গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের উত্তর বাসুদেবপাড়া গ্রামে সরকারি হালট দখল ও ভরাট করে চাষের জমি ও বাড়ি তৈরি করেছেন স্থানীয় কয়েকজন। ওই হালট উদ্ধারের নামে নিজেদের চলাচলের জন্য রাস্তা বানাচ্ছেন মনির হাওলাদার ও সোহাগ হাওলাদার নামে দুই ব্যক্তি। তারা গায়ের জোরে নিধন করছেন অসংখ্য ফলদ ও বনজ গাছ। এ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ এখন বিপজ্জনক অবস্থায়। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
বাসুদেবপাড়া মৌজার বিএস ৯০৮ ও ৯৯৭ দাগের সরকারি হালটটি ভরাট করে চাষের জমি বানিয়েছেন আনোয়ার সরদার, আরজ আলী সরদার, রাজু সরদার, মন্নাত হাওলাদার, মোস্তফা খানসহ কয়েকজন। কিছু অংশে বাড়ি তৈরি করেছেন সরোয়ার সরদার। বাকি অংশে আব্দুর রহিম সরদার, বিউটি বেগম ও হাসিনা বেগম ফলিয়েছেন বনজ ও ফলদ বৃক্ষ। এভাবে তিন যুগ ধরে এলাকার লোকজন মিলে পুরো হালটটিকে গিলে খেয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, দখল হয়ে যাওয়া এ হালট উদ্ধার ও খননের নামে প্রভাবশালী মনির হাওলাদার ও সোহাগ হাওলাদারের লোকজন নিজেদের বাড়ির লোকজনের চলাচলের জন্য মাটির রাস্তা বানাচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে তারা হাসিনা বেগম, আব্দুর রহিম সরদার ও বিউটি বেগমের রেইনট্রি, কড়ই, চাম্বল, আম, কাঁঠাল ও সুপারি গাছ কেটে ফেলেছেন। এসব গাছ কাটার আগে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন তা দিতে অস্বীকার করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হাসিনা বেগম বলেন, অনুনয় করে তাদের বলেছিলাম–এক মাস পরেই গাছের আম, কাঁঠাল পেকে যাবে। এরপর গাছগুলো কাটেন। তারা আমার কথা শোনেনি। গায়ের জোরে কচি ফলসহ গাছ কেটে ফেলেছে। আমি এর বিচার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই। ক্ষুব্ধ বিউটি বেগম বলেন, গায়ের জোরে দামি দামি গাছ কেটে ফেলেছে। তারা কারও বাধা মানছে না।
মনির হাওলাদারের দাবি, ফসলের মাঠের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে হালটটি খনন ও রাস্তা নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর বাটাজোর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন
করি। চেয়ারম্যান অনুমতি দেওয়ায় আমরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে হালট খনন ও রাস্তা তৈরি করছি। এর জন্য যাদের গাছ কাটা পড়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
হালট খনন করে রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাটাজোর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদার। তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া সরকারি জমি বা হালট খনন ও রাস্তা তৈরির সুযোগ কারও নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে পাঠানো হবে। জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত হলে দখলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ড় দখল র জন য সরক র সরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের জন্য তিন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়: আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সংস্কারের জন্য তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া।
‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর প্রাথমিক খসড়ার ওপর এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে এ কথা বলেন।
আজ শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সমিতির নেতা, বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইন মন্ত্রণালয় ও আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংস্কারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি নিতে পেরেছি। সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। একটি হচ্ছে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা। এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিবর্তন ইতিমধ্যে করেছি, সেটা হচ্ছে দেওয়ানি কার্যবিধির পরিবর্তন করেছি। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে এটি আইন আকারে (অধ্যাদেশ) পাস করতে পারব।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সংস্কারের দ্বিতীয় লক্ষ্য উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি খুব কঠিন কাজ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালাইজেশনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বিচারকদের প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রমের মান উন্নত করার কথা চিন্তা করছেন। বিচার বিভাগের সবার সম্পদ বিবরণী সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ করা হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদের সহায়তায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দ্বিতীয় এই লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীনে যেসব আইন আছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।’
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় প্রথম সভায় তিনি জেনেছেন, প্রতিবছর গড়পড়তা দেশে ৫ লাখ মামলা হয়। সেখানে সরকারি আইনগত সহায়তার মাধ্যমে ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। আদালতের তুলনায় এখানে নিষ্পত্তিতে সময় কম লাগে এবং ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট থাকেন। এটা বড় সুযোগ। যদি আইনগত সহায়তা কর্মসূচিকে আরও সম্প্রসারণ, দক্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারলে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি এক থেকে দুই লাখে নেওয়া যাবে। এক লাখে অবশ্যই পারা যাবে। তাঁদের লক্ষ্য দুই লাখে নিয়ে যাওয়া।
কেউ মধ্যস্থতায় সন্তুষ্ট না হলে মামলা করার সুযোগ থাকছেই বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন ‘মধ্যস্থতার জন্য আসাটা বাধ্যতামূলক করছি, মধ্যস্থতার রায় মেনে নেওয়াকে বাধ্যতামূলক করছি না। কাজেই কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যাপার এখানে থাকছে না।’