যশোরের মনিরামপুরে ব্যস্ত একটি পাকা সড়কের পাশের ফুটপাত দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার নেহালপুর-আলীপুর-পোড়াডাঙ্গা সড়কের আলীপুরে এই কাজ করেছেন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী দুই রাজনীতিবিদ। এদের একজন আওয়ামী লীগের, অন্যজন জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তারা মাছের ঘেরের বাঁধ তৈরি করেছেন সড়কের ফুটপাতে। যদিও এলাকাবাসীর তোপের মুখে কিছু অংশ থেকে সম্প্রতি মাটি সরিয়ে নেন তারা। 
এলাকাবাসী জানিয়েছে, মাছের ঘেরটির অংশীদারদের একজন কামরুজ্জামান। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য। তাঁর অন্য অংশীদার হলেন– ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী টিম সদস্য খিদির হাসান।
নেহালপুর বাজারের উত্তরপাশ দিয়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ পিচ ঢালাই করা সড়কটি আলিপুর হয়ে কুলটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পোড়াডাঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। নেহালপুর থেকে সড়কের দু’পাশে পাঁচ-সাত ফুট জায়গা রাখা হয়েছে পথচারীদের চলাফেরা ও যানবাহন ক্রসিংয়ের জন্য। শনিবার সকালে আলীপুর এলাকার পশ্চিমপাশে দেখা গেছে, সড়কটির প্রায় আধা কিলোমিটার ফুটপাত দখল করে উঁচু বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। পাশেই প্রায় শত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে গড়ে তোলা মাছের ঘের। এটির অংশীদার কামরুজ্জামান ও খিদির হাসান। 
যেখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে পাশেই গাবরডাঙ্গা সার্বজনীন পূজা মন্দির ও আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফুটপাত দখল করায় শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সরু সড়কে উল্টো দিক থেকে আসা যানবাহন ক্রসিং করতেও ঝুঁকি বাড়ছে। 
আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতা রানী ঘোষের ভাষ্য, ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাতটি দখলের কারণে জনসাধারণের চলাচলে সমস্যা তো হচ্ছে। জনস্বার্থে যে কোনো মূল্যে এ বাঁধ অপসারণ করা উচিত বলে মনে করেন কুলটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ইসলাম।
ঘেরমালিক আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামানের ভাষ্য, ‘জামায়াত নেতা খিদির হাসানসহ বেশ কয়েকজন মিলে ঘের করেছি। কিন্তু সড়কের পাশে পরিত্যক্ত জমির সামান্য অংশে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।’ জামায়াত নেতা খিদির হাসানের দাবি, এলাকাবাসীর অনুরোধে বাঁধটি কিছু দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। 
সড়কের পাশে সাত ফুট চওড়া হাঁটার পথ ছিল। এর মধ্যে দখল করা হয়েছে অন্তত পাঁচ ফুট। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সদুত্তর দেননি দুই নেতার কেউই। আর কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বলেন, সড়কের পাশে কমপক্ষে পাঁচ-সাত ফুট জায়গা থাকার কথা। এখানে রাখা হয়েছে খুবই সামান্য। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। 
তবে সড়কের পাশের ফুটপাত এভাবে 
দখলের বিষয় জানা নেই মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুমের। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল সড়ক র প শ র ফ টপ ত আল প র

এছাড়াও পড়ুন:

নীরব ভালোবাসার আরেক নাম

প্রতিটি সকাল শুরু হয় এক পরিচিত কণ্ঠের ডাক কিংবা শাসনে– যিনি চুপচাপ দায়িত্বের পাহাড় বয়ে বেড়ান, রুক্ষ স্বরে আমাদের জাগিয়ে তোলেন, তাড়াহুড়ো করে স্কুলে পাঠান। আমরা তাঁকে বলি ‘বাবা’। তাঁর চোখে-মুখে থাকে গাম্ভীর্য; কণ্ঠে থাকে কর্তব্যবোধের দৃঢ়তা। অনেক সময় তাঁকে মনে হয় কঠিন, অপ্রকাশ্য, যেন এক জীবন্ত দেয়াল– যার ওপারে আমরা পৌঁছাতে পারি না। অথচ এ মানুষটিই আমাদের জীবনের প্রথম নিরাপত্তার বর্ম, যিনি দিনশেষে সবার অলক্ষ্যে নিঃশব্দ ভালোবাসা ছড়িয়ে যান।
ছোটবেলায় আবেগ মানেই ‘মা’। কাঁদলে যিনি বুকে টেনে নেন, আদর করেন, আবদার শুনে নরম হয়ে যান– তাঁকে ভালোবাসা বোঝাতে কোনো সংকোচ হয় না। কিন্তু বাবা? তাঁকে ভালোবাসা বলা যেন কোনো নিষিদ্ধ চিঠি লেখার মতো। কেন এমন হয়? কেন বাবার চোখে জল মানে দুর্বলতা? কেন তাঁর মুখে ‘আমি ভালোবাসি’ শুনতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব?
এর পেছনে আছে সমাজ ব্যবস্থা; যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘পুরুষ’ নামক পরিচয়টিকে এক কঠোর কাঠামোয় আটকে রেখেছে। ছোটবেলায় যে ছেলেটি মায়ের পাশে রান্নাঘরে দাঁড়াতে চেয়েছিল, তাঁকে বলা হয়, ‘তুই ছেলে, এগুলো তোর কাজ না।’ যে কিশোর ক্লাসে হেরে গিয়ে কাঁদতে চেয়েছিল, তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয়– ‘ছেলে হয়ে কাঁদিস কেন?’ এভাবেই একেকটা কোমল হৃদয় পাথর হয়ে যায়, একেকটা প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে নিঃশব্দ এক ‘পুরুষ’, যিনি পরে হন একজন ‘বাবা’- শক্ত, সংবেদনশূন্য, দায়িত্ববদ্ধ।
এই মানুষটিই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের জন্য লড়াই করেন। অফিসে মাথা নত করেন, রাস্তায় ঘাম ঝরান, দোকানে গিয়ে সন্তানের জন্য নতুন জামা কেনেন, অথচ নিজের পোশাকটা পুরোনো হয়েই পড়ে থাকে। তিনি হয়তো কখনও মুখ ফুটে বলেন না, ‘আমি ক্লান্ত’; কিন্তু তাঁর চোখের নিচের কালি, হাঁটার ধীরতা, নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসগুলো বলে দেয় সবটুকু।
সমাজ তাঁকে শিখিয়েছে– ‘তুমি পুরুষ, তোমার ব্যথা নেই, তোমার দুঃখ নেই।’ অথচ তিনিও মানুষ। তাঁরও চোখে জল আসে, বুক চেপে ধরে কষ্ট জমে থাকে, গভীর রাতে সন্তানের পড়া দেখে চুপিচুপি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সমাজ তাঁকে সেই স্বস্তির জায়গাটা দেয়নি, যেখানে তিনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন, ‘আমিও কাঁদি’, ‘আমিও ভালোবাসি’।
আমরা বাবাকে ভয় করি, কারণ তাঁকে আবেগ প্রকাশ করতে দেখিনি। আমরা তাঁর কাছে আবদার করতে ভয় পাই, কারণ শিখে গেছি– ‘বাবা রেগে যাবেন।’ অথচ হয়তো তিনিই সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করেন সন্তানের একটি আদরের ছোঁয়ার জন্য। হয়তো তাঁর বুক ভরে যায় সন্তানের ছোট্ট একটি ‘ধন্যবাদ’ শোনে। এই মানুষটিই রাত জেগে সন্তানের জন্য ওষুধ আনেন, স্কুলে ভর্তি করাতে ভিড় ঠেলে লাইনে দাঁড়ান, বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হলে মায়ের কাছে বারবার জানতে চান– ‘ও এসেছে?’
পিতৃতন্ত্র শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও কারাগার। এই কাঠামো পুরুষকে আবেগহীন, কঠোর, একতরফা দায়িত্বপ্রবণ রোবটে পরিণত করে। তারা ভুলে যান– সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে কিছু প্রাণবন্ত সময়, কিছু গল্প, কিছু অনুভবের প্রকাশ।
আমরা যদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারি; যেখানে ছেলেরা কাঁদতে পারবে, বলতে পারবে ‘আমি ভালোবাসি’; বাবারা সন্তানের সঙ্গে খেলা করবে, রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াবে– তবে হয়তো একদিন বাবাদের মুখেও ফুটে উঠবে সেই উষ্ণতা, যেটি এতদিন সমাজ ছেঁটে ফেলেছিল।
শিশুর জীবনে প্রথম নায়ক তাঁর বাবা। সেই নায়কের চরিত্র যেন শুধু কঠোরতা দিয়ে গড়া না হয়; বরং তাঁর মধ্যে থাকুক সহানুভূতি, অনুভূতি, গভীর ভালোবাসা প্রকাশের সাহস। বাবা যেন শুধু ছায়ার মতো না থাকেন, তিনি যেন হন আলো– যে আলো সাহস দেয়, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়।
এই বাবা দিবসে আসুন আমরা বাবাদের সেই জায়গাটা দিই– যেখানে তারা কাঁদতে পারেন, হাসতে পারেন, ভালোবাসতে পারেন। বাবা যেন একজন নিঃশব্দ সহযোদ্ধা না হয়ে হন একজন প্রকাশ্য ভালোবাসার মানুষ। আসুন, পিতৃতন্ত্রের তৈরি এই শৃঙ্খল ভেঙে বাবাদের ফিরিয়ে দিই তাদের মানবিকতা। ভালোবাসার ভাষায় উজ্জীবিত হোক বাবারা। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
  • গুম করা হতো তিনটি ধাপে 
  • এক মৃত্যুপথযাত্রী পিতার থেকে ২০টি শিক্ষা
  • ৯ কিলোমিটার সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ
  • রেনু বেগমের ‘বুকভাসা চোখের পানি’ কেন
  • ইরান অনড়, ইসরায়েল কঠোর
  • ইরানে নিরাপদে আছেন ৬৬ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  • আজও আঁধার কাটেনি কোচদের
  • নীরব ভালোবাসার আরেক নাম