ঈদের ছুটি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলের সব রিসোর্টের বুকিং প্রায় শেষ
Published: 3rd, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার লম্বা ছুটি পেয়েছেন মানুষ। ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্কুল–কলেজে সেই ছুটি আরও বেশি, ১৯ জুন পর্যন্ত। দীর্ঘ এই ছুটি উপভোগ করতে দেশের পর্যটনস্থলগুলোতে ছুটে যাবেন অনেকে। ভ্রমণপিপাসুদের বরণে প্রস্তুত দেশের প্রসিদ্ধ পর্যটনস্থল চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল।
পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গলে আছে প্রায় ১০০টি হোটেল–রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতিমধ্যে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন থেকে সব হোটেল–রিসোর্ট হাউসফুল পর্যটক থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক ধরে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় দেশের পর্যটন–সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। শ্রীমঙ্গলে এমনিতেই পর্যটকেরা সারা বছর ভিড় করেন।
শ্রীমঙ্গলে চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাশাপাশি দার্জিলিং টিলা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের পল্লিগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, নুরজাহান চা–বাগান পর্যটকদের বিমোহিত করে।
শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট রয়েছে রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকায়। সেখানের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, ‘রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকার সব রিসোর্টেই আগাম বুকিং পেয়েছি। আমাদের লেমন গার্ডেন রিসোর্টে ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সব রুমই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের কথা ভেবে আমরা সব ধরনের সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম প্রথম আলোকে জানান, ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। আর বিদেশি পর্যটক না এলে ট্যুর গাইডদের কম বুকিং থাকে। তবে হোটেল–রিসোর্টগুলো ভালো আগাম বুকিং পেয়েছে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো বেশির ভাগই শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। শহরে আর বড় কিছু রিসোর্টে এখনো কয়েকটি রুম আছে। সবাই আগাম বুকিং দিয়ে দিয়েছেন। ৭ থেকে ১৫ তারিখের জন্য পর্যটকেরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আমরা এরই মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা আশা করছি, ঈদের লম্বা ছুটিতে চায়ের রাজ্যে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান–লরি চলাচল বন্ধ থাকবে
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪ থেকে ৬ জুন এবং ১২ থেকে ১৪ জুন মোট ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পশুবাহী যানবাহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি ও খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টসসামগ্রী, ওষুধ, সার ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত ঈদযাত্রা ও পশুর হাটকেন্দ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা মহানগর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাত্রা করবেন। ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা মহানগর ত্যাগ করেন এবং প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেন। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা এবং কোরবানির পশুর হাটসংলগ্ন যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
রুট পারমিটবিহীন বাস কোনোক্রমেই চলাচল করতে পারবে না। আন্তজেলা বাসগুলোকে টার্মিনালের ভেতরে যাত্রী উঠিয়ে সরাসরি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টার্মিনালের বাইরে সড়কের ওপর বাস দাঁড় করানো যাবে না। অনুমোদিত কাউন্টার ব্যতীত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো যাবে না।
ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তাগুলোয় কোনোভাবেই যানবাহন পার্ক করা যাবে না। লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন, যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত ও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে ৪, ৫ ও ৬ জুন শুধু ঢাকা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী) সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। ওই রাস্তার আশুলিয়া-ধউর-কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে—এমন যানবাহন আশুলিয়া-ধউর-পঞ্চবটি হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে গাবতলী ও অন্য এলাকায় প্রবেশ করবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারশন) সব ধরনের যানবাহন ৪, ৫ ও ৬ জুন ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করবে। বিআরটি প্রবেশের লেন দিয়ে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটির ঢাকা অভিমুখী যানবাহনগুলো অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে নরমাল রাস্তায়, লেনে ঢাকায় আগমন করবে। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য ঢাকা মেট্রো এলাকার বিআরটিসির বাসডিপোগুলোর বাস ঢাকা শহর অতিক্রম না করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঈদযাত্রায় সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য যানবাহনগুলোকে ৪, ৫ ও ৬ জুন নিম্নবর্ণিত সড়কগুলো পরিহার করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (বনানী টু আব্দুল্লাহপুর), ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড), মিরপুর রোড (শ্যামলী টু গাবতলী), ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু বাবুবাজার ব্রিজ), ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গা ব্রিজ), মোহাম্মদপুর বছিলা ক্রসিং থেকে বছিলা ব্রিজ সড়ক, আব্দুল্লাহপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক।
পশুর হাটের ইজারায় উল্লিখিত সীমানা ও স্কেচ ম্যাপের বাইরে সড়কের ওপর কোনোভাবেই কোরবানির পশু কেনাবেচা এবং লোড-আনলোড করা যাবে না।
কোরবানির পশু পরিবহনকারী যানবাহন আনলোড করার জন্য এবং বিক্রি করা পশু লোড করার জন্য হাটের ভেতর পৃথক পৃথক জায়গা খালি রাখতে হবে। যদি হাটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, তবে নিকটবর্তী কোনো জায়গায় পৃথক পৃথক আনলোড এবং বিক্রীত পশু লোড করার স্থান নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।
সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো হাটে পশু নেওয়া হবে—এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হাটের নামসংবলিত ব্যানার ট্রাকের সম্মুখে টাঙাতে হবে। হাইওয়ে বা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে কোনো পশুর হাট ইজারা প্রদান না করা।
যদি কোনো পশুর হাট ঢাকা মহানগরের ফিডার রোড, সরু রোডের পাশে ইজারা দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই সড়ক এবং হাটের মাঝে ছয় ফুট উঁচু প্রাচীর স্থাপন করতে হবে। সুবিধাজনক জায়গায় ‘এন্ট্রি’ ও পৃথক ‘এক্সিট’ রাখতে হবে।
পশুর হাটসংলগ্ন সড়কগুলোয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পুলিশকে সহযোগিতার জন্য ইজারাদারেরা পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন।
পশুর হাটে গমনাগমনকারী রাস্তায় কোনোক্রমেই ক্রেতাদের গাড়ি, পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ পার্ক করা যাবে না। কেউ পার্ক করলে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে।
পশুর হাটের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সড়কের ওপরে যেখানে–সেখানে কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর জন্য উল্লিখিত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চালক, পশুর হাট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নগরবাসীকে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবার সহযোগিতা কামনা করছে।