গত রবিবার (১ জুন) গাজায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত লোকজনের উপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জাতিসংঘের মহাসচিব স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানালেন। 

মঙ্গলবার (৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফাহ কেন্দ্র থেকে খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো আইএলও

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪০০ ছাড়াল

রেড ক্রস জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৭৯ জন হতাহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছে। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ৩১।

রবিবার, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বা ত্রাণ কেন্দ্রের  ভেতরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, এই ধরনের প্রতিবেদন মিথ্যা।

জিএইচএফ জানিয়েছে, প্রতিবেদনগুলো ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট’ এবং তাদের স্থাপনায় বা তার কাছাকাছি কোনো হামলার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দেয় না, যার ফলে এই অঞ্চলে কী ঘটছে তা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সোমবার (২ জুন) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গতকাল গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। আমি এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্ত এবং দোষীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

জাতিসংঘ প্রধানের এই মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং হামাসের কথা উল্লেখ না করার জন্য তার সমালোচনা করেছে।

সোমবার, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বিবিসিকে বলেন, গাজায় যেভাবে এখন মানবিক সাহায্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘অমানবিক’।

তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওয়ার প্রোগ্রামে বলেন, “আমি মনে করি, ইসরায়েল গাজার ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাচ্ছে। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, প্রায় তিন মাস ধরে খাবার, ওষুধের জন্য একেবারেই মরিয়া মানুষ, তারপর তাদের তা পেতে দৌড়াতে হয় অথবা সবচেয়ে মরিয়া পরিস্থিতিতে তা পেতে চেষ্টা করতে হয়?” 

তিনি বলেন, “ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা এমন মানুষের উপর এক বিশাল অমানবিকতা প্রদর্শন করে যারা মানবিক সাহায্য খুব প্রয়োজন।”

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার ভোরে রাফায় আমেরিকান সাহায্য কেন্দ্রের কাছে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৩১ জন নিহত এবং ১৭৬ জন আহত হয়েছেন।

রাফাহর স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ গারিব বিবিসিকে বলেন, স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জিএইচএফ সাহায্য কেন্দ্রের কাছে আল-আলম গোলচত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিদের একটি ভিড় জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে নির্বিচার এসে গুলি চালায়।”

তিনি বলেন, “নিহত ও আহতরা দীর্ঘ সময় ধরে মাটিতে পড়ে ছিল। উদ্ধারকারীরা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। এর ফলে বাসিন্দারা গাধার গাড়ি ব্যবহার করে আহতদের ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।”

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রবিবার বিকেলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, তাদের সৈন্যরা ‘মানবিক সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি বা ভেতরে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালায়নি এবং এই বিষয়ে রিপোর্টগুলো মিথ্যা’।

আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন হামাসকে ‘গুজব ছড়ানোর’ এবং ‘গাজার জনগণকে সেই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য সহিংস চেষ্টা করার’ অভিযোগ করেছেন।

রবিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের একজন উধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, সৈন্যরা জিএইচএফ ত্রাণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ‘বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে বাহিনীর কাছে যেতে বাধা দেওয়ার’ জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ত্রাণ বিতরণ শুরু হওয়ার আগেই।

তিনি বলেন, “সতর্কীকরণ গুলি চালানো হয়েছিল। প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনার সাথে আইডিএফের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের কোনো যোগসূত্র নেই।”

সোমবার জিএইচএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়া সম্প্রদায়কে সরাসরি মিথ্যা তথ্য এবং ভুল তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুতর। জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে কোনো গুলিবর্ষণ, আহত বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।”

ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে এই বিষয়ে ‘বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিবেদন’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

এদিকে, সোমবার গাজার স্বাস্থ্য অফিস ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় একই জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে আরো তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। তখন থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৪৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল স ব ধ ন তদন ত ত র ণ ব তরণ জ এইচএফ ইসর য় ল রব ব র স মব র র জন য র উপর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮

কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।

আরো পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।

খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ