ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানের হামলা ‌‘চলবে’।

নাম প্রকাশ করেননি এমন একজন কর্মকর্তার বরাতে ফার্স এ তথ্য দিয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। 

অন্যদিকে ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এছাড়া ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।

ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‌‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে। তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।

এর আগে ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।

জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। 

এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ ‍যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়। 

বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন। এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব কর মকর ত শ ক রব র লক ষ য দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৪, আহত ৭০-এর বেশি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত এক ইসরায়েলি নারী শনিবার ভোরে মারা গেছেন। তেহরানের চতুর্থ দফা হামলার পর আরেক জনের মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় হামলায় দুজন নিহত হয়েছে। খবর জেরুজালেম পোস্টের।

ইসরায়েলের দুই দফা হামলার জবাবে শুক্রবার রাতে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এরপর ইসরায়েলের গুশ দান এলাকায় ১০২ জরুরি হটলাইনে অসংখ্য কল আসার কথা জানিয়েছে দেশটির ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটি।

ইরানের হামলায় শনিবার সকাল পর্যন্ত ৪ জন নিহত হওয়া ছাড়াও, ৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:

মধ্যপ্রাচ্যে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ

মার্কিন সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করলে ইরানের পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে: যুক্তরাষ্ট্র

তেল আবিব ও রামাত গানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ফায়ার ফাইটার দলগুলোকে এ দুই স্থানে পাঠানো হয়।

ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটি জানিয়েছে, তেল আবিবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং আটকে পড়া মানুষজন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। রামাত গানে ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে এবং সেখানেও আটকে পড়া মানুষজন রয়েছে।

জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম ৬৩ জন আহতকে চিকিৎসা দিয়েছে।

জেরুজালেম পোস্ট লিখেছে, ২৬ জনকে শেবা মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং দুজন মোটামুটি আহত। ১৩ জনকে বেলিনসন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং দুজন মোটামুটি আহত। ১৯ জনকে ইচিলভ মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে।

এমডিএ’র উদ্ধারকারী দল আহতের খবর পাওয়া গেছে, গুশ দান এলাকার এমন ৭ স্থানে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

এদিকে, শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায় জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩২০ জন, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক ব্যক্তি।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ঘটনা এখনো চলছে। ঘণ্টাখানেক আগে, দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন করে ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে। 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরব ভালোবাসার আরেক নাম
  • নারীবাদের ছদ্মবেশে ভারত যখন যুদ্ধ চালায়
  • কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪
  • একজন মার্করাম, একটি সেঞ্চুরি এবং ২৭ বছর পর একটি ট্রফি
  • বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১০১ জন
  • ঝালকাঠিতে দূরপাল্লার বাস-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে দুজন নিহত
  • চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের
  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৪, আহত ৭০-এর বেশি