রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবারই মতামত একটা। এই জায়গায় দ্বিমত কোথাও আছে বলে আমরা মনে করি না। এখানে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিভিন্ন কারণে আমরা এই জায়গাতে এসেছি এবং জাতিও এখানে ঐকমত্য পোষণ করছে।’

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস বৈঠক করেছেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শেষ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু বলেন, ‘দিনক্ষণ তো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। এটা আর সরকার বলতে পারবে না, আমরাও বলতে পারবো না। আমরা সেটার অপেক্ষা করব। নিশ্চিয় কোনো একটা সময়ে আগামীদিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। এটার জন্য তো আমাদের ধৈর্য থাকতে হবে। একদম অস্থিরতার মধ্যে সার্বক্ষণিক থাকলে তো চলবে না। জাতিকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, একটু সহনশীল হতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে আস্থারও ব্যাপার আছে। আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, একটু ধৈর্য ধরুন। আমরা সঠিক পথেই যাব। জাতি অবশ্যই একটা গণতান্ত্রিক পথে চলছে। সেটা আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। অতটুকু আস্থা আমাদের সবাইকে রাখতে হবে।’

লন্ডন বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো দলের মতামতের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু একটু আগে আমি যেটা বলেছি, সকলের মতামত দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে। কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে মতৈক্য না হলেও, মতভেদ থাকলেও অপরের বক্তব্যের প্রতি আমাকে সম্মান থাকতে হবে।’

দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তাদের মনোভাব হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার হলে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। তারা সেটার অপেক্ষায় আছে।’

অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে (নির্বাচন) সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কথা হবে। এটা তো খুব স্বাভাবিক। রুটিন ব্যাপার। আমরা একটু ধৈর্য ধরি। লন্ডনে যে বৈঠক হয়েছে, জাতির জন্য বড় ধরনের একটা ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমরা কোনো ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করে সামনের দিকে চলের পথকে বিঘ্নিত করা ঠিক হবে না। সবকিছুর সমাধান আগামী দিনে হবে। সময মতো দেশে নির্বাচন হবে।’

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনে নির্বাচিত সরকার আসলে ব্রাজিলের সঙ্গে কী কী কাজ করার সম্ভাবনা আছে, এগুলো দীর্ঘ আলোচনা করেছি। এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আমাদের কৃষি। আপনারা জানেন কৃষিতে ব্রাজিল অনেকটা এগিয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি ইন্টারেস্টিং আলোচনা হয়েছে, সেটি হচ্ছে স্পোর্টস। ব্রাজিল ফুটবল, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তারা খুবই ইন্টারেস্টেড। বিভিন্ন বিষয়সহ স্পোর্টস নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ঐকমত য ঐকমত য আম দ র সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিম্নকক্ষে পিআর দা‌বি ইসলামী আন্দোলনের
  • ৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
  • যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে: আলী রীয়াজ
  • মৌলিক ১৯ সংস্কার বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ৯টিতে ভিন্নমত
  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন