ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বিশ্ববাজারে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম
Published: 17th, June 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছেই। মঙ্গলবারও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, আজ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ২৩ ডলার বা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৪৬ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ০৮ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ-দাম বেড়ে হয়েছে ৭২ দশমিক ৮৫ ডলার। এর আগে ট্রেডিং সেশনের শুরুতে উভয় চুক্তিই ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ট্রেডিংয়ে ফিরে আসার আগে কিছুটা পতনও হয়েছে।
তেল সরবরাহে দৃশ্যমান কোনো বাধা না থাকলেও শনিবার ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে ইরান আংশিকভাবে গ্যাস উৎপাদন স্থগিত করেছে। ইরানের শাহরান তেল ডিপোতেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
বাস্তবতা হলো, ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর গত শুক্রবার এক দিনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, অর্থাৎ এর মধ্যে তেলের দাম এক দিনে আর কখনোই এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে আমদানি-রপ্তানির সময় বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে খরচ। ফলে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা না গেলে চুক্তি বাতিলের ঝুঁকিও আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ১ দশম ক ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
যাঁরা কল্পকাহিনিভিত্তিক সিনেমার ভক্ত, তাঁদের অনেকের কাছে সুপারম্যান ভীষণ প্রিয়। সুপারম্যান সিরিজে দেখা যায়, সুপারম্যান যেখানকার মানুষ, সেই কাল্পনিক গ্রহের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ক্রিপ্টোনাইট। কাল্পনিক ক্রিপ্টোনাইটের বিপরীতে জ্যাডারাইট নামের সাদা ও পাউডারময় একটি পদার্থ নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এই পদার্থ কোনো বিকিরণ নির্গত করে না। এটি সার্বিয়ার একটি অঞ্চল থেকে আসে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ‘ক্রিপ্টোনাইটের মতো এই উপাদান আমাদের গ্রহের জন্য সবুজ ভবিষ্যৎ তৈরির সুযোগ দিচ্ছে।’ যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরের গবেষকেরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিরল লিথিয়াম বহনকারী এই খনিজ পৃথিবীর শক্তির চাহিদার জন্য একটি গেমচেঞ্জার হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জ্যাডারাইট সার্বিয়ার জ্যাডার অববাহিকা অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই খনিজের সঙ্গে কাল্পনিক ক্রিপ্টোনাইটের আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শক্তি সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত লিথিয়াম সরবরাহ করতে পারে এই খনিজ। এখন বছরে এক লাখ টন লিথিয়াম উৎপাদিত হয়। পেট্রোল ও ডিজেল গাড়ির বিপরীতে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারির চাহিদা মেটাতে লিথিয়াম প্রয়োজনীয় পরিমাণের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানী রবিন আর্মস্ট্রং বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তির চাহিদা মেটাতে লিথিয়ামের অব্যাহত চাহিদা রয়েছে। খনন করে সংগ্রহ করা হলে জ্যাডারাইটের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ লিথিয়াম স্পোডুমিন নামক একটি খনিজ থেকে আসে। জ্যাডারাইট থেকে লিথিয়াম বের করার চেয়ে স্পোডুমিন থেকে লিথিয়াম সংগ্রহে বেশি শক্তি লাগে। লিথিয়াম সংগ্রহের সময় একটি দরকারি উপজাত হিসেবে বোরন পাওয়া যায়।
জ্যাডারাইট ২০০৪ সালে রিও টিন্টো নামক একটি খনি কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। ভূতাত্ত্বিকেরা একে অনন্য উপাদান বললেও প্রকৃত সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারেননি। ২০০৬ সালের ‘সুপারম্যান রিটার্নস’ সিনেমায় ক্রিপ্টোনাইটের জন্য উদ্ভাবিত সূত্রের সঙ্গে রাসায়নিক সূত্রের মিল পাওয়া যায়। সিনেমায় সুপারম্যানের চিরশত্রু লেক্স লুথার ক্রিপ্টোনাইট চুরি করে কাল্পনিক এক সূত্র দিয়ে। সোডিয়াম লিথিয়াম বোরন সিলিকেট হাইড্রোক্সাইড উইদ ফ্লোরিনের কথা বলা হয় সিনেমায়। যেখানে জ্যাডারাইটের রাসায়নিক গঠন সোডিয়াম লিথিয়াম বোরন সিলিকেট হাইড্রোক্সাইড। এ আবিষ্কারের পর থেকে বিশেষজ্ঞেরা নতুন লিথিয়ামের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, জ্যাডারাইট তৈরির জন্য ক্ষারসমৃদ্ধ হ্রদ, লিথিয়াম–সমৃদ্ধ আগ্নেয়গিরির কাচ ও খনিজ পদার্থের স্ফটিক কাঠামোর কাদামাটিসহ বিরল অবস্থার প্রয়োজন হয়।
সূত্র: এনডিটিভ