ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবার বেড়ে গেছে। গত মার্চ মাসে হঠাৎ মানুষের হাতে ও ঘরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চে পালিত হয় পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর। এ ছাড়া ওই মাসে কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন গুজব ছিল বাজারে। এ জন্য মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা কমে দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকায়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। এরপর সর্বশেষ গত মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু মার্চেই ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।

অবশ্য এ সময় ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) ও বাজারে প্রচলিত টাকাও (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। অবশ্য মার্চে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণও বেড়ে যায়। জানুয়ারিতে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকায়। আর মার্চে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্চে রোজার মাস থাকায় নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। আবার মার্চে বেশ কিছু ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ খবরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নেন আমানতকারীরা। ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কিছু ব্যাংককে টাকা ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে বাজারে ছাপানো টাকার পরিমাণও বেড়ে যায়।

ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে সেটির কার্যকারিতা কম। নানামুখী সংকট মোকাবিলায় টাকা ছাপাতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এই টাকা ধারও দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত ব্যাংক থেকে ধারাবাহিক নগদ টাকা মানুষের হাতে বাড়ছিল। কারণ, তখন কয়েকটি ব্যাংক থেকে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে টাকা বের করে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগসমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা–ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এ জন্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকও টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে দেয়। এতে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে। সরকার বদলের পর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ। অক্টোবরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকায়।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিল। আবার দীর্ঘ সময় সুদহার ৯ শতাংশে আটকে রাখার কারণেও কমে গিয়েছিল আমানতের সুদও। তাতে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমার রাখার ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। এতে ব্যাংকগুলোয় দেখা দেয় চরম তারল্যসংকট। এমন অবস্থায় সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ শুরু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া ও কমাটা নিয়মিত ঘটনা। নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন গ্রাহকেরা। তবে আতঙ্কিত হয়ে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটলে সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। কারণ, ব্যাংক টিকে থাকে আস্থার ওপর।

এদিকে নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক মিলে একটি বড় ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এই ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে মূলধন জোগান দেবে সরকার। ব্যাংকটির প্রধান কাজ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) অর্থায়ন করা। এই ব্যাংকের অনুমোদন (লাইসেন্স) দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অধীন সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংকের আমানত ও সম্পদ স্থানান্তর করা হবে। এই প্রক্রিয়া ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ব্যাংক একীভূত হলেও গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না। তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকটির গ্রাহক হবেন। এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায় ব্যতীত অন্য ব্যাংকাররা একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন।

যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানায়  রয়েছেন আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার। বাকি চার ব্যাংকের মালিকানা এস আলম গ্রুপের হাতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগদ ট ক র পর ম ণ র পর ম ণ ব ড় এক ভ ত সরক র আওয় ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদার দাবিতে পিটিয়ে হত্যা, দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদার দাবিতে সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোমিনুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাপ্পু (৪০) ও তার ভাই শুক্কুর (৩৭)। তারা উভয় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে।

আরো পড়ুন:

ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি, মামলার অনুমোদন

ফেনীতে ছাত্র হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, ‘‘সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের তদারকি করতেন সিরাজুল ইসলাম। সে সময় শুক্কুর ও তার ভাই পাপ্পুসহ কয়েকজন সিরাজুলের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।’’

ঢাকা/অনিক/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ