প্রায় ১০ বছর আগে উদ্ভিদবিষয়ক একটি ফিল্ডগাইডের রসদপত্র সংগ্রহে বনবাদাড়, পার্ক-উদ্যানগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছি বারবার। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখি কোনো একটি গাছের ফুলের ছবি আছে, পাতার ছবি নেই। আবার ফুল ও পাতার ছবি আছে তো ফলের ছবি নেই। এই যখন অবস্থা, তখন আবার ক্যামেরা নিয়ে ছুট। হাতের কাছে রমনা পার্ক। সেখানে যা নেই তার জন্য ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনই ভরসা।
এই ছোটাছুটির মধ্যেই একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে চেনা হলো সিন্দুর বা সিঁদুরগাছটি। ফুল বা পাতায় এমন কোনো ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য নেই যে বিশেষভাবে মনে রাখা যাবে। তখন গাছে ফুল থাকলেও ফল ছিল না। কয়েক বছর পর ফলের দেখা পেলাম গাজীপুরের ‘আরণ্যক’ বাগানবাড়িতে। ফলটির রং দেখে গাছের নামকরণ যথার্থ মনে হলো। ফলের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় এই গাছ আঞ্চলিকভাবে সিন্দুরী, কামালাগুলি, কামেলা, কামিলা, কমলা, রাইনি, রুহিনি, কিংগুর, পুনাগ, তুং ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম কামালা ডাই ট্রি, কামালা ট্রি, মাঙ্কি ফেস ট্রি বা রেড বেরি ইত্যাদি।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও আরণ্যক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিতি গ্রন্থে সিঁদুরকে সংকটাপন্ন বৃক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সিঁদুর আমাদের বন-পাহাড়ের নিজস্ব উদ্ভিদ। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের মিশ্র চিরসবুজ বনাঞ্চলে এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরের পাতাঝরা শালবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সিন্দুরগাছ এখন নিজ আবাসেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। বন উজাড় এবং অপরিকল্পিতভাবে গাছ আহরণের কারণে সিন্দুরগাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
সিন্দুর (Mallotus philippensis) ছোট বা মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হতে পারে। পাতা সরল, বোঁটা ২ থেকে ৬ সেন্টিমিটার, পত্রফলক আয়তাকার, কিনারা মসৃণ এবং আগা সুচালো। বছরজুড়ে ছোট আকৃতির পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল হলুদ বর্ণের। স্ত্রী ফুল লাল বর্ণের, থাকে গুচ্ছাকারে। ফলের মৌসুমও প্রায় বর্ষব্যাপ্ত। গুচ্ছবদ্ধ ফলগুলো লম্বায় ৮ থেকে ১০ মিলিমিটার ও চওড়ায় ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার। পরিপক্ব ফলের রং উজ্জ্বল লাল। প্রতিটি ফলে বীজের সংখ্যা ৩। বীজ গোলাকার, মসৃণ এবং কালো।
এ গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে, যন্ত্রপাতির হাতল তৈরিতে এবং কাগজের মণ্ড বানাতে ব্যবহার্য। ফল কৃমিনাশক এবং খাওয়ার উপযোগী। বাকল ও পাতা চর্মরোগে উপকারী। পাপুয়া নিউগিনির আদিবাসীরা এ গাছের পাতার ক্বাথ উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। মিয়ানমারে বীজের লেই ক্ষতস্থানে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। পাকা ফলের খোসা থেকে লাল রঙের পাউডার সংগ্রহ করা হয়। রঙিন এ পাউডার পশমি কাপড়, সাবান, তেল, আইসক্রিম এবং যেকোনো পানীয় রাঙাতে ব্যবহার করা হয়। বাকলের ক্বাথ তলপেটের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে। শিকড় থেকে তৈরি হয় লাল রং, বাকল রশি বানানোর কাজে এবং বীজ তৈলচিত্র ও বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়। বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা নিরাময়ে মধুর সঙ্গে পাতা, ফল ও শিকড় ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ ভারতের আন্দামান দ্বীপ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, চীন, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়
পাওয়া যায়।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫