রমজান মাসে নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারণায় আপত্তি বিএনপির
Published: 7th, June 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময়সীমা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি। রমজান মাসে নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারণা নিয়ে আপত্তি আছে দলটির। তারা মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বিএনপি বারবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর দলটি এখনো পরবর্তী করণীয় ঠিক করেনি। ঈদের ছুটি শেষে দলীয় ফোরামে এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে বলে
জানান। তাঁর এই ঘোষণার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে বলেও জানান অধ্যাপক ইউনূস। তাঁর এই ঘোষণার পর বিভিন্ন দল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
আরও পড়ুনসংসদ নির্বাচন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন: প্রধান উপদেষ্টা০৬ জুন ২০২৫দলটির নেতারা প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণায় অন্য গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ারও আশঙ্কা করেছেন। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার পর নির্বাচন বিষয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর আমরা সবার (যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দল) সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শেষ হলে রাতেই স্থায়ী কমিটির সভা ডাকে বিএনপি। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করা হয় এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন৯০ শতাংশ দলের দাবি পাশ কাটিয়ে এ সিদ্ধান্ত কি না, প্রশ্ন জাগে: খসরু০৬ জুন ২০২৫এদিকে নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর মতে, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমায় জাতি হতাশ। আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের মতে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস কোনোভাবেই উপযোগী নয়। গতকাল ঈদের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে সময় (এপ্রিল মাস) নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই সময় বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় নয়। এখানে (এপ্রিল মাস) প্রচণ্ড গরম, ঝড়বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে…ওই সময় রোজার পরপরই.
বিএনপি বলছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে আবহাওয়ার সংকট থাকবে। এ ছাড়া রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি০৬ জুন ২০২৫আরও পড়ুননির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় জামায়াতের সন্তোষ প্রকাশ০৬ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড স ম বর ব এনপ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চারটি রপ্তানিনির্ভর খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে সরকার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের রপ্তানি সক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা পর্যালোচনার জন্য ১৫ সদস্যের এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। গত ২৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের মনিটরিং সেল থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাবে। এরপর থেকে রপ্তানিনির্ভর নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি প্রদান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী হয়ে উঠবে। এ প্রেক্ষাপটে বিকল্প কৌশল নির্ধারণে এই চারটি খাতকে বাছাই করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, কৃষি সচিব, বস্ত্র ও পাট সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিএসটিআই মহাপরিচালক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিসিক চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআই সভাপতি। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক।
কমিটির কার্যবিধিতে বলা হয়েছে—
ক) জমাকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ থেকে সরকারের সক্ষমতা বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য সুবিধা নির্ধারণ করা হবে।
খ) এসব সুবিধা প্রদানের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
গ) গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিটি।
ঘ) প্রয়োজন হলে প্রতিবেদন বহির্ভূত নতুন সুপারিশও বাস্তবতা বিবেচনায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে।
ঙ) কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করার এখতিয়ার রাখবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এলডিসি-পরবর্তী বাস্তবতায় টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে, নীতিগত স্থিতিশীলতা ও খাতভিত্তিক প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। এই উদ্যোগকে তারা সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন।
এদিকে, বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা