ক্রিকেটারদের মনোবিদের কাছে পাঠানোর পরামর্শ নান্নুর
Published: 3rd, June 2025 GMT
জাতীয় দলের বর্তমান কোচিং স্টাফের মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে গেছে আগেই। এ কারণে আশা করা হয়েছিল দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুটা ভালো হবে। সেখানে প্রথম সিরিজে হোঁচট খায় আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হেরে। শারজাহর তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারাটা ছিল ভীষণ লজ্জার।
পাকিস্তানেও সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। দলের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণে ব্যাটারদের ব্যর্থতার দায় দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ক্রিকেটারদের মানসিকতায় ঘাটতির পাশাপাশি পরিকল্পনার ঘাটতি দেখেন।
জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন মনে করেন, মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন ক্রিকেটাররা। ‘পাকিস্তানে ফ্ল্যাট ট্র্যাক, বল স্কিড করে, ঘাস ছিল। সেখানে টেকনিক্যালি ভালো ব্যাটারকে খেলাতে হতো। নাজমুল হোসেন শান্তর ভালো করার সম্ভাবনা ছিল বেশি। এই টিম ম্যানেজমেন্ট কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং ব্যাটিং-বোলিং কোথাও পরিবর্তন হয়নি। বরং মনমানসিকতায় নিচে নেমে গেছে। এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে একজন ভালো মনোবিদ নিয়োগ দিয়ে ক্রিকেটারদের নিয়ে আলাদা সেশন করতে হবে। খারাপ খেলার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আমরা ব্যাটিং করতে পারিনি। আরব আমিরাতের সঙ্গেও না, পাকিস্তানেও না। যে উইকেটে খেলা হয়েছে সেখানে ২২৫ থেকে ২৩০ রান হওয়া উচিত ছিল।’ শ্রীলঙ্কা সফরের আগে ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে চাঙা করার পরামর্শ দেন জাতীয় দলের সাবেক এ দুই অধিনায়ক।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল রানের জন্য স্বর্গ। প্রথম ম্যাচে ১৬৪, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৪ রান করেছেন তারা। শেষ ম্যাচে ওপেনিং জুটির কল্যাণে ১৯৬ রান করলেও বোলাররা ডিফেন করায় ব্যর্থ। সুজন বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে তাদের বিপক্ষে খেলা অনেক কঠিন। ওরা অনেক ভালো দল। হ্যাঁ, আমাদের ব্যাটিং-বোলিং ভালো হয়নি, দল হিসেবে পারফর্ম করতে পারিনি। দুঃখ লেগেছে আমিরাতের সঙ্গে পারফর্ম করতে না পারায়। যেখানে আমাদের ৩-০ ব্যবধানে জেতা উচিত ছিল সেখানে ২-১ ব্যবধানে হেরেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ আশা করেছিলাম। কালকের (রোববার) ম্যাচে ভালো শুরু করার পরও ২০০ রানে যেতে পারেনি। সত্যি কথা বলতে বোলিংটাও ভালো হয়নি। আমার মনে হয় মুস্তাফিজ আর তাসকিন বড় ম্যাটার করে। তারা না থাকলে বোলিং বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া একজন বাঁহাতি স্পিনারের ঘাটতি আছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫