দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 13th, June 2025 GMT
দিনাজপুরে বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ শিশুসহ ১৫ জন জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের অচিন্তপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
বিজিবির ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ বি এম জাহিদুল করিম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাহিদুল করিম জানান, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে অচিন্তপুর সীমান্তের ২৮৫ নম্বর সীমানা পিলার এলাকায় হঠাৎ আলো নিভিয়ে দেয় বিএসএফ। এ সময় সেখানে বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলে ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেন। পরে বিজিবি ২৯ ফুলবাড়ী ব্যাটালিয়নের আওতায় অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। আটক ১৫ জনের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ, বাকিরা শিশু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সবাই নড়াইলের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর কয়েকজনের কাছ থেকে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও নগদ অর্থ কেড়ে নেন বিএসএফ সদস্যরা।
বিজিবি জানায়, ওই ১৫ জন বর্তমানে অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাঁদের বিষয়ে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট ও ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে ৮৬ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সিলেটের জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁদের আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। বিজিবির সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ২১০ জনকে পুশ–ইন করেছে ভারত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
ময়মনসিংহ শহরে এক নারী যাত্রীকে নিয়ে অটোরিকশায় গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন চালক জাকির হোসেন। বাড়েরা পুল আকন্দবাড়ী রোডসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে চালককে হঠাৎ থামতে বলেন তিনি। এ সময় একটি বাড়ি দেখিয়ে জাকিরকে ৫০০ টাকার নোট দেন ওই নারী। তাঁকে বাড়িটির ভেতরে গিয়ে এই টাকা কেয়ারটেকারকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির বাড়িটিতে গিয়ে কাউকেই পাননি। পরে সড়কে ফিরে দেখেন, তাঁর অটোরিকশাটি নেই।
২২ জুলাই ঘটনাটির দৃশ্য ধরা পড়ে একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। পরে চক্রটির ৪ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। সংস্থাটি জানায়, প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে অটোরিকশা চুরি করত চক্রটি। আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ শহরে র্যাব-১৪–এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক নয়মুল হাসান।
আটক ব্যক্তিরা হলেন শাহিদ (৩০), রেহেনা আক্তার ওরফে সাদিয়া (৩৫), মোস্তফা (৬২) ও মোস্তফা মিয়া (৩৯)। এদের মধ্যে শাহিদ ঢাকা, সাদিয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মোস্তফা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও মোস্তফা মিয়া তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল রোববার রাতে গৌরীপুর ও তারাকান্দায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি গ্রামের জাকির হোসেন ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের দাপুনিয়া বাজার থেকে বাড়েরার পুল এলাকায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশাটি ভাড়া করেন মোস্তফা। মোস্তফা জানান, তাঁর ম্যাডাম গাড়িটি করে সেখানে যাবেন। রেহেনা নামের ওই যাত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোরিকশাটি থামাতে বলেছিলেন। এরপর জাকিরকে ৫০০ টাকা দিয়ে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মোস্তফাকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির টাকা নিয়ে বাড়িটিতে গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও সারা পাননি। পরে ঘটনাস্থলে ফিরে এসে দেখেন, ওই নারীসহ তাঁর অটোরিকশাটি উধাও।
বিষয়টি নিয়ে পরদিন গত বুধবার র্যাব-১৪ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জাকির হোসেন। র্যাব ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখে, ঘটনাস্থলে অটোরিকশাটি থামার পর চালক সেখান থেকে পেছনের দিকে যেতে থাকেন। এর মধ্যে চক্রটির এক সদস্য অটোরিকশার কাছে অবস্থান নেন। সুযোগ বুঝে যানবাহনটি নিয়ে সটকে পড়েন। পরে ওই নারী অটোরিকশা থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে যান। এর মধ্যেই সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার গিয়ে ওই নারীর সামনে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই সেটিতে উঠে পড়েন তিনি।
র্যাব-১৪ জানায়, চক্রটি ৯ মাস ধরে কৌশলে অটোরিকশা চুরি করছিল। ওই চক্রের প্রধান প্রাইভেট কারের চালক শাহিদ। তাঁরা রাজধানীর পুরান ঢাকা, বনানী, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চুরি করেছেন। ময়মনসিংহে গিয়েও প্রাইভেট কার দিয়ে অটোরিকশা চুরি করে তারাকান্দার মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করতেন। মোস্তফা মিয়া অটোরিকশাটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন।
র্যাব আরও জানায়, জাকির হোসেনের অটোরিকশাটি ৫২ হাজার টাকায় মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন চক্রটির সদস্যরা। সেটির যন্ত্রাংশ আলাদা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন মোস্তফা মিয়া। এ কারণে অটোরিকশাটি উদ্ধার করা যায়নি। এ চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন সদস্য জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।