ঈদুল আজহা সামনে রেখে কুমিল্লায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার হাটগুলোতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হতে পারে।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর কুমিল্লায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার। আর প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭০টি পশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৯১ হাজারটি, ছাগল ৫৬ হাজার ৯৪০টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫টি, মহিষ ৬০৮টি এবং অন্যান্য পশু ৩১৭টি। 

খামারিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় খাদ্য, ওষুধ ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পশুপালনের খরচ বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। ফলে গরু প্রতি গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। গরুর দাম শুরু হয়েছে ৮০ হাজার টাকা থেকে, যা গিয়ে ঠেকেছে ৫ লাখ পর্যন্ত। ছাগলের দাম ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে।

আরো পড়ুন:

কুমিল্লায় পশুর হাটে দেশি মাঝারি আকারের গরুর প্রাধান্য

কালীগঞ্জ কাঁপাচ্ছে বিশাল আকৃতির ‘নিগ্রো’!

ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম গত বছরের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকৃত গরুর প্রতি আগ্রহ থাকায় অনেকে কিছুটা বাড়তি দাম দিতেও রাজি আছেন।

জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। তাদের উৎপাদিত পশু স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোতেও সরবরাহ হচ্ছে। পশু খাতের এ মৌসুমি কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ।

সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক আব্দুল আল মনসুর বলেন, ‘‘এই মৌসুমি বিপণন স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের নগদ অর্থপ্রবাহ সৃষ্টি করে। পশু বিক্রির অর্থ সরাসরি যায় খাদ্য উৎপাদক, ওষুধ সরবরাহকারী, পরিবহনকর্মী, খামারি ও শ্রমিকদের হাতে, যা ক্ষুদ্র অর্থনীতিকে চাঙা করে।’’

এ বছর প্রতিটি হাটে থাকছে মোবাইল ভেটেরিনারি ইউনিট, জালনোট শনাক্তকারী যন্ত্র, অস্থায়ী ব্যাংক বুথ এবং সিসিটিভি ক্যামেরা। পরিবেশ রক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে, যারা হাট শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা পরিচ্ছন্ন করবে।

দাউদকান্দির খামারি মো.

ফজলুল হক জানান, এবার মাঝারি ও বড় আকারের দেশি গরুর সরবরাহ বেশি। তবে খাদ্যের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে। একই কথা বলেন, বুড়িচংয়ের খামারি শাহাদাত মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘তিনটি গরু প্রস্তুত করেছি। খরচ বেশি হওয়ায় লাভ ছাড়া বিক্রি সম্ভব না।’’ 

চৌদ্দগ্রামের গরু ব্যবসায়ী রফিকুল হক বলেন, “বাড়িতে লালিত গরুর চাহিদা বেশি, তবে ক্রেতারা দর কষাকষিতে পিছু হটছেন না।”

কুমিল্লা সদরের ক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “মাঝারি গরুর জন্য ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি হলেও ভালো গুণগত মানের গরুর জন্য কিছুটা বাড়তি দাম দেয়া যায়।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানান, খামারিরা এখন প্রাকৃতিক খাবারে গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। এতে মানুষের আস্থা বাড়ছে। প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম, জালনোট শনাক্তকারী যন্ত্র, ব্যাংক বুথ এবং সিসিটিভি রয়েছে। কোনো পশুকে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে বলে সন্দেহ হলে, তা বিক্রির অযোগ্য ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, পরিবেশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি চলছে। প্রতিটি হাটে নির্দিষ্ট ডাম্পিং জোন, মোবাইল ক্লিনিং টিম ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। হাট শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা পরিষ্কার করা হবে। 

ঢাকা/রুবেল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • অটিজম শিশু ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ, ফি মাত্র ১৫০০ টাকা
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫০০ কোটি ডলারের মানহানির মামলা করছেন ট্রাম্প
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে