সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। এর জেরে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের মধ্যে ভেতরে–ভেতরে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আছে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও। তবে নেতাদের একে অন্যের প্রতি ক্ষোভ আর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশে কর্মী-সমর্থকেরাও এখন দ্বিধাবিভক্ত। সব মিলিয়ে নগরকেন্দ্রিক সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে বিভেদ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় বিএনপির পুরোনো কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গণ–অভ্যুত্থান–পূর্ববর্তী সময়ে নেতাদের ভেতরে–ভেতরে দ্বন্দ্ব-বিভেদ থাকলেও তা খুব একটা সামনে আসেনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নানা ঘটনায় নেতাদের মধ্যে বহুদিনের জিইয়ে থাকা বিভেদ প্রকাশ্যে আসে।

সর্বশেষ গত শুক্রবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন বিভেদ দেখা গেল। সেখানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সামনেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তাঁরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর বাইরে ওই সভায় মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ‘অবমূল্যায়নের’ অভিযোগও উঠেছে।

এ ছাড়া গত ২০ মে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভা হয়। সভা চলাকালে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘কল’ এসেছে—এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ইমদাদ হোসেন ওই রাতেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও তাঁর অনুসারীদের অভিযুক্ত করেন।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সামনেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান আরিফুল হক চৌধুরী ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তাঁরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ইমদাদের অভিযোগের পরই ফেসবুকে দুই পক্ষের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দেওয়ার পাশাপাশি একে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় অনুসারী নেতাদের নিয়ে সভা করেছেন ইমদাদ হোসেন। এ নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপিকেন্দ্রিক সাম্প্রতিক দুটি কর্মকাণ্ডে দলের ভেতরে-বাইরে নানামুখী আলোচনা চলছে। বিশেষ করে দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান দলের একজন প্রবীণ নেতা ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আরিফুল হকের নির্দেশনামূলক কথার পৃষ্ঠে ‘কাউন্টার কথায়’ জড়িয়ে রীতিমতো ‘বেয়াদবি’ করেছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

আরিফুল হকের অনুসারীদের দাবি, দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর সভায় কেন মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা অনুপস্থিত—এমন প্রশ্ন তুলে আরিফুল হক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। দলের সাংগঠনিক স্বার্থে একজন প্রবীণ নেতার রাখা এমন বক্তব্যের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ না করে রেজাউল হাসান আঙুল নেড়ে নেড়ে ‘কাউন্টার ও অ্যাগ্রেসিভ বক্তব্য’ দিয়ে আলোচনায় আসার চেষ্টা করেন। এটা ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’।
তবে রেজাউল হাসানের অনুসারীদের দাবি, আরিফুল হক প্রায়ই মহানগর বিএনপির খুঁত ধরে বিভিন্ন সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। গত শুক্রবারও তিনি এমনটা করেছেন। এমন অবস্থায় রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখছিলেন। এমন সময় অযাচিতভাবে আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই বক্তব্যরত রেজাউল হাসানের দিকে তেড়ে আসেন এবং শাসানোর ভঙ্গিতে কথা বলেন। দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার কাছ থেকে এমন আচরণ একেবারেই প্রত্যাশিত নয়।

সভায় আরিফুল হক সুন্দর করে কথা বলেছেন। কেন সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি কম, এ নিয়ে তিনি বক্তব্য দেন। কিন্তু রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এটা সুন্দরভাবে নেননি। হলভর্তি লোকের সামনে কয়েস লোদী যেভাবে একজন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বক্তব্য দেন, সেটা উচিত হয়নি।নাসিম হোসাইন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা

মহানগর বিএনপির সেদিনের আলোচনা সভায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগও উঠেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মহানগর বিএনপির দুবারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ও দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসাইন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমকে মঞ্চে তোলা দূরের কথা, বক্তব্য রাখার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। এ নিয়ে দলের তৃণমূলের অনেকে ভেতরে–ভেতরে ক্ষুব্ধ হন।

এ বিষয়ে নাসিম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় আরিফুল হক সুন্দর করে কথা বলেছেন। কেন সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি কম, এ নিয়ে তিনি বক্তব্য দেন। কিন্তু রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এটা সুন্দরভাবে নেননি। হলভর্তি লোকের সামনে কয়েস লোদী যেভাবে একজন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বক্তব্য দেন, সেটা উচিত হয়নি। আরিফুল ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, অথচ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কাছে তিনি অসম্মানিত হলেন। তিনি (লোদী) অতিরিক্ত অ্যাগ্রেসিভ বক্তব্য দিয়েছেন। একজন সভাপতি হিসেবে তিনি যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে অনেকে আহত হয়েছেন।’ তাঁকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না-দেওয়ার বিষয়ে ‘ছোট মনের পরিচয়’ দিয়েছেন বলে মন্তব্য তাঁর।

সিনিয়র নেতাদের অনেকে কর্মসূচিতে ছিলেন না, এ জন্য প্রধান অতিথি দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন। এটা অন্যায় না। কিন্তু পরে যেটা ঘটেছে, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, সিলেট মহানগর বিএনপি

বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘তাঁরা (মহানগরের বর্তমান নেতৃত্ব) তো এখন অথরিটি। আমরা তো এখন সাবেক, পুরানা মাল। যেহেতু দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের শাহাদাতবার্ষিকী, তাই সাবেক হিসেবে আমি গিয়েছিলাম। দলের একজন ফাউন্ডার ওয়ার্কার হিসেবে দায়িত্ব থেকেই গিয়েছি। কিন্তু মঞ্চে সিট থাকা সত্ত্বেও নাসিম হোসাইনসহ আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন তাঁরা করেননি। দলের একজন ফাউন্ডার ওয়ার্কার হিসেবে এটা মাইনা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, তাই আমি চইলা আইছি।’

আরও পড়ুনসিলেটে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর সভায় আরিফুল-লোদীর বাগ্‌বিতণ্ডা, উত্তেজনা৩০ মে ২০২৫

সাবেক দুই নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বক্তব্য না দেওয়ায় তাঁরা (নাসিম ও বদরুজ্জামান) কোনো মান-অভিমান করেননি। আর সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রধান অতিথি বক্তব্যে যা বলেছেন, এটা তিনি বলতেই পারেন। সিনিয়র নেতাদের অনেকে কর্মসূচিতে ছিলেন না, এ জন্য প্রধান অতিথি দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন। তিনি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, কথা প্রসঙ্গে তিনি এটা বলতেই পারেন। এটা অন্যায় না। কিন্তু পরে যেটা ঘটেছে, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে কেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরে এমন করলেন, সেটা তাঁর (লোদী) কাছ থেকেই জেনে নেওয়া ভালো।’ তবে এগুলোকে তিনি বিভেদ বলতে নারাজ।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয়ে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ বা বিভেদ নেই। আমি শুধু আমাদের নেতা ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যের সূত্র ধরে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিন তিনি (আরিফুল) কেন আমার দিকে তেড়ে এলেন কিংবা এমন আচরণ করলেন, সেটা বোধগম্য নয়।’

আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে দলের সবাই যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন। তবে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।মিফতাহ্ সিদ্দিকী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক

মহানগর বিএনপির নেতাদের দ্বন্দ্বের রেষ ফেসবুকেও গড়িয়েছে। দলটির অনেক নেতা-কর্মী মহানগর বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। গত শনিবার রাতে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বদর মাহমুদ বদরুদ্দোজা একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখেন, ‘সিলেট বিএনপিকে গতিশীল করতে মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানো জরুরি।’

মহানগর বিএনপির নেতাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি কয়েক দিনের ব্যবধানে একাধিকবার প্রকাশ্যে আসার ব্যাপারে কথা হয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে দলের সবাই যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন। তবে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত দ র ন স ম হ স ইন ইমদ দ হ স ন দল র একজন র অন স র দ বন দ ব অন ষ ঠ ন র স মন বল ছ ন প রক শ র অন ক দল র ভ এক ধ ক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন

‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।

তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।

জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।

ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।

‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’

সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’

রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় যাত্রীকে তুলতে অস্বীকৃতি উবার চালকের
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার