আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে। সকাল থেকেই কোরবানির পশু কিনতে আগ্রহী ক্রেতারা হাটে ভিড় করছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সেই ভিড় আরও বাড়ছে। পশুর দাম নিয়ে বিক্রেতাদের কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও ক্রেতারা বাজেটের মধ্যে পছন্দের গরু কিনতে পারার কথা জানিয়েছেন। মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পাইকার ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বুধবার ঢাকার দুই সিটির তিনটি অস্থায়ী হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ তিনটি হাট হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা এবং ঢাকা উত্তর সিটির উত্তরা দিয়াবাড়ি হাট ও ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন হাট। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব হাট ঘুরে ক্রেতাদের ভিড়, বিক্রেতাদের সঙ্গে ক্রেতাদের পশুর দরদাম করতে দেখা গেছে।

এ বছর ঢাকার দুই সিটির আওতাধীন এলাকায় মোট ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮টি আর উত্তর সিটি এলাকায় বসেছে ১২টি। আনুষ্ঠানিকভাবে গত মঙ্গলবার থেকে এসব হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হাটে কোরবানির পশু কিনতে যাওয়া ক্রেতাদের কেউ কেউ বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার গড়পড়তা গরুর দাম ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তি।

কাদা মাড়িয়ে পশু কেনা

রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গায় (শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ভেতর) যে হাট বসেছে, তার পুরোটাই পশুর বর্জ্য ও কাদায় ভরা। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করা যায়নি। পশুর মলমূত্র, অব্যবস্থাপনায় জমে থাকা বর্জ্য ও পানি একসঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর মধ্যেও ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পছন্দের পশু কিনছেন।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা খামারি মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুটি গরু বিক্রি করেছি ১ লাখ ৮০ হাজারে। দাম মোটামুটি ভালোই পাচ্ছি।’

মানুষের আগ্রহ বেশি মাঝারি আকৃতির গরুতে। এসব গরু ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আবার ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের গরুও ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ছোট কিছু গরুও বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসার কথা ছিল ১১টি। এর মধ্যে আফতাবনগর ও বনশ্রী এলাকায় এবার বড় দুটি হাট বসেনি। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এ দুটি বড় হাট এবার বন্ধ। পাশাপাশি শ্যামপুরের কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডের খালি জায়গায় প্রত্যাশিত দর না পাওয়ার কারণে এই হাট কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। উত্তর শাহজাহানপুরের হাটটি বনশ্রী ও আফতাবনগরের কাছাকাছি। তাই ওই সব এলাকার ক্রেতারাও এবার খিলগাঁওয়ের উত্তর শাহজাহানপুর এলাকার এই হাটে এসে ভিড় করছেন।

শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির প্রতিটি অলিগলিতেই এবার গরু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পিকআপ ও ট্রাক বোঝাই করে এই হাটে গরু আসতে দেখা গেছে।

দুই ঘণ্টা ঘুরে দেখার পর এই হাট থেকে পছন্দের গরু কিনতে পেরেছেন বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম। যাওয়ার পথে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বনশ্রী এলাকার হাট বন্ধ থাকার কারণে এবার এই হাটে এসেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার দাম সামান্য বেশি বলে জানানেল তিনি। এত আগে গরু কেনার কারণ জানতে চাইলে বলেন, শেষ সময়ে এসে গরু কিনতে গেলে হয় দাম বেশি পড়ে, না হয় পাওয়াই যায় না। এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন আগে। তাই এবার আগেভাগেই পছন্দের গরু কিনে ফেলেছেন।

বিকেল হতেই হাটে ভিড়

ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গার হাট ও উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে গিয়ে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। হাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সকাল থেকেই হাটে আগ্রহী মানুষের আনাগোনা ছিল। তবে বিকেল হতেই ক্রেতাদের সমাগম আরও বাড়তে শুরু করে।

ভাটারা হাট থেকে মাঝারি আকারের একটি গরু ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় কেনেন নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘গরুটির দাম দুই লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। দেড় লাখ বলেছিলাম। শেষে আরও পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে গরুটি কিনেছি।’

এই হাটে একাধিক গরু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্রেতা আকারে ছোট ও মাঝারি গরুর দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ওই ধরনের গরুর দরদামই বেশি হচ্ছে। বড় আকারের গরুর দাম কেউ কেউ জানতে চাইছেন, কিন্তু দাম বলছেন না।

ওই হাটে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছিলেন কুমিল্লার ব্যবসায়ী আজম মিয়া। গতকাল সারা দিনে তিনটি গরু বিক্রি করেছেন। ওগুলোর দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে। বাকি গরুগুলোও এমন দামেই বিক্রি করবেন বলে জানালেন তিনি।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে গিয়ে ক্রেতাদের সমাগম আরও বেশি দেখা গেল। এ হাটটি উত্তরা ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের অনেক জায়গায় (খালি প্লট ও রাস্তার দুই পাশ নিয়ে) বসেছে। অনেকটাই খোলামেলা এ হাটে পরিবার ও স্বজন নিয়ে কোরবানির পশু কিনতে গেছেন কেউ কেউ।

উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসলাম রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, হাটে প্রচুর ক্রেতা রয়েছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো। আজ (বুধবার) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। সারা রাত আরও বিক্রি হবে। হাটে এখন ৭০ হাজারের বেশি গরু রয়েছে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পছন দ র হ ট বস এল ক য় এই হ ট এল ক র বনশ র আরও ব গতক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)  দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।

দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।

‎মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, ‎আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ‎কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।

দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ