ঈদের সকালে নতুন পোশাক পরে বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া, নামাজ শেষে সালামি, দুপুরে পোলাও-মাংস; এই চিত্রটাই যেন শিশুদের কাছে ঈদের প্রকৃত রূপ। তবে, পঞ্চগড়ের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর ১৬০ এতিম ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঈদ উদযাপন ছিল কিছুটা আলাদা।

এই শিশুদের বাবা-মা নেই। ঈদ ঘিরে প্রস্তুতি নেই স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ার। তবুও হাসি ফুঁটেছে এই শিশুদের মুখে। ঈদ সালামি, নতুন পোশাক, একসঙ্গে নামাজ ও খাবার- ছিল আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর এতিম শিশুদের ঈদ আনন্দে। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত আহছানিয়া মিশন শিশু নগরী। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১৬০ জন এতিম, পথশিশু ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এখানকার অধিকাংশ শিশুই শৈশবে হারিয়ে যাওয়া বা পরিত্যক্ত, অনেকের বাবা-মা নেই।  

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে ডোবায় পড়ে শিশুর মৃত্যু

বাঘাইছড়িতে গোলাগুলি, শিশু গুলিবিদ্ধ

শনিবার (৭ জুন) ছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে শিশু নগরীর ভেতরেই আয়োজন করা হয় কোরবানির। শিশুদের জন্য কোরবানি দেওয়া হয় একটি গরু। নামাজ শেষে সবাই মিলে বসে পোলাও, মাংস, কোমল পানীয়, হালুয়া আর মিষ্টি খায়। প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় ৩০ টাকা করে ঈদ সালামি। এ কারণে সামান্য হলেও, তাদের মুখে হাসি ফোটে।

রবিবার (৮ জুন) সকালে শিশু নগরীতে গিয়ে কথা হয় ৭ বছর বয়সী পারভেজের সঙ্গে। সে বছর খানেক আগে এই নগরীতে আসে। মা পারভীন বেগম পারভেজকে পরিত্যাগ করলে তার ঠাঁই হয় এখানে। স্বজনহীন পারভেজ এখানেই ঈদের পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করছে। নতুন পোষাক, ভালো খাবার আর ঈদ সালামি- মনে করতে দেয়নি পরিবারের শূন্যতা। 

ঈদ কেমন কাটলো জানতে চাইলে তার অকপটে জবাব, ‍“খুব আনন্দ করেছি।”

পারভেজের বয়সী আকাশ। খুব চঞ্চল প্রকৃতির এই শিশুটিও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সে জানে না তার বাবা-মা কোথায় আছে। শুধু মনে রেখেছে মায়ের নাম শিরিন, বাবার নাম সোয়েল। বা-মার কথা জিজ্ঞেস করতেই থেমে যায় আকাশ। ধীর স্বরে জবাব, “বাবা-মার কাছে থাকলে আনন্দ বেশি হতো।”

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০১৩ সালে এই নগরীতে আসে সুজন ইসলাম। গতবছর পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে।

সুজন বলেন, “আমার বাবা-মা নেই, নিজের কোনো ঠিকানাও জানা নেই। এখন পর্যন্ত এই নগরীই আমার ঠিকানা। প্রতিবছর ঈদ এলে এখানেই আনন্দ করি। সবাই মিলে খাবার খাই, খেলাধুলা করি। ভালোই লাগে।”

এখানে থাকা সুমন রানা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এখানে আছি। এখানেই মানুষ হয়েছি, এবার এসএসসি পাস করেছি। বাড়ি বলতে এখন এই আশ্রয়টাকেই মনে হয়। ঈদের দিন সবাই মিলে আনন্দ করি, তখন আর মন খারাপ থাকে না।”

বিপ্লব বাবু নামের আরেকজন বলে, “আমি এখানে ১০ বছর ধরে আছি। ঈদের দিন বাড়ির কথা মনে পড়ে, মন খারাপ হয়। তবে এখানে সবাই মিলে ঈদ করায় কিছুটা হলেও ভালো লাগে।”

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বলেন, “শিশু নগরীতে শিশুর মানসিক উন্নয়ন ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ঈদ নয়, সারা বছরই আমরা চেষ্টা করি এই শিশুদের পরিবারবিহীন জীবনটা যেন একটু হলেও স্বাভাবিক হয়। ঈদে কোরবানি, নতুন জামা আর সালামি দিয়ে আমরা ওদের আনন্দটা ভাগাভাগি করি।”

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, “দেশের বিভিন্ন বস্তি, রেল স্টেশন এবং পুলিশ স্টেশনে যেসব হারানো শিশু মানুষ জমা দেয় তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসি। তাদের আমাদের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ভর্তি করে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক যে চাহিদাগুলো রয়েছে তা পূরণ করে ১৮ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেই। ঢাকা আহছানিয়া মিশন হেড অফিস থেকে সমস্ত শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা হয়।” 

তিনি বলেন, “পরিবারে শিশুরা যেভাবে বেড়ে ওঠে, ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদের বড় করে তোলার চেষ্টা করি।”

এই শিশু নগরীটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে শিশুদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এখান থেকে অংশ নিয়েছিল ১২ জন শিক্ষার্থী। আগের দুই বছরেও অংশ নিয়েছিল ৬ জন করে শিক্ষার্থী। 

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব সব ই ম ল আহছ ন য় এই শ শ পর ব র নগর ত আনন দ নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভর্তির দরকারি তারিখ—

১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।

২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।

৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।

ভর্তির যোগ্যতা—

১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd

ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —

১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।

২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—

১. দুই কপি ছবি।

২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।

ভর্তি ও অন্যান্য ফি—

অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,

রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,

কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,

ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,

পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,

প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,

মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।

বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।

২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।

# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি