রাজধানীর গ্রিনরোডের বাসিন্দা খান মোহাম্মদ ওয়াদুদ সাবেক অধ্যাপক। তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা খান সাবেক ব্যাংকার। দুজনই অবসরকালীন সময় কাটাতে কয়েকটি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কোন দেশে ঘুরতে গেলে কেমন খরচ, আর কী কী ছাড় পাওয়া যাবে—তা জানতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে যান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে আজ শুরু হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা।

খান মোহাম্মদ ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ এখন পর্যন্ত দশটি দেশে ঘুরেছি। আরও কিছু দেশ ঘুরে দেখতে চাই। তাই মেলায় কী কী প্যাকেজ আছে, তা জানতে এসেছি।’

বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) নামে এই মেলার উদ্বোধন হয়েছে আজ সকালে। মেলা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। মেলার আয়োজক ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব)।

আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলায় ১২০টি দেশি–বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ২২০ স্টল ও ২০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। যার মধ্যে রয়েছে বিমান সংস্থা, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, রিসোর্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও। মেলা উপলক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবায় নানা মূল্যছাড় দিচ্ছে।

আছে প্যাকেজ সুবিধা

এবারের মেলায় নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটন প্রতিষ্ঠানের স্টলও রয়েছে। ১২টি ট্যুর অপারেটর, এয়ারলাইনস ও ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠান নিয়ে রয়েছে নেপালের স্টল। সেই স্টলে কথা হয় নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টসের সহসভাপতি ঘনসেম ঘিমির সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দেশেরই পর্যটনে বড় সম্ভাবনা রয়েছে।’

মেলায় অংশ নিয়েছে মালদ্বীপের ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সানস্যান্ড মালদ্বীপ। দেশের ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে মিলে পর্যটনসেবা দেয় এই প্রতিষ্ঠান। তবে মেলায় তাদের সরাসরি প্যাকেজ কেনা যাবে। সানস্যান্ড মালদ্বীপের পরিচালক শাকিবা হুসেইন বলেন, ‘মেলায় আমাদের স্টলে থেকে প্যাকেজ নিলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমবে।’

এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘অতিথি’ এবং দা বেসক্যাম্প বাংলাদেশের ‘মুনলাই ইকো ট্যুরিজম’ নামের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটনসুবিধা। ব্র্যাকের অতিথি বর্তমানে শ্রীমঙ্গল, মধুপুর, রাজশাহী ও যশোরে পর্যটনসেবা দিচ্ছে। ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে তাদের।

এ ছাড়া শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস, ফ্লাই এমিরেটস, এয়ার এশিয়া, বিমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসও নানা ছাড় দিচ্ছে মেলায়। বিমান বাংলাদেশ ১১টি দেশের টিকিটে ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। বিমান বাংলাদেশের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেলা চলাকালে আমাদের অন্যান্য বিক্রয়কেন্দ্রেও এই মূল্যছাড় সুবিধা পাওয়া যাবে।’

মেলায় করা যাবে বিনিয়োগ

মেলায় কক্সবাজার, কুয়াকাটা, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হোটেল, রিসোর্ট এবং হসপিটালে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটায় একটি ফাইভ স্টার হোটেল তৈরি করছে ম্যানগ্রোভ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ সহব্যবস্থাপক রুমানা হোসেইন বলেন, ‘সর্বনিম্ন ৪ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে এই হোটেলে। মেলায় বিনিয়োগ করলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, পর্যটন দেশের অন্যতম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতগুলোর একটি। অন্য অনেক খাত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে; কিন্তু পর্যটন এমন একটি খাত, যা এখনো মানুষের সেবার ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, খাদ্য ও লোকসংস্কৃতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান গন্তব্য হতে পারে। তবে এসব সুযোগ এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সমাপনী বক্তব্যে টোয়াবের সভাপতি মো.

রাফেউজ্জামান বলেন, বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আগমন বাড়াতে হলে অন-অ্যারাইভাল ভিসার পরিবর্তে ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নায়লা আহমেদ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিমান টিকিট ও ভ্রমণ প্যাকেজে নানা ছাড়

রাজধানীর গ্রিনরোডের বাসিন্দা খান মোহাম্মদ ওয়াদুদ সাবেক অধ্যাপক। তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা খান সাবেক ব্যাংকার। দুজনই অবসরকালীন সময় কাটাতে কয়েকটি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কোন দেশে ঘুরতে গেলে কেমন খরচ, আর কী কী ছাড় পাওয়া যাবে—তা জানতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে যান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে আজ শুরু হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা।

খান মোহাম্মদ ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ এখন পর্যন্ত দশটি দেশে ঘুরেছি। আরও কিছু দেশ ঘুরে দেখতে চাই। তাই মেলায় কী কী প্যাকেজ আছে, তা জানতে এসেছি।’

বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) নামে এই মেলার উদ্বোধন হয়েছে আজ সকালে। মেলা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। মেলার আয়োজক ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব)।

আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলায় ১২০টি দেশি–বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ২২০ স্টল ও ২০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। যার মধ্যে রয়েছে বিমান সংস্থা, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, রিসোর্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও। মেলা উপলক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবায় নানা মূল্যছাড় দিচ্ছে।

আছে প্যাকেজ সুবিধা

এবারের মেলায় নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটন প্রতিষ্ঠানের স্টলও রয়েছে। ১২টি ট্যুর অপারেটর, এয়ারলাইনস ও ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠান নিয়ে রয়েছে নেপালের স্টল। সেই স্টলে কথা হয় নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টসের সহসভাপতি ঘনসেম ঘিমির সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দেশেরই পর্যটনে বড় সম্ভাবনা রয়েছে।’

মেলায় অংশ নিয়েছে মালদ্বীপের ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সানস্যান্ড মালদ্বীপ। দেশের ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে মিলে পর্যটনসেবা দেয় এই প্রতিষ্ঠান। তবে মেলায় তাদের সরাসরি প্যাকেজ কেনা যাবে। সানস্যান্ড মালদ্বীপের পরিচালক শাকিবা হুসেইন বলেন, ‘মেলায় আমাদের স্টলে থেকে প্যাকেজ নিলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমবে।’

এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘অতিথি’ এবং দা বেসক্যাম্প বাংলাদেশের ‘মুনলাই ইকো ট্যুরিজম’ নামের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটনসুবিধা। ব্র্যাকের অতিথি বর্তমানে শ্রীমঙ্গল, মধুপুর, রাজশাহী ও যশোরে পর্যটনসেবা দিচ্ছে। ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে তাদের।

এ ছাড়া শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস, ফ্লাই এমিরেটস, এয়ার এশিয়া, বিমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসও নানা ছাড় দিচ্ছে মেলায়। বিমান বাংলাদেশ ১১টি দেশের টিকিটে ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। বিমান বাংলাদেশের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেলা চলাকালে আমাদের অন্যান্য বিক্রয়কেন্দ্রেও এই মূল্যছাড় সুবিধা পাওয়া যাবে।’

মেলায় করা যাবে বিনিয়োগ

মেলায় কক্সবাজার, কুয়াকাটা, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হোটেল, রিসোর্ট এবং হসপিটালে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটায় একটি ফাইভ স্টার হোটেল তৈরি করছে ম্যানগ্রোভ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ সহব্যবস্থাপক রুমানা হোসেইন বলেন, ‘সর্বনিম্ন ৪ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে এই হোটেলে। মেলায় বিনিয়োগ করলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, পর্যটন দেশের অন্যতম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতগুলোর একটি। অন্য অনেক খাত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে; কিন্তু পর্যটন এমন একটি খাত, যা এখনো মানুষের সেবার ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, খাদ্য ও লোকসংস্কৃতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান গন্তব্য হতে পারে। তবে এসব সুযোগ এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সমাপনী বক্তব্যে টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আগমন বাড়াতে হলে অন-অ্যারাইভাল ভিসার পরিবর্তে ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নায়লা আহমেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ