জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনলাইনে ‘ভাগে’র কোরবানির
Published: 5th, June 2025 GMT
ভাগে কোরবানি দেওয়ার জন্য অংশীদার খুঁজছেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন। তাঁর একার পক্ষে একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু ‘মনমতো’ অংশীদারও খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
ধানমন্ডির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একজন অংশীদার পেলে তাঁর জন্য কোরবানি দেওয়া সহজ হতো, কিন্তু তিনি কাউকে পাচ্ছেন না।
আনোয়ার হোসেনের মতো ঢাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতে যাওয়া অনেকেই এমন সংকটে পড়েছেন। তাঁরা মূলত জীবিকার তাগিদে বা পরিস্থিতির কারণে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছেন না। ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। তাই এখানে কোরবানি দিতে চান তাঁরা।
এর বাইরে অনেকেরই হাটে গিয়ে পশু কেনা, কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত পশু রাখার ব্যবস্থা করা কঠিন অথবা এত ঝক্কি যাঁরা পোহাতে চান না, তাঁরাও অনলাইনে পশুর ফরমাশ দেওয়াসহ পুরো কোরবানির প্রক্রিয়া সারতে চান। তাঁদের জন্যও রয়েছে কোরবানির ‘অনলাইন সেবা’।এ ক্ষেত্রে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনের অংশীদার জোগাড় করে দেওয়ার কাজ করছে। গ্রাহকদের ঘরে বসে কোরবানি আদায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তারা।
এর বাইরে অনেকেরই হাটে গিয়ে পশু কেনা, কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত পশু রাখার ব্যবস্থা করা কঠিন অথবা এত ঝক্কি যাঁরা পোহাতে চান না, তাঁরাও অনলাইনে পশুর ফরমাশ দেওয়াসহ পুরো কোরবানির প্রক্রিয়া সারতে চান। তাঁদের জন্যও রয়েছে কোরবানির ‘অনলাইন সেবা’।
সবারই হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা, নিজেদের উদ্যোগে কোরবানির দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁরা অনলাইনে তাদের পশু পছন্দ করে পেমেন্ট (অর্থ পরিশোধ) দেন। আমরা সব নিয়ম মেনে ফরমাশ অনুযায়ী কোরবানি করা পশুর মাংস গ্রাহকদের সরবরাহ করিবেঙ্গল মিটের সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড এক্সপোর্টের প্রধান এ কে এম ছায়াদুল হক ভূঁইয়াবেঙ্গল মিট ১১ বছর ধরে অনলাইনে ফরমাশ নিয়ে গ্রাহকদের জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করে আসছে। এর বাইরে অনেক অনলাইনেও এবার ভাগে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি দেশের অনেক খামারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে প্রচার চলছে।
গত বছর ৬৫টি গরু ‘ভাগে’ কোরবানির জন্য কেনেন গ্রাহকেরা। প্রতিটি গরুতে ৭ জন অংশীদার হিসাবে মোট ৪৫৫ জন কোরবানি দেন। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৮০টির মতো গরু ভাগে কোরবানির জন্য ফরমাশ পাবে বলে আশা করছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাগে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে জনপ্রিয়তা পায় অনলাইনে পশুর ফরমাশ দিয়ে ঘরে বসে কোরবানি দেওয়া। তখন সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয় ঘরে বসে কোরবানির পশু পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করার। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে এগিয়ে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনলাইনে ‘ভাগে’ কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা।
বেঙ্গল মিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাগে কোরবানি দিলে ঈদের চতুর্থ দিন থেকে মাংস পাবেন গ্রাহকেরা। বেঙ্গল মিটের কাছাকাছি কোনো আউটলেট থেকে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন। গ্রাহকেরা হিমায়িত (ফ্রোজেন) মাংস পান।
এ ছাড়া পুরো পশু কিনে কোরবানি দিলে মাংস সরবরাহ করা শুরু হয় ঈদের পরদিন থেকে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পশু জবাইয়ের পর মাংস সরবরাহ করতে হয় হিমায়িত (ফ্রোজেন) করে। তাই চাইলেও কোরবানির পরপরই সরবরাহ সম্ভব নয়।
বেঙ্গল মিটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর চার শতাধিক গরু কোরবানির জন্য অনলাইনে গ্রাহকদের কাছ থেকে ফরমাশ নেয় তারা। এর মধ্যে গত বছর ৬৫টি গরু ‘ভাগে’ কোরবানির জন্য কেনেন গ্রাহকেরা। প্রতিটি গরুতে ৭ জন অংশীদার হিসাবে মোট ৪৫৫ জন কোরবানি দেন। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৮০টির মতো গরু ভাগে কোরবানির জন্য ফরমাশ পাবে বলে আশা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাগে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।বেঙ্গল মিটের সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড এক্সপোর্টের প্রধান এ কে এম ছায়াদুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবারই হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা, নিজেদের উদ্যোগে কোরবানির দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁরা অনলাইনে তাদের পশু পছন্দ করে পেমেন্ট (অর্থ পরিশোধ) দেন। আমরা সব নিয়ম মেনে ফরমাশ অনুযায়ী কোরবানি করা পশুর মাংস গ্রাহকদের সরবরাহ করি।’
শুধু ঢাকা শহরের গ্রাহকেরা ভাগের কোরবানির জন্য ফরমাশ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন জানিয়ে সায়েদুল হক আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তাঁরা কোরবানির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গরু তাদের খামারে পালন করা। খাবারে সমস্যা নেই। রোগবালাই নেই। ফলে গ্রাহকেরাও থাকেন নিশ্চিন্ত।
বর্তমানে দেশে অনলাইনে ভাগে কোরবানি দেওয়া ছাড়াও অনলাইনে পশু কেনাসহ কসাই পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এ সুবিধা এখনো মূলত শহরকেন্দ্রিক।
আরও পড়ুনঅনলাইনে চলছে কোরবানির হাট০২ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ন র প গ র হকদ র গ র হক র র জন য ক ফরম শ দ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।