যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’
Published: 12th, June 2025 GMT
পুরো মঞ্চজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা। যুদ্ধের পোশাক পরা অস্ত্র হাতে সৈনিকদের যুদ্ধমহড়া। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয়েছে নাটক ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। এরিখ মারিয়া রেমার্কের কালজয়ী উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন রুনা কাঞ্চন, আর নির্দেশক বাকার বকুল। নাটক প্রযোজনা করেছে তাড়ুয়া।
আমরা একটি যুদ্ধবিরোধী পৃথিবী চেয়েছিলাম। হানাহানিমুক্ত দেশ চেয়েছিলাম। আমাদের চাওয়াকে অবজ্ঞা করেছেন বিশ্বনেতারা। তারা দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছেন। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, চীন, ভারত, উত্তর আমেরিকা মিলে বিশাল ভূখ- নিয়ে পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে এরিখ মারিয়া রেমার্ক লিখলেন উপন্যাস ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। উপন্যাসের বর্ণনা থেকে যুদ্ধের সেই নির্মমতা, ভয়াবহতা আর বীভৎসতা অত্যন্ত নিপুণভাবে উঠে এসেছে এই নাটকে। যেখানে সৈনিকরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করে, যুদ্ধটা আসলে কেন বাঁধে, কারা বাঁধিয়ে রাখে! প্রতিপক্ষ দেশের কেউতো তাদের ক্ষতি করেনি, তাহলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়া এই যুদ্ধ আসলে কাদের স্বার্থে!
আমাদের মঞ্চে বিশাল ক্যানভাসের নাটক খুব বেশি মঞ্চায়ন হতে দেখা যায় না। বিশাল ক্যানভাসে বানানো অল্প কতক নাটকের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। যেখানে সেট, লাইট, সাউন্ড, মিউজিক, কম্পোজিশন আর কোরিওগ্রাফি নাটককে নিয়ে গেছে বিশালতায় অনন্য মাত্রায়। নাটকের মেজাজ আর যুদ্ধের আবহ তৈরিতে যার প্রয়োজন ছিল এবং তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে নির্দেশকের পুরো মুনশিয়ানার ছাপ আছে।
সবচেয়ে চমৎকার ও মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে অভিনয়। নাটকে একক অভিনয়ের সুযোগ তেমন নেই। আবার সবাই মিলে এক। এটা ছিল টিমওয়ার্ক। এই যে কোরাস পারফরম্যান্স, এখানে কোনো একজন তাল হারিয়ে ফেললে পুরো টিম ছন্দহারা হয়ে পড়বে। তরুণ অভিনেতারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ কাজটুকু ঠিকঠাকমতো করে দলীয় অভিনয়কে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। এতে তাদের থিয়েটারের প্রতি কমিটমেন্ট প্রকাশ পেয়েছে।
অলঙ্কার শাস্ত্রমতে, অভিনয় সম্পন্ন হয় চার প্রকৃতির মিশেলে। আঙ্গিক, শারীরিক ভঙ্গি। বাচিক, কণ্ঠস্বরের ব্যবহার। সাত্ত্বিক, মনকে অভিনয়ে অন্তর্ভুক্ত করা আর আহার্য, অভিনয়ে সেট, লাইট, প্রপস ইত্যাদিকে ব্যবহার করা। নাটকে অভিনয়ের এই চার প্রকারকে নির্দেশক দুর্দান্তভাবে কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে আঙ্গিক অভিনয় ছিল অসাধারণ। তারপর আসতে হয়েছে সাত্ত্বিক অভিনয়ে। যেখানে আবেগকে ব্যবহার করতে হয়েছে নাটকের অন্তর্নিহিত মানসিক পরিস্থিতি বুঝার জন্য।
দেশের জন্য ছাত্রদের জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করলেন শিক্ষক। বললেন, জন্মভূমির জন্য জীবন দেওয়ার চেয়ে মহত্তম কিছু নেই। সবাই যুদ্ধে যেতে চায় না। পল বাউমার প্রজাপতি ভালোবাসে, সে লেখক হতে চায়।
কেমোরিখ হতে চায় ফরেস্ট অফিসার। বেন, মুলার আর আলবার্টেরও আছে নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন। যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঁচ বন্ধু শিহরিত হয়ে উঠল যুদ্ধের রোমান্টিসিজমে। মুভিতে দেখা অসম সাহসী বীর সৈনিকের মতো ঘোড়া ছুটিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার স্বপ্ন দেখে তারা। তাদের অতিআবেগীয় স্বপ্ন ধাক্কা খায় যুদ্ধ শুরুর আগেই। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যখন বলা হয়, স্যালুট দাও, লাফ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও, প্যারেড করো, গোড়ালি ক্লিক কর, অপমান কর অন্যকে।
একদিন প্রশিক্ষণ শেষ হয়। দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে তারা উপস্থিত হয় যুদ্ধফ্রন্টে। কিন্তু কল্পনায় ভাবা যুদ্ধের সঙ্গে বাস্তবের যুদ্ধ মেলে না! তারা দেখে নৃশংস আর হিংস্রতায় ব্যক্তি এখানে মৃত্যুর জন্য তৈরি হওয়া শুধুই এক টুকরো মাংসপিণ্ড। যুদ্ধের প্রথম দিনেই বেনের মৃত্যু বীভৎস নির্মমতায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কাতর চিৎকার দিয়ে আলবার্ট বলে ‘অন্তত ওর জন্য একটা কফিন জোগাড় কর, ওকে যেন ইঁদুরে না খায়’।
যুদ্ধহীন পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষার এক অসামান্য নাট্য উপস্থাপন তাড়ুয়া’র ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দৌলতদিয়া ঘাটে বেড়েছে ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। শুক্রবার দুপুর থেকে কর্মস্থল ফেরা মানুষের চাপ শুরু হয় দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে। সময় বাড়ার সাথে সাথে বিকেল নাগাদ যাত্রীদের ঢল নামে দৌলতদিয়া ঘাটে। মানুষের বাড়তি চাপ থাকলেও নেই কোনো ভোগান্তি।
শুক্রবার বিকেলে ফেরি ও লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী হয়রানি বন্ধে ঘাট এলাকায় কাজ করছে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এছাড়াও রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় ঢাকাগামী যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে উঠে যেতে পাড়ছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার মো. নাসির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীর চাপ কমেছে। এ বছর নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় ঘাটে এক মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার মিলন মিয়া বলেন, কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ সামাল দিতে এই নৌরুটে মোট ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। কোনো লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বা বাড়তি ভাড়া নেওয়া না হয়; সেজন্য জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা তদারকি করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে তিনটি ঘাট সচল আছে। ছুটি শেষের দিক হওয়ায় যাত্রীর চাপও বেড়েছে। তবে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া যাত্রী-সাধারণকে পারাপার করা সম্ভব হচ্ছে।