১১৬ বছরের মধ্যে প্রথম যুক্তরাজ্যে গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর প্রধান হচ্ছেন একজন নারী
Published: 16th, June 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের গোপন বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর ১১৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন নারী প্রধান হতে যাচ্ছেন। তাঁর নাম ব্লেইজ মেট্রিয়েলি।
ব্লেইজ ১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যের গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এ যোগ দেন। তিনিই হবেন সংস্থাটির ১৮তম প্রধান। তিনি এ বছরের শেষের দিকে বর্তমান প্রধান স্যার রিচার্ড মুরের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
ব্লেইজ বর্তমানে সংস্থাটির প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিভাগের দায়িত্বে আছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘এই সংস্থার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব পেয়ে আমি গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই নিয়োগকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাজ আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
এমআই৬ সাধারণত বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে থাকে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো সন্ত্রাস প্রতিরোধ, শত্রু রাষ্ট্রের কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা।
এই সংস্থার প্রধানকে সাধারণত ‘সি’নামে ডাকা হয়। এই প্রধানই এই সংস্থার একমাত্র প্রকাশ্য ব্যক্তি।
৪৭ বছর বয়সী ব্লেইজ মেট্রিয়েলি এখন মহাপরিচালক ‘কিউ’ পদে আছেন। তিনি এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির নেতৃত্ব দেন, যার মাধ্যমে এমআই৬ এজেন্টদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। চীনের বায়োমেট্রিক নজরদারির মতো শত্রুপক্ষকে ফাঁকি দেওয়ার নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এই বিভাগ।
ব্লেইজ বলেন, ‘এমআই৫ ও জিসিএইচকিউয়ের সঙ্গে মিলে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিরাপদ রাখা এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমআই৬। আমি সাহসী কর্মকর্তা ও এজেন্টদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে মুখিয়ে আছি।’
ব্লেইজ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি আগেও এমআই৬-এর অঙ্গসংস্থা এমআই৫-এ পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর পেশাগত জীবনের বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কেটেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতিতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে রাজা চার্লসের বিদেশ ও আন্তর্জাতিক জন্মদিনের সম্মাননা তালিকায় ব্লেইজ ‘কম্প্যানিয়ন অব দ্য অর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ (সিএমজি)’ খেতাব পান।
এমআই৫-এ থাকার সময় ব্লেইজ পরিচালক ‘কে’ ছদ্মনামে কথা বলতেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকির ধরন বেশ ‘বৈচিত্র্যময়’।
ব্লেইজ বলেন, এসব হুমকি হচ্ছে সরকার, গোপন তথ্য, নাগরিক, অর্থনীতি ও স্পর্শকাতর প্রযুক্তির সুরক্ষা এবং হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ।
এমআই৬-এর এই ভবিষ্যৎ প্রধান আরও বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ (রাশিয়া নিজে নয়) এখনো হুমকি। চীন সম্পর্কে তিনি বলেন, ওরা বিশ্বের নিয়ম বদলে দিচ্ছে, যা যুক্তরাজ্যের জন্য সুযোগ ও হুমকি দুই-ই সৃষ্টি করছে।
‘সি’ আসলে কী করে
‘সি’ হচ্ছে এমআই৬-এর প্রধান, যাঁর অফিশিয়াল নাম গোপন গোয়েন্দা সংস্থা (এসআইএস)। তিনি পররাষ্ট্র সচিবের অধীনে কাজ করেন।
‘সি’ হচ্ছেন যুগ্ম গোয়েন্দা কমিটির সদস্য, যেখানে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানেরাও থাকেন। এই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন দেয়।
অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন যে ‘সি’ অর্থ হলো ‘চিফ’ বা প্রধান। আসলে তা নয়। যুক্তরাজ্যের প্রথম গোয়েন্দা সংস্থা ছিল সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো। এই সংস্থা ১৯০০–এর দশকে গড়ে তোলা হয়।
তখন এর প্রধান ছিলেন রয়্যাল নেভি অফিসার ক্যাপ্টেন ম্যান্সফিল্ড কামিং। তিনি সব চিঠিতে ‘সি’ অক্ষর দিয়ে সই করতেন এবং সব সময় সবুজ কালি ব্যবহার করতেন। আজও এমআই৬-এর প্রধান সবুজ কালি ব্যবহার করেন।
এমআই৬–এর প্রধান সরাসরি কাউকে ‘হত্যার অনুমতি’ দেন না। তবে ১৯৯৪ সালের আইনের আওতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এজেন্টদের এমন কাজ করতে দেওয়া যেতে পারে, যা সাধারণভাবে প্রাণঘাতী ও বেআইনি।
মেট্রিয়েলির সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিকভাবে রাশিয়া, চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে হুমকি বৃদ্ধি। এসব দেশ একসঙ্গে যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।
প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ঝুঁকি বাড়ছে। এমআই৬ সাধারণত মানব এজেন্ট নিয়োগ করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। তবে এখন অনেক তথ্য ডিজিটালি ও মহাকাশ থেকে পাওয়া যায়। এমন সময়ে এমআই৬-কে আরও দ্রুত এগোতে হচ্ছে যাতে তারা শত্রুপক্ষের থেকে পিছিয়ে না পড়ে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি আশা প্রকাশ করে বলেন, তিনি (মেট্রিয়েলি) এই জটিল বিশ্বে যুক্তরাজ্যকে সঠিকভাবে পথ দেখাতে পারবেন। তিনি আদর্শ পছন্দ।
ল্যামি বর্তমান প্রধান স্যার রিচার্ডকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি গত বছর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। তাঁর নেতৃত্ব ও অবদান যুক্তরাজ্যের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র প পরর ষ ট র এই স স থ ব ল ইজ ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল