দুই জেলার সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 3rd, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ২২ জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট সীমান্ত দিয়ে আটজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল সোমবার গভীর রাত ও আজ মঙ্গলবার ভোরে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাঁদের আটক করে হেফাজতে নেয়।
বিজিবি জানিয়েছে, নেত্রকোনার অধীন ৩১ বিজিবির আওতাধীন ধোবাউড়ার মুন্সিপাড়া সীমান্ত দিয়ে দিবাগত রাত তিনটার দিকে ভারতের রসনাই গিরি বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ১২ জনকে ঠেলে পাঠান। পরে বিজিবি তাঁদের আটক করে মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়।
আটক করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন শিশু, তিনজন নারী ও আটজন পুরুষ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ২০০৪ সালে অবৈধভাবে ভারতের গুজরাট রাজ্যে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শরিফুল উল্লাহ নামের একজন বলেন, ২০০৪ সালে কাজের সন্ধানে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। গুজরাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন এবং সেখানে একটি মুরগির দোকানে কাজ করতেন। গত ২৪ মে ভারতের পুলিশ তাঁদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বিএসএফ তাঁদের সঙ্গে থাকা টাকা, মুঠোফোনসহ অন্যান্য জিনিস রেখে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়।
বিজিবির মুন্সিপাড়া ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার খাইরুল ইসলাম বলেন, রাতে বিএসএফ ১২ জনকে পুশইন করে। তাঁরা সবাই খুলনা বিভাগের নাগরিক। ২০০৪ সালে তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন। বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিএসএফ তাঁদের পুশইন করেছে। বর্তমানে তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে হালুয়াঘাট উপজেলার সূর্যপুর সীমান্ত দিয়ে গতকাল রাত তিনটার দিকে ৯ নারী ও ১ শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। ময়মনসিংহ ৩৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ সানবীর হাসান মজুমদার বলেন, আটক হওয়া ১০ জনই বাংলাদেশি। তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন। তাঁদেরও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী সীমান্ত দিয়ে আটজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ ভোরে তাঁদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে বিএসএফ আটজনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এর মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, আটক ব্যক্তিরা বিজিবির চাঁনশিকারী সীমান্ত ফাঁড়িতে আছেন। তাঁদের ভোলাহাট থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
ময়মনসিংহ শহরে এক নারী যাত্রীকে নিয়ে অটোরিকশায় গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন চালক জাকির হোসেন। বাড়েরা পুল আকন্দবাড়ী রোডসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে চালককে হঠাৎ থামতে বলেন তিনি। এ সময় একটি বাড়ি দেখিয়ে জাকিরকে ৫০০ টাকার নোট দেন ওই নারী। তাঁকে বাড়িটির ভেতরে গিয়ে এই টাকা কেয়ারটেকারকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির বাড়িটিতে গিয়ে কাউকেই পাননি। পরে সড়কে ফিরে দেখেন, তাঁর অটোরিকশাটি নেই।
২২ জুলাই ঘটনাটির দৃশ্য ধরা পড়ে একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। পরে চক্রটির ৪ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। সংস্থাটি জানায়, প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে অটোরিকশা চুরি করত চক্রটি। আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ শহরে র্যাব-১৪–এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক নয়মুল হাসান।
আটক ব্যক্তিরা হলেন শাহিদ (৩০), রেহেনা আক্তার ওরফে সাদিয়া (৩৫), মোস্তফা (৬২) ও মোস্তফা মিয়া (৩৯)। এদের মধ্যে শাহিদ ঢাকা, সাদিয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মোস্তফা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও মোস্তফা মিয়া তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল রোববার রাতে গৌরীপুর ও তারাকান্দায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি গ্রামের জাকির হোসেন ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের দাপুনিয়া বাজার থেকে বাড়েরার পুল এলাকায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশাটি ভাড়া করেন মোস্তফা। মোস্তফা জানান, তাঁর ম্যাডাম গাড়িটি করে সেখানে যাবেন। রেহেনা নামের ওই যাত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোরিকশাটি থামাতে বলেছিলেন। এরপর জাকিরকে ৫০০ টাকা দিয়ে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মোস্তফাকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির টাকা নিয়ে বাড়িটিতে গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও সারা পাননি। পরে ঘটনাস্থলে ফিরে এসে দেখেন, ওই নারীসহ তাঁর অটোরিকশাটি উধাও।
বিষয়টি নিয়ে পরদিন গত বুধবার র্যাব-১৪ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জাকির হোসেন। র্যাব ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখে, ঘটনাস্থলে অটোরিকশাটি থামার পর চালক সেখান থেকে পেছনের দিকে যেতে থাকেন। এর মধ্যে চক্রটির এক সদস্য অটোরিকশার কাছে অবস্থান নেন। সুযোগ বুঝে যানবাহনটি নিয়ে সটকে পড়েন। পরে ওই নারী অটোরিকশা থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে যান। এর মধ্যেই সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার গিয়ে ওই নারীর সামনে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই সেটিতে উঠে পড়েন তিনি।
র্যাব-১৪ জানায়, চক্রটি ৯ মাস ধরে কৌশলে অটোরিকশা চুরি করছিল। ওই চক্রের প্রধান প্রাইভেট কারের চালক শাহিদ। তাঁরা রাজধানীর পুরান ঢাকা, বনানী, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চুরি করেছেন। ময়মনসিংহে গিয়েও প্রাইভেট কার দিয়ে অটোরিকশা চুরি করে তারাকান্দার মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করতেন। মোস্তফা মিয়া অটোরিকশাটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন।
র্যাব আরও জানায়, জাকির হোসেনের অটোরিকশাটি ৫২ হাজার টাকায় মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন চক্রটির সদস্যরা। সেটির যন্ত্রাংশ আলাদা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন মোস্তফা মিয়া। এ কারণে অটোরিকশাটি উদ্ধার করা যায়নি। এ চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন সদস্য জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।