নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য আড়ত কেবি বাজার। সাগরে প্রায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ভৈরবতীরের এ মাছ বাজার।
সাগরে মাছ আহরণ শেষে শুক্রবার ভোরে কেবি বাজার ঘাটে দুটি ট্রলার ভেড়ে। তবে মাছের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে সাগর থেকে এই প্রথম দুটি ট্রলার এসেছে। তবে এসব ট্রলারে মাছের পরিমান খুবই কম। ফলে দাম অনেক বেশি।
জেলে রুহুল জানান, তাদের ট্রলার সাগরে যাওয়ার পরে মাত্র কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছেন। এতে অল্প কিছু ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ পেয়েছেন। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
শুক্রবার বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আধা কেজি থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া রূপচাঁদা আকার ভেদে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কঙ্কন, তুলারডাটি, ঢেলা চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়াল জাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ একশ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাগর থেকে বেশি করে ট্রলারের আগমন ও মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি বাজারে আসেননি। অনেক দিন পরে আজই বাজারে এসেছেন, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিছু মাছ কিনেছেন। বেশি দামে মাছ কিনে এলাকায় বিক্রি করে লোকসানের শঙ্কা জানান তিনি।
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার প্রথমবারে সাগর থেকে ট্রলার এসেছে। জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছে। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। সাগরে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নৌবাহিনীর অভিযানে ৯৯ কোটি টাকার মাছ ও জাল জব্দ
বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনব্যাপী ‘মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম–২০২৫’ চলাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ হাজার ৩২৮ কেজি মাছ, অবৈধ জাল, বোটসহ প্রায় ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকার মৎস্যসম্পদ ও উপকরণ জব্দ করেছে।
বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ‘মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম-২০২৫’ চলাকালে সব ধরনের মাছ ধরার নৌযানের জন্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২৭৫টি অভিযান চালিয়ে ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ১১০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল, ২ হাজার ৭৪৪টি বিভিন্ন ধরনের জাল, ৫০৫ জন জেলেসহ ৫৭টি বোট এবং ১৬ হাজার ৩২৮ কেজি মাছ জব্দ করে। জব্দ করা সরঞ্জামের বাজারমূল্য প্রায় ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
নৌবাহিনীর এ অভিযান চলাকালে জব্দ মাছ স্থানীয় এতিমখানাগুলোতে বিতরণ করা হয় এবং অবৈধ জাল স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া আটক মাছ ধরার নৌকা ও জেলেদের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযান চলাকালে নৌবাহিনীর চারটি যুদ্ধজাহাজ ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্যাট্রল বোট বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত টহলে নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া বেআইনিভাবে মাছ শিকার প্রতিহত করতে অত্যাধুনিক মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্র্যাফট দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নজরদারি চালানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, উৎপাদন ও সংরক্ষণে টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে নৌবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে। এই অভিযানের ফলে দেশের জলসীমায় মৎস্যসম্পদের প্রাচুর্য বাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।