পুরো মঞ্চজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা। যুদ্ধের পোশাক পরা অস্ত্র হাতে সৈনিকদের যুদ্ধমহড়া। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয়েছে নাটক ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। এরিখ মারিয়া রেমার্কের কালজয়ী উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন রুনা কাঞ্চন, আর নির্দেশক বাকার বকুল। নাটক প্রযোজনা করেছে তাড়ুয়া।

আমরা একটি যুদ্ধবিরোধী পৃথিবী চেয়েছিলাম। হানাহানিমুক্ত দেশ চেয়েছিলাম। আমাদের চাওয়াকে অবজ্ঞা করেছেন বিশ্বনেতারা। তারা দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছেন। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, চীন, ভারত, উত্তর আমেরিকা মিলে বিশাল ভূখ- নিয়ে পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে এরিখ মারিয়া রেমার্ক লিখলেন উপন্যাস ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। উপন্যাসের বর্ণনা থেকে যুদ্ধের সেই নির্মমতা, ভয়াবহতা আর বীভৎসতা অত্যন্ত নিপুণভাবে উঠে এসেছে এই নাটকে। যেখানে সৈনিকরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করে, যুদ্ধটা আসলে কেন বাঁধে, কারা বাঁধিয়ে রাখে! প্রতিপক্ষ দেশের কেউতো তাদের ক্ষতি করেনি, তাহলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়া এই যুদ্ধ আসলে কাদের স্বার্থে!

আমাদের মঞ্চে বিশাল ক্যানভাসের নাটক খুব বেশি মঞ্চায়ন হতে দেখা যায় না। বিশাল ক্যানভাসে বানানো অল্প কতক নাটকের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। যেখানে সেট, লাইট, সাউন্ড, মিউজিক, কম্পোজিশন আর কোরিওগ্রাফি নাটককে নিয়ে গেছে বিশালতায় অনন্য মাত্রায়। নাটকের মেজাজ আর যুদ্ধের আবহ তৈরিতে যার প্রয়োজন ছিল এবং তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে নির্দেশকের পুরো মুনশিয়ানার ছাপ আছে।

সবচেয়ে চমৎকার ও মুগ্ধ হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে অভিনয়। নাটকে একক অভিনয়ের সুযোগ তেমন নেই। আবার সবাই মিলে এক। এটা ছিল টিমওয়ার্ক। এই যে কোরাস পারফরম্যান্স, এখানে কোনো একজন তাল হারিয়ে ফেললে পুরো টিম ছন্দহারা হয়ে পড়বে। তরুণ অভিনেতারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ কাজটুকু ঠিকঠাকমতো করে দলীয় অভিনয়কে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। এতে তাদের থিয়েটারের প্রতি কমিটমেন্ট প্রকাশ পেয়েছে।

অলঙ্কার শাস্ত্রমতে, অভিনয় সম্পন্ন হয় চার প্রকৃতির মিশেলে। আঙ্গিক, শারীরিক ভঙ্গি। বাচিক, কণ্ঠস্বরের ব্যবহার। সাত্ত্বিক, মনকে অভিনয়ে অন্তর্ভুক্ত করা আর আহার্য, অভিনয়ে সেট, লাইট, প্রপস ইত্যাদিকে ব্যবহার করা। নাটকে অভিনয়ের এই চার প্রকারকে নির্দেশক দুর্দান্তভাবে কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে আঙ্গিক অভিনয় ছিল অসাধারণ। তারপর আসতে হয়েছে সাত্ত্বিক অভিনয়ে। যেখানে আবেগকে ব্যবহার করতে হয়েছে নাটকের অন্তর্নিহিত মানসিক পরিস্থিতি বুঝার জন্য।

দেশের জন্য ছাত্রদের জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করলেন শিক্ষক। বললেন, জন্মভূমির জন্য জীবন দেওয়ার চেয়ে মহত্তম কিছু নেই। সবাই যুদ্ধে যেতে চায় না। পল বাউমার প্রজাপতি ভালোবাসে, সে লেখক হতে চায়। 
কেমোরিখ হতে চায় ফরেস্ট অফিসার। বেন, মুলার আর আলবার্টেরও আছে নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন। যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঁচ বন্ধু শিহরিত হয়ে উঠল যুদ্ধের রোমান্টিসিজমে। মুভিতে দেখা অসম সাহসী বীর সৈনিকের মতো ঘোড়া ছুটিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার স্বপ্ন দেখে তারা। তাদের অতিআবেগীয় স্বপ্ন ধাক্কা খায় যুদ্ধ শুরুর আগেই। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যখন বলা হয়, স্যালুট দাও, লাফ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও, প্যারেড করো, গোড়ালি ক্লিক কর, অপমান কর অন্যকে।

একদিন প্রশিক্ষণ শেষ হয়। দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে তারা উপস্থিত হয় যুদ্ধফ্রন্টে। কিন্তু কল্পনায় ভাবা যুদ্ধের সঙ্গে বাস্তবের যুদ্ধ মেলে না! তারা দেখে নৃশংস আর হিংস্রতায় ব্যক্তি এখানে মৃত্যুর জন্য তৈরি হওয়া শুধুই এক টুকরো মাংসপিণ্ড। যুদ্ধের প্রথম দিনেই বেনের মৃত্যু বীভৎস নির্মমতায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কাতর চিৎকার দিয়ে আলবার্ট বলে ‘অন্তত ওর জন্য একটা কফিন জোগাড় কর, ওকে যেন ইঁদুরে না খায়’।

যুদ্ধহীন পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষার এক অসামান্য নাট্য উপস্থাপন তাড়ুয়া’র ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ