মানব সভ্যতার এক অনন্য গৌরবময় আবিষ্কার হলো মুদ্রা। ইতিহাস বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে লিডিয়া (বর্তমান তুরস্কের অংশ) অঞ্চলে প্রথম ধাতব মুদ্রার প্রচলন হয়। সময়ের ধারায় মুদ্রা শুধু আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যম নয়, হয়ে ওঠে সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। সেই প্রতিচ্ছবির মধ্যে মানব প্রতিকৃতি– বিশেষত ঐতিহাসিক পুরুষ ও নারীর মুখাবয়ব– এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।
শত শত বছর ধরে নানা জাতি তাদের রাজা, রাষ্ট্রনায়ক, শাসক, বীর ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, বিপ্লবী, বিজ্ঞানী কিংবা মানবতার পক্ষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা মানুষের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছে ব্যাংক নোটে কিংবা কয়েনে।
ইডিথ কোয়ান (১৮৬১-১৯৩২), অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী সংসদ সদস্য এবং নারী অধিকার আন্দোলনের পথিকৃত ইডিথ কোয়ান। তিনি নারীর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর কাজ অস্ট্রেলিয়ান সমাজের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। ১৯৯৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার ৫০ ডলার নোটে ইডিথ কোয়ানের প্রতিকৃতি রয়েছে। এটি ছিল নারীর জন্য একটি প্রেরণামূলক সম্মাননা।
এভা পেরন (১৯১৯-১৯৫২), আর্জেন্টিনা
এভা পেরন, যিনি ‘এভিতা’ নামে পরিচিত, ছিলেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের স্ত্রী এবং দেশের দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য একজন মহীয়সী সংগ্রামী নেত্রী। তিনি নারীর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন এবং দাতব্য কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন। জনগণের কাছে তিনি ছিলেন মমতাময়ী ‘মাদার অব দ্য নেশন’।
২০১২ সালে আর্জেন্টিনা ১০০ পেসোর একটি ব্যাংকনোট প্রকাশ করে, যেখানে প্রথমবারের মতো একটি নারীর প্রতিকৃতি দেখা যায়, আর তা ছিল এভা পেরনের।
ফ্রিদা কাহলো (১৯০৭-১৯৫৪), মেক্সিকো
বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলো ছিলেন আত্মজৈবনিক শিল্পের মূর্ত প্রতীক। তাঁর জীবন ছিল দুঃখ-কষ্ট ও প্রতিবাদের এক চলমান ক্যানভাস, যা ফুটে উঠেছে তাঁর চিত্রকর্মে। তিনি নারীবাদ ও আত্মপরিচয়ের ভাষা খুঁজে পান রঙের ভেতর। মেক্সিকোর ৫০০ পেসো নোটে ২০১৮ সাল থেকে ফ্রিদা কাহলো এবং তাঁর স্বামী দিয়েগো রিভেরার প্রতিকৃতি যুক্ত হয়– এ যেন শিল্প ও প্রেমের যুগলবন্ধন।
গ্রেটা গার্বো (১৯০৫-১৯৯০), সুইডেন
গ্রেটা গার্বো ছিলেন সুইডেনের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, যিনি হলিউডে এক রহস্যময় ও অভিজাত নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে মরিৎজ স্টিলারের নির্বাক চলচ্চিত্র দি অ্যাটনম্যান্ট অব গোস্তা বার্লিংয়ে অভিনয় করেন। এর পরপরই তিনি সুইডেনে বিখ্যাত চিত্রতারকায় পরিণত হন। ১৯২৫ সালে হলিউডে চলে যান। মৌন সৌন্দর্য ও সংযমী অভিনয়শৈলী তাঁকে এক অনন্য প্রতিভায় পরিণত করে। সুইডেনের ১০০ ক্রোনার নোটে গ্রেটা গার্বোর প্রতিকৃতি রয়েছে। এটি তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও সুইডিশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।
হিগুচি ইচিও (১৮৭২-১৮৯৬), জাপান
হিগুচি ইচিও ছিলেন আধুনিক জাপানিজ সাহিত্যের পথিকৃত এবং প্রথম খ্যাতিমান নারী ঔপন্যাসিক। স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীর জীবন নিয়ে লিখেছেন অসাধারণ সব গল্প।
জাপানের ৫,০০০ ইয়েনের নোটে তাঁর প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে, যা জাপানিজ সাহিত্য ও নারীবাদী লেখনীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ফ্র্যাঙ্ক মরটিমার ম্যাগলিন ওরেল (১৯২৪-১৯৬৭), বার্বাডোজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ইতিহাসে কিংবদন্তি অধিনায়ক ফ্র্যাঙ্ক মরটিমার ম্যাগলিন ওরেল ছিলেন প্রথম পূর্ণ সময়ের কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে দলের মধ্যে গড়ে উঠেছিল পেশাদারিত্ব, সম্মান এবং ক্রীড়ানৈতিকতা। বার্বাডোজের ৫ ডলারের নোটে ওরেলের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে, যা তাঁকে ক্রীড়াবিদ হিসেবে জাতীয় আইকনে পরিণত করে।
মাক ডিজদার (১৯১৭-১৯৭১), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
বসনিয়ার একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, যিনি ইসলামি দর্শন, ইতিহাস ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে রচনা করেছেন গভীর দর্শনমূলক কবিতা। ১০ কনভার্টিবল মার্ক নোটে রয়েছে তাঁর ছবি, যা বসনিয়ার সাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্মারক।
পায়সেই হিলেনদারস্কি (১৭২২-১৭৭৩), বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়ান ন্যাশনাল রেনেসাঁর পথিকৃৎ, একজন ধর্মযাজক ও ইতিহাসবিদ। তাঁর লেখা ‘স্লাভো-বুলগেরিয়ান হিস্টোরি’ বুলগেরিয়ান জাতিসত্তার জাগরণের সূচনা করে। ২ লেভা নোটে তাঁর প্রতিকৃতি রয়েছে, যা এক নবজাগরণের চিন্তাবিদের প্রতি শ্রদ্ধা।
জন এ ম্যাকডোনাল্ড (১৮১৫-১৮৯১), কানাডা
কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কনফেডারেশনের প্রধান স্থপতি। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা ও পরিকল্পনায় কানাডা রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত হয়। কানাডার ১০ ডলারের পুরোনো সংস্করণে রয়েছে তাঁর প্রতিকৃতি।
ইগনাসিও কারেরা পিন্টো (১৮৪৮-১৮৮২), চিলি
চিলির যুদ্ধনায়ক, যিনি ‘ব্যাটল অব লা কনসেপশিয়ান’-এ ৭৭ জন সৈন্য নিয়ে প্রায় ৪০০০ সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং শহীদ হন। এক হাজার পেসোর নোটে রয়েছে তাঁর প্রতিকৃতি, যা আত্মত্যাগের গৌরবময় প্রতীক। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে মসজিদের ঈমামকে মুসল্লিদের রাজকীয় বিদায়
প্রতিটি সমাজেই একটি মসজিদ একজন ঈমাম ও মুয়াজ্জিন আছে। তবের বেশির ভাগ মসজিদে ঈমাম থাকলেও মুয়াজ্জিনের সংখ্যা নগন্ন। আবার অনেক মসজিদে ঈমামের ঈমামতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিশেষ করে সমাজ ভিত্তিক বেসরকারি মসজিদ মাদ্রাসাগুলোর ঈমামগন।
কখনো সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী, ক্যাশিয়ারের কথার অবাধ্য হলেই চাকুরী নিয়ে নড়বড়ে চলে। তবে সবার ক্ষেত্রে নয়। এমনও মসজিদ মাদ্রাসা আছে যে সকল ঈমামদের ঈমামতির চাকুরী যুগযুগ ধরে বহাল থাকে।
তাদের মধ্যে একজন হাফেজ মাওলানা মুফতি মোঃ আবুল কাসেম। যিনি বন্দর উপজেলা ধামগড় ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের কামড়াব কুচিয়ামোড়া বাইতুল নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ঈমাম। যিনি আরবি লেখাপড়া শেষ করেই অবিবাহিত জীবনে অত্র মসজিদে ঈমামতি'র চাকুরী নেন।
সূদীর্ঘ ৪৫ বছর চাকুরী জীবনে গত ১৩-০৬-২৪ইং পবিত্র শুক্রবার জুম্মা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈমামতির চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। সমাজবাসী সহ এলসকার শত শত মুসল্লি ঈমামকে নতুন পায়জামা, পাঞ্জাবি, পাগড়ি,ফুল ও টাকার মাল্য সহ দেড় বছরের অগ্রীম বেতন দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌছিয়ে দেন। এসময় তিন কিলোমিটার রাস্তায় নারী পুরুষ দাড়িয়ে ঈমামকে হৃদয় বিদারক বিদায় জানান।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর অত্র মসজিদে চাকুরী করার সুবাদে আমি সমাজবাসীর পক্ষ থেকে যে মূল্যায়ন পেয়েছি তা ভূলবার নয়। দোয়া করি মহান আল্লাহপাক যেন সবাইকে হেদায়েত দান করেন।
সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন বলেন, আমি যেই ঈমামকে বিদায় জানাচ্ছি তিনি আমার শিক্ষক। তার অসংখ্য ছাত্র আছে যারা আজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, সচিব থেকে শুরু করে অসংখ্য আলেম, মাওলানা, মুফতি উনার ছাত্র। আমরা দোয়া করি মহান আল্লাহপাক যেন ঈমামকে সুস্থ্যতার সহিত দীর্ঘ হায়াৎ নসীব করেন।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মসজিদ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ তাওলাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সামসুদ্দোহা, মোহাম্মদ আলী, শেখ ফরিদ, ইয়াজউদ্দীন, শামিম সহ এলাকার মুসল্লিগন।