কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বণ্টন নিশ্চিত করতে কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

রবিবার (১ জুন) রাতে ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা প্রাঙ্গণে কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রতি বছর কোরবানির সময় বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ হলেও অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণে এর একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। সরকার এবার এই সমস্যা সমাধানে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৫০ টাকা কেজিদরে পশু বিক্রি

প্রস্তুত হাট, আসছে গরু-অপেক্ষা ক্রেতার

সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “কোরবানির পশুর চামড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। এটি সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ট্যানারি শিল্পে সরবরাহ করলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। এজন্য ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আলেম-ওলামারা সমাজে প্রভাব রাখেন। তাই তাদের সহযোগিতায় জনসচেতনতা বাড়ালে চামড়া নষ্ট হওয়া রোধ করা যাবে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, “কোরবানির পর আমরা অনেকেই গোস্ত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। চামড়ার খোঁজ রাখি না। এটা হয়তো নোংরা জায়গায় পড়ে থাকে। পচনশীল বস্তু হওয়ায় দ্রুতই চামড়া নষ্ট হতে থাকে। নষ্ট চামড়ার কোনো দাম নেই। এ কারণে যারা কোরবানি করবেন এবং চামড়া সংগ্রহ করবেন, সবাইকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।”

তিনি বলেন, “চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমরা কাঁচা চামড়া বা ব্লু ওয়েট নিয়ে কথা বলেছি। হয়তো আরো অনেকেই আসবেন। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমরা চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধকরণের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছি। যাতে কাঁচা চামড়া রফতানি সম্ভব হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমি চাই না এদেশ থেকে কাঁচা চামড়া বাইরে রপ্তানি হোক। কিন্তু সঠিক দাম না পেলে আমাদের সেদিকে যেতে হবে। পৃথিবীর মোট চামড়ার সাড়ে ৩ শতাংশ বাংলাদেশে হয়। এটা আল্লাহতায়ালার অনেক বড় বরকত। কিন্তু আমরা এই বরকতকে নষ্ট করে ফেলেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চামড়ার অবনমনের জন্য অনেকেই দায়ী।”

কোরবানীর চামড়া সংরক্ষণের চেষ্টা আগে কখনোই করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবারই প্রথম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কিছু সমস্যা হবে, গন্ধ হবে। সুন্দর করে পরিস্কার করে লবন দিতে পারলে গন্ধ কমে যাবে। লবণ দিয়ে ৩ মাস সংরক্ষণ করা যাবে। দাম না পেলে চামড়া বেচব না, এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। সঠিক দাম নিশ্চিত করতে চামড়াগুলোকে সঠিক প্রক্রিয়ায় পরিচ্ছন্ন করতে হবে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “চামড়ায় লবণ দেওয়ার জন্য আমরা লবণ চাষীদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মণ লবণ কিনেছি। চামড়া সংরক্ষণের জন্য এই লবণ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এতে কিছুটা হলেও লবণ চাষিরা উপকৃত হয়েছে।”

উপদেষ্টা আরো বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের যে অর্থনৈতিক অনুমান ছিল, তার মধ্যে চামড়া অন্যতম। এছাড়া পাট ও চা মোটাদাগে অনুমান ছিল। আমাদের প্রত্যেকটা শিল্প নষ্ট হয়েছে। এমন পর্যায়ে গেছে যে, যখন ২৫ হাজার টাকার গরুর দাম ছিল, তখন চামড়ার দাম ছিল ২ হাজার টাকা। এখন ওই গরুর দাম ১ লাখ টাকা হয়েছে, কিন্তু চামড়ার দাম ২০০ টাকা। এটা একদম অস্বাভাবিক অবস্থা।”

“ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী চামড়া বেচতে পারবেন না। তবে ব্যবহার করতে পারবেন। আমি যাকে এটা দিয়েছি, এটা তার হক (এতিমদের)। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর অর্থনৈতিক মূল্যমান যা ছিল, সেটি হারিয়ে গেছে,” যুক্ত করেন শেখ বশিরউদ্দীন।

সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ গরু কোরবানি হয় উল্লেখ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “এ থেকে যে হাসিল তোলা হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র পাঁচদিনে ৫ হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে হাটের ইজারাদার। এখানে যে চামড়া হবে, তার দাম হবে বেশি হলে ৫০০ কোটি টাকার মত। এই টাকার হকদার লাখ লাখ মানুষ। আর ৫ হাজার কোটি টাকার হকদার  ১০০ জন থেকে বড়জোর ৫০০ জনের মত।”

তিনি বলেন, “৫ হাজার টাকার হাসিল নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এ বছর সময় স্বল্পতার কারণে চামড়ার হকদারদের হাসিলের হকদার করা যায়নি। আমি আশা করবো, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে তারা যেন এ কাজটি করবেন।”

মতবিনিময় সভায় জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.

শামীম হুসাইন, খিলগাঁও মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জহুরুল ইসলাম, দক্ষিণগাঁও সবুজবাগ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সাব্বির আহমেদ, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি আব্দুল মালেক প্রমুখ।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ণ জ য উপদ ষ ট র হকদ র র জন য স গ রহ

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ