বিপুল। বরং সেখানে বিনিয়োগ করলে লাভ হবে বহুগুণ। আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো ‘মানব মেধা’, যা অস্ত্র দিয়ে জবরদস্তিমূলকভাবে দখল করা যায় না।
এই যুক্তিতে হারারি আশাবাদী যে হোমো স্যাপিয়েন্স একসময় রূপ নেবে ‘হোমো ডিউস’ বা এক প্রকার দেবতুল্য প্রজাতিতে। তারা বিজ্ঞানের সহায়তায় শত শত বছর বাঁচবে এবং শুধু বড় দুর্ঘটনাতেই তাদের মৃত্যু হবে।
আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ‘গণহত্যামূলক সাংবাদিকতা’ করছে নিউইয়র্ক টাইমস২৬ জুলাই ২০২৫কিন্তু বাস্তবতা এই আশাবাদের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। বইটি প্রকাশের পরপরই শুরু হয়েছে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি এখন আর অলীক নয়, বাস্তবতার অংশ। রাশিয়া পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অস্তিত্ব যদি হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।
এমন কিছু ঘটে গেলে, হারারির পূর্বাভাস যে ভুল প্রমাণিত হবে, তা বলাই বাহুল্য। যদিও তা দেখার মতো তখন কেউ থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
ইরান যদি ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না—এমন নিশ্চয়তা নেই। হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ১৯৭৩ সালের ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধে ইসরায়েলের গোলাবারুদ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা মিসরের ওপর পারমাণবিক হামলার চিন্তা করছিল।
সেই পরিস্থিতিতে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও বিমান সরবরাহ করেন।
বিশ্ব রাজনীতির আরেক উদ্বেগজনক দিক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় পরিবর্তন। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিখ্যাত ঘোষণা ছিল—‘যদি তুমি আমাদের সঙ্গে না থাকো, তাহলে তুমি আমাদের শত্রু’। এটি শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং একধরনের বৈশ্বিক দম্ভ ও আধিপত্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
অর্থনৈতিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের দৈন্য এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক আগ্রাসী ভূমিকা নিতে বাধ্য করেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউক্রেন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে চলছে অস্থিরতা, সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়। শান্তি যেন এখন শুধুই এক কৌশলগত বিলাসিতা।
মহামারি, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ—মানব ইতিহাসের এই তিন মহাশত্রুর বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম এবং বিজ্ঞানের সাহায্যে মানবজাতির অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে অনন্য এক অধ্যায়। তবে যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে কৌশলগত স্থিতিশীলতা ও টেকসই শান্তির ভিত্তি রচনা করাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নইলে ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া হোমো ইরেক্টাস, হোমো হ্যাবিলিস কিংবা নিয়ান্ডারথালের মতো আমরাও, মানে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স একদিন হারিয়ে যেতে পারি সময়ের গর্ভে, অসীম শূন্যতায়।
তুষার কান্তি চাকমা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা