কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
Published: 2nd, June 2025 GMT
কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বণ্টন নিশ্চিত করতে কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রবিবার (১ জুন) রাতে ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা প্রাঙ্গণে কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রতি বছর কোরবানির সময় বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ হলেও অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণে এর একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। সরকার এবার এই সমস্যা সমাধানে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৫০ টাকা কেজিদরে পশু বিক্রি
প্রস্তুত হাট, আসছে গরু-অপেক্ষা ক্রেতার
সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “কোরবানির পশুর চামড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। এটি সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ট্যানারি শিল্পে সরবরাহ করলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। এজন্য ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আলেম-ওলামারা সমাজে প্রভাব রাখেন। তাই তাদের সহযোগিতায় জনসচেতনতা বাড়ালে চামড়া নষ্ট হওয়া রোধ করা যাবে।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, “কোরবানির পর আমরা অনেকেই গোস্ত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। চামড়ার খোঁজ রাখি না। এটা হয়তো নোংরা জায়গায় পড়ে থাকে। পচনশীল বস্তু হওয়ায় দ্রুতই চামড়া নষ্ট হতে থাকে। নষ্ট চামড়ার কোনো দাম নেই। এ কারণে যারা কোরবানি করবেন এবং চামড়া সংগ্রহ করবেন, সবাইকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।”
তিনি বলেন, “চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমরা কাঁচা চামড়া বা ব্লু ওয়েট নিয়ে কথা বলেছি। হয়তো আরো অনেকেই আসবেন। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমরা চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধকরণের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছি। যাতে কাঁচা চামড়া রফতানি সম্ভব হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমি চাই না এদেশ থেকে কাঁচা চামড়া বাইরে রপ্তানি হোক। কিন্তু সঠিক দাম না পেলে আমাদের সেদিকে যেতে হবে। পৃথিবীর মোট চামড়ার সাড়ে ৩ শতাংশ বাংলাদেশে হয়। এটা আল্লাহতায়ালার অনেক বড় বরকত। কিন্তু আমরা এই বরকতকে নষ্ট করে ফেলেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চামড়ার অবনমনের জন্য অনেকেই দায়ী।”
কোরবানীর চামড়া সংরক্ষণের চেষ্টা আগে কখনোই করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবারই প্রথম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কিছু সমস্যা হবে, গন্ধ হবে। সুন্দর করে পরিস্কার করে লবন দিতে পারলে গন্ধ কমে যাবে। লবণ দিয়ে ৩ মাস সংরক্ষণ করা যাবে। দাম না পেলে চামড়া বেচব না, এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। সঠিক দাম নিশ্চিত করতে চামড়াগুলোকে সঠিক প্রক্রিয়ায় পরিচ্ছন্ন করতে হবে।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “চামড়ায় লবণ দেওয়ার জন্য আমরা লবণ চাষীদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মণ লবণ কিনেছি। চামড়া সংরক্ষণের জন্য এই লবণ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এতে কিছুটা হলেও লবণ চাষিরা উপকৃত হয়েছে।”
উপদেষ্টা আরো বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের যে অর্থনৈতিক অনুমান ছিল, তার মধ্যে চামড়া অন্যতম। এছাড়া পাট ও চা মোটাদাগে অনুমান ছিল। আমাদের প্রত্যেকটা শিল্প নষ্ট হয়েছে। এমন পর্যায়ে গেছে যে, যখন ২৫ হাজার টাকার গরুর দাম ছিল, তখন চামড়ার দাম ছিল ২ হাজার টাকা। এখন ওই গরুর দাম ১ লাখ টাকা হয়েছে, কিন্তু চামড়ার দাম ২০০ টাকা। এটা একদম অস্বাভাবিক অবস্থা।”
“ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী চামড়া বেচতে পারবেন না। তবে ব্যবহার করতে পারবেন। আমি যাকে এটা দিয়েছি, এটা তার হক (এতিমদের)। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর অর্থনৈতিক মূল্যমান যা ছিল, সেটি হারিয়ে গেছে,” যুক্ত করেন শেখ বশিরউদ্দীন।
সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ গরু কোরবানি হয় উল্লেখ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “এ থেকে যে হাসিল তোলা হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র পাঁচদিনে ৫ হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে হাটের ইজারাদার। এখানে যে চামড়া হবে, তার দাম হবে বেশি হলে ৫০০ কোটি টাকার মত। এই টাকার হকদার লাখ লাখ মানুষ। আর ৫ হাজার কোটি টাকার হকদার ১০০ জন থেকে বড়জোর ৫০০ জনের মত।”
তিনি বলেন, “৫ হাজার টাকার হাসিল নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এ বছর সময় স্বল্পতার কারণে চামড়ার হকদারদের হাসিলের হকদার করা যায়নি। আমি আশা করবো, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে তারা যেন এ কাজটি করবেন।”
মতবিনিময় সভায় জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ণ জ য উপদ ষ ট র হকদ র র জন য স গ রহ
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।