নতুন করে আবার আলোচনায় ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব‌্যর্থতার সফর। এই আলোচনায় আসার বড় কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাইরে বেরিয়ে আসা। 

সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব‌্যর্থতার পর বিসিবি এনায়েত হোসেন সিরাজকে প্রধান করে মাহমুব আনাম ও আকরাম খানকে সদস‌্য করে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ তদন্ত কমিটি ১৬ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। যেখানে সাকিব, তামিম, জালাল ইউনুসসহ কোচ, ফিজিও, ক্রিকেটাররা ছিলেন। ব্যর্থতার কারণ খোঁজার সঙ্গে বহুল আলোচিত হাথুরুসিংহে-নাসুমের চড় কাণ্ড-ও তদন্তে উঠে আসে।

সাকিবের একটি অভিযোগ নিয়ে হচ্ছে প্রবল আলোচনা। সাকিব তদন্ত কমিটিকে অভিযোগ করেন, ‘‘ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান (জালাল ইউনুস) এবং তামিম ইকবাল নাসুমকে 'চড় মারার' অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোন করেছিলেন এবং প্রধান কোচের বিরুদ্ধে এটি মিডিয়াতে ফাঁস করেছিলেন যাতে তাকে বরখাস্ত করা যায়।’’

আরো পড়ুন:

তামিম ও জালাল ইউনুসের বিরুদ্ধে হাথুরুসিংহেকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ সাকিবের

সাকিবের সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক ‘শেষ নয়’

সাকিবের এমন অভিযোগ শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ হিসেবেই মূল‌্যায়ন হয়েছে। পরবর্তীতে এর কোনো সতত‌্যা তারা পায়নি। এজন‌্য তাদের প্রতিবেদনে এরকম কিছু উঠে আসেনি। কিন্তু সাকিবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জায়গায় তামিমকে দোষারোপ করা হচ্ছে। যা মোটেও ভালোভাবে নেননি তামিম। এজন‌্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন তামিম।    

তামিম লিখেছেন, ‘‘আমি আপনাদের সঙ্গে কখনো হাত মেলাব না! যারা আমার পেছনে লেগেছেন, আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন আমাকে হাত করার জন্য, সেই মানুষগুলোকে বলছি, আমি কখনও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।’’

“আমি যদি কখনো ক্রিকেট প্রশাসনে আসি, সঠিক পথ ধরেই আসব এবং শুধুমাত্র ক্রিকেটের ভালোর জন্য আসব। প্রয়োজন হলে কখনো ক্রিকেট বোর্ডে আসব না, তবুও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।”
সাকিবের অভিযোগ নিয়ে তামিমের কোনো মন্তব্য নেই। স্রেফ বললেন, ‘‘যারা আমার ভক্ত-সমর্থক ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, তাদের জন্য বলছি, কোনো একজন ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্তে রিপোর্টে অভিযুক্ত হওয়া, দুটির মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ধারণার কথা বলেছেন তদন্ত কমিটিতে। সেটা তার ব্যাপার।’’

তামিমকে ডেকেছিল তদন্ত কমিটি। তবে সেই সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে-নাসুমের চড় সংক্রান্ত কোনো বিষয় এবং তথ্য ফাঁসের বিষয়টি উঠে আসেনি, ‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়নি এবং তথ্য ফাঁস করা সংক্রান্ত কোনো কিছু তারা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেননি। আমি তো তখন দলেই ছিলাম না! তদন্ত কমিটির কাছেও এটা মনে হলে নিশ্চয়ই তারা একবার হলেও সেই প্রসঙ্গ তুলতেন বা জিজ্ঞাসা করতেন! স্বচ্ছতার স্বার্থেই তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার আলোচনার পুরোটাই রেকর্ড করা আছে, তাদের অনুমতি নিয়েই।’’ 

হুট করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এই সময়ে সামনে আসায় তামিমের শঙ্কা ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে, ‘‘কোনো এক ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্ত কমিটির অভিযোগের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান আছে, আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন। এই ব্যাপারটিকে যারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে, তাদেরকে আবারো বলছি, আমাকে কোনোভাবেই আপনাদের কাতারে পাবেন না। আমি হাত মেলাব না।”

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ব আল হ স ন ত ম ম ইকব ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী