Samakal:
2025-11-03@02:45:16 GMT

১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ

Published: 15th, June 2025 GMT

১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ

নীতি সহায়তার নামে মন্দ ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধের পর যেন লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। মার্চ প্রান্তিক শেষে বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

খেলাপি ঋণ যে এভাবে লাফিয়ে বাড়বে তা আগেই ধারণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর। গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। গত ফেব্রুয়ারিতে আগের সেই কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কোনো তথ্য লুকিয়ে রাখা হবে না। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আবার কমবে। এ ছাড়া নতুন করে বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে এভাবে খেলাপি বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মেয়াদি ঋণখেলাপির সময় পুনর্নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কিছু বড় অঙ্কের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত হওয়ায় এভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকের চলতি ঋণ নবায়ন না হওয়া, পুনঃতপশিল করা ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়া এবং বিদ্যমান খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে সুদ যোগ হয়ে বেড়েছে খেলাপি।

বিগত সরকারের সময়ে নানা নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর সংস্থাটি নীতি সহায়তা তুলে দেওয়ার শর্ত দেয়। বিশেষ করে মেয়াদি ঋণ অনাদায়ী থাকার ৬ মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব করার বিধান বাতিল এবং ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ করতে বলে সংস্থাটি। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। বিভিন্ন জালিয়াতি করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগই এখন পলাতক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে
জেলে আছেন। এসব কারণেই খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মানে শেষ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। যেখানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যেখানে খেলাপি দেখানো হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। আর সরকার পরিবর্তনের আগে গত জুন শেষে খেলাপি ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। শেষ ৯ মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে। এর অন্যতম কারণ বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ লুট হয়। সেই টাকা আর ফেরত আসছে না। দখল করা কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার এখন ৯৮ শতাংশে ঠেকেছে। এক সময় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের যেখানে ৫ শতাংশের কম ছিল খেলাপি। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকের ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৬
হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিগত সরকারের শুরুর দিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে ব্যাংক খাত পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল চালু হয়। এরপর থেকে নানা শিথিলতায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে কখনও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ঋণ ফেরত না দিলেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে পুরো ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এতদিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে। এতে করে দ্রুত বাড়ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ ব ড় ছ সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী