মায়া-মমতাহীন জীবনেও ঈদ আনন্দ পেল শিশুরা
Published: 8th, June 2025 GMT
ঈদের সকালে নতুন পোশাক পরে বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া, নামাজ শেষে সালামি, দুপুরে পোলাও-মাংস; এই চিত্রটাই যেন শিশুদের কাছে ঈদের প্রকৃত রূপ। তবে, পঞ্চগড়ের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর ১৬০ এতিম ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঈদ উদযাপন ছিল কিছুটা আলাদা।
এই শিশুদের বাবা-মা নেই। ঈদ ঘিরে প্রস্তুতি নেই স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ার। তবুও হাসি ফুঁটেছে এই শিশুদের মুখে। ঈদ সালামি, নতুন পোশাক, একসঙ্গে নামাজ ও খাবার- ছিল আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর এতিম শিশুদের ঈদ আনন্দে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত আহছানিয়া মিশন শিশু নগরী। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১৬০ জন এতিম, পথশিশু ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এখানকার অধিকাংশ শিশুই শৈশবে হারিয়ে যাওয়া বা পরিত্যক্ত, অনেকের বাবা-মা নেই।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডোবায় পড়ে শিশুর মৃত্যু
বাঘাইছড়িতে গোলাগুলি, শিশু গুলিবিদ্ধ
শনিবার (৭ জুন) ছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে শিশু নগরীর ভেতরেই আয়োজন করা হয় কোরবানির। শিশুদের জন্য কোরবানি দেওয়া হয় একটি গরু। নামাজ শেষে সবাই মিলে বসে পোলাও, মাংস, কোমল পানীয়, হালুয়া আর মিষ্টি খায়। প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় ৩০ টাকা করে ঈদ সালামি। এ কারণে সামান্য হলেও, তাদের মুখে হাসি ফোটে।
রবিবার (৮ জুন) সকালে শিশু নগরীতে গিয়ে কথা হয় ৭ বছর বয়সী পারভেজের সঙ্গে। সে বছর খানেক আগে এই নগরীতে আসে। মা পারভীন বেগম পারভেজকে পরিত্যাগ করলে তার ঠাঁই হয় এখানে। স্বজনহীন পারভেজ এখানেই ঈদের পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করছে। নতুন পোষাক, ভালো খাবার আর ঈদ সালামি- মনে করতে দেয়নি পরিবারের শূন্যতা।
ঈদ কেমন কাটলো জানতে চাইলে তার অকপটে জবাব, “খুব আনন্দ করেছি।”
পারভেজের বয়সী আকাশ। খুব চঞ্চল প্রকৃতির এই শিশুটিও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সে জানে না তার বাবা-মা কোথায় আছে। শুধু মনে রেখেছে মায়ের নাম শিরিন, বাবার নাম সোয়েল। বা-মার কথা জিজ্ঞেস করতেই থেমে যায় আকাশ। ধীর স্বরে জবাব, “বাবা-মার কাছে থাকলে আনন্দ বেশি হতো।”
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০১৩ সালে এই নগরীতে আসে সুজন ইসলাম। গতবছর পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে।
সুজন বলেন, “আমার বাবা-মা নেই, নিজের কোনো ঠিকানাও জানা নেই। এখন পর্যন্ত এই নগরীই আমার ঠিকানা। প্রতিবছর ঈদ এলে এখানেই আনন্দ করি। সবাই মিলে খাবার খাই, খেলাধুলা করি। ভালোই লাগে।”
এখানে থাকা সুমন রানা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এখানে আছি। এখানেই মানুষ হয়েছি, এবার এসএসসি পাস করেছি। বাড়ি বলতে এখন এই আশ্রয়টাকেই মনে হয়। ঈদের দিন সবাই মিলে আনন্দ করি, তখন আর মন খারাপ থাকে না।”
বিপ্লব বাবু নামের আরেকজন বলে, “আমি এখানে ১০ বছর ধরে আছি। ঈদের দিন বাড়ির কথা মনে পড়ে, মন খারাপ হয়। তবে এখানে সবাই মিলে ঈদ করায় কিছুটা হলেও ভালো লাগে।”
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বলেন, “শিশু নগরীতে শিশুর মানসিক উন্নয়ন ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ঈদ নয়, সারা বছরই আমরা চেষ্টা করি এই শিশুদের পরিবারবিহীন জীবনটা যেন একটু হলেও স্বাভাবিক হয়। ঈদে কোরবানি, নতুন জামা আর সালামি দিয়ে আমরা ওদের আনন্দটা ভাগাভাগি করি।”
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, “দেশের বিভিন্ন বস্তি, রেল স্টেশন এবং পুলিশ স্টেশনে যেসব হারানো শিশু মানুষ জমা দেয় তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসি। তাদের আমাদের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ভর্তি করে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক যে চাহিদাগুলো রয়েছে তা পূরণ করে ১৮ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেই। ঢাকা আহছানিয়া মিশন হেড অফিস থেকে সমস্ত শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা হয়।”
তিনি বলেন, “পরিবারে শিশুরা যেভাবে বেড়ে ওঠে, ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদের বড় করে তোলার চেষ্টা করি।”
এই শিশু নগরীটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে শিশুদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এখান থেকে অংশ নিয়েছিল ১২ জন শিক্ষার্থী। আগের দুই বছরেও অংশ নিয়েছিল ৬ জন করে শিক্ষার্থী।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব সব ই ম ল আহছ ন য় এই শ শ পর ব র নগর ত আনন দ নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
মায়া-মমতাহীন জীবনেও ঈদ আনন্দ পেল শিশুরা
ঈদের সকালে নতুন পোশাক পরে বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া, নামাজ শেষে সালামি, দুপুরে পোলাও-মাংস; এই চিত্রটাই যেন শিশুদের কাছে ঈদের প্রকৃত রূপ। তবে, পঞ্চগড়ের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর ১৬০ এতিম ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঈদ উদযাপন ছিল কিছুটা আলাদা।
এই শিশুদের বাবা-মা নেই। ঈদ ঘিরে প্রস্তুতি নেই স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ার। তবুও হাসি ফুঁটেছে এই শিশুদের মুখে। ঈদ সালামি, নতুন পোশাক, একসঙ্গে নামাজ ও খাবার- ছিল আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর এতিম শিশুদের ঈদ আনন্দে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত আহছানিয়া মিশন শিশু নগরী। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১৬০ জন এতিম, পথশিশু ও পরিবারবিচ্ছিন্ন শিশুর ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এখানকার অধিকাংশ শিশুই শৈশবে হারিয়ে যাওয়া বা পরিত্যক্ত, অনেকের বাবা-মা নেই।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডোবায় পড়ে শিশুর মৃত্যু
বাঘাইছড়িতে গোলাগুলি, শিশু গুলিবিদ্ধ
শনিবার (৭ জুন) ছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে শিশু নগরীর ভেতরেই আয়োজন করা হয় কোরবানির। শিশুদের জন্য কোরবানি দেওয়া হয় একটি গরু। নামাজ শেষে সবাই মিলে বসে পোলাও, মাংস, কোমল পানীয়, হালুয়া আর মিষ্টি খায়। প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় ৩০ টাকা করে ঈদ সালামি। এ কারণে সামান্য হলেও, তাদের মুখে হাসি ফোটে।
রবিবার (৮ জুন) সকালে শিশু নগরীতে গিয়ে কথা হয় ৭ বছর বয়সী পারভেজের সঙ্গে। সে বছর খানেক আগে এই নগরীতে আসে। মা পারভীন বেগম পারভেজকে পরিত্যাগ করলে তার ঠাঁই হয় এখানে। স্বজনহীন পারভেজ এখানেই ঈদের পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করছে। নতুন পোষাক, ভালো খাবার আর ঈদ সালামি- মনে করতে দেয়নি পরিবারের শূন্যতা।
ঈদ কেমন কাটলো জানতে চাইলে তার অকপটে জবাব, “খুব আনন্দ করেছি।”
পারভেজের বয়সী আকাশ। খুব চঞ্চল প্রকৃতির এই শিশুটিও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সে জানে না তার বাবা-মা কোথায় আছে। শুধু মনে রেখেছে মায়ের নাম শিরিন, বাবার নাম সোয়েল। বা-মার কথা জিজ্ঞেস করতেই থেমে যায় আকাশ। ধীর স্বরে জবাব, “বাবা-মার কাছে থাকলে আনন্দ বেশি হতো।”
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ২০১৩ সালে এই নগরীতে আসে সুজন ইসলাম। গতবছর পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে।
সুজন বলেন, “আমার বাবা-মা নেই, নিজের কোনো ঠিকানাও জানা নেই। এখন পর্যন্ত এই নগরীই আমার ঠিকানা। প্রতিবছর ঈদ এলে এখানেই আনন্দ করি। সবাই মিলে খাবার খাই, খেলাধুলা করি। ভালোই লাগে।”
এখানে থাকা সুমন রানা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এখানে আছি। এখানেই মানুষ হয়েছি, এবার এসএসসি পাস করেছি। বাড়ি বলতে এখন এই আশ্রয়টাকেই মনে হয়। ঈদের দিন সবাই মিলে আনন্দ করি, তখন আর মন খারাপ থাকে না।”
বিপ্লব বাবু নামের আরেকজন বলে, “আমি এখানে ১০ বছর ধরে আছি। ঈদের দিন বাড়ির কথা মনে পড়ে, মন খারাপ হয়। তবে এখানে সবাই মিলে ঈদ করায় কিছুটা হলেও ভালো লাগে।”
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বলেন, “শিশু নগরীতে শিশুর মানসিক উন্নয়ন ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ঈদ নয়, সারা বছরই আমরা চেষ্টা করি এই শিশুদের পরিবারবিহীন জীবনটা যেন একটু হলেও স্বাভাবিক হয়। ঈদে কোরবানি, নতুন জামা আর সালামি দিয়ে আমরা ওদের আনন্দটা ভাগাভাগি করি।”
আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, “দেশের বিভিন্ন বস্তি, রেল স্টেশন এবং পুলিশ স্টেশনে যেসব হারানো শিশু মানুষ জমা দেয় তাদের আমরা এখানে নিয়ে আসি। তাদের আমাদের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ভর্তি করে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক যে চাহিদাগুলো রয়েছে তা পূরণ করে ১৮ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেই। ঢাকা আহছানিয়া মিশন হেড অফিস থেকে সমস্ত শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা হয়।”
তিনি বলেন, “পরিবারে শিশুরা যেভাবে বেড়ে ওঠে, ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদের বড় করে তোলার চেষ্টা করি।”
এই শিশু নগরীটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে শিশুদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এখান থেকে অংশ নিয়েছিল ১২ জন শিক্ষার্থী। আগের দুই বছরেও অংশ নিয়েছিল ৬ জন করে শিক্ষার্থী।
ঢাকা/মাসুদ