৯০ কেজির ৩ বাগাড়, ‘আউক্কা, দেখউক্কা, লউক্কা’ বলে মাইকে ঘোষণা
Published: 3rd, June 2025 GMT
মাছের ঝুড়ির ওপর বড়সড় তিনটি বাগাড় রাখা। পাশে দাঁড়ানো অটোরিকশায় দুটি মাইক। মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল, ‘দেখি যাউক্কা ভাই, বিশাল বাঘ (বাগাড়) মাছ। কাটিয়া বিক্রি হইব। কেজি পনেরো শ টেকা। আউক্কা, দেখউক্কা, লউক্কা।’ মাছ দেখতে ভিড় করেন অনেকে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তোলেন, কেউ ফেসবুকে লাইভ করেন, আবার কেউ কেউ দরদামও করছিলেন।
বিক্রেতার দাবি, ৩টি মাছের ওজন প্রায় ৯০ কেজি। শেষ পর্যন্ত দরদামের পর মাছ কেটে প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার শিশুপার্ক চত্বরে মাছগুলো বিক্রি হয়।
তবে ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, বাগাড় একটি সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। এ মাছ শিকার, বিক্রি বা পরিবহন করা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
সন্ধ্যায় শিশুপার্ক চত্বরে দেখা যায়, শামীম মিয়া নামের এক ব্যক্তি মাছগুলো বিক্রি করছেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের শেরপুরে। গত রোববার রাতে কুশিয়ারা নদীতে উতরা নামের একধরনের জালে মাছ তিনটি ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটির ওজন ৬০ কেজির বেশি বলে দাবি করেন। বাকি দুটির ওজন প্রায় ৩০ কেজি। তিনটি মাছ তিনিসহ আরও দুজনে মিলে কিনে এনেছেন। তবে কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এখানে মাছগুলো কেটে বিক্রি করা হবে। প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করবেন।
শামীম বলেন, ‘মাছগুলা প্রজননের লাইগা মেঘনা থিকা কুশিয়ারায় ঢুকছে। এই রকম বড় মাছ কদ্দিনে একটা পাই। এর আগে কুলাউড়ায়ও দুইডা বাগাড় কাটি বিক্রি করছি। ৪০ কেজি আছিল প্রতিটার ওজন। তিন-চার বছর আগে ১২০ কেজির একডা বাগাড় পাইছিলাম। ওটা শেরপুরের পৌষসংক্রান্তির মেলায় বিক্রি করছি।’
মাছ দেখতে আসা তরুণ অজিত দেবনাথ বলেন, ‘এত বড় মাছ এর আগে দেখিনি। তাই ছবি তুলে রাখছি।’
বাগাড় ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ জানেন কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে বিক্রেতা শামীম বলেন, ‘সব সময় তো বিক্রি করছি। কোনো সমস্যা নাই।’
বিষয়টি জানতে চাইলে বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযান চালাতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে। ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সাহেবের সঙ্গে কথা বলব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওজন
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।