প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি পরিবর্তনে দুটি দল ছাড়া অন্যরা একমত: আলী রীয়াজ
Published: 17th, June 2025 GMT
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি দল ছাড়া অন্যরা বিদ্যমান পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে আবারও এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে এ কথা বলেন আলী রীয়াজ।
সংসদের জনগুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে রাখার বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান আলী রীয়াজ। কমিটিগুলো হলো পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি ও পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের অধীন অর্থবিল ও আস্থাভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।
সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ১০০টি স্থায়ী আসন নির্ধারণের বিষয়েও ঐকমত্য গঠনের কথা জানান আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘কোন পদ্ধতি ও কাঠামোতে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকবে, সেটা পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে।’
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে নীতিগতভাবে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে বলে জানান আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘দলগুলো মনে করছে, এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার দরকার আছে। আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। জুলাইয়ের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব।’
আজকের আলোচনায় জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব না থাকা প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা আশা করছি, তারা আগামীকাল অংশ নেবে।’
আরও পড়ুনআসনের সংখ্যানুপাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পদ বিরোধী দল পাওয়ার বিষয়ে সবাই একমত: সালাহউদ্দিন আহমদ১ ঘণ্টা আগেঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমকে দুটি রাজনৈতিক দল পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল এমন অভিযোগ করতে পারে। তবে আমরা নিরপেক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের আগামীকালের আলোচনায় জামায়াত অংশ নেবে, আশা প্রেস সচিবের৫২ মিনিট আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ
সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আলী রীয়াজ
ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুরুতে ছয় মাস মেয়াদে গঠিত সাত সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন প্রথম ধাপে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার দ্বিতীয় ধাপে বাড়ানো হলো ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
কমিশনের কাজ হলো ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা।
নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান, সরকার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জুলাই সনদ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও তা চূড়ান্ত করে সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জরুরি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
পূর্বাপর
রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়।
এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও দেয়।
মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক হয়। কিছু দলের সঙ্গে হয় একাধিক বৈঠক।
প্রথম পর্বের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
কোরবানির ঈদের আগে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সংসদ ভবনের এলডি হলে শেষ হয়। এরপর ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা উদ্বোধন করে কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়।
আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিন চলে এ আলোচনা।
সবশেষ জুলাই সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া মতামতের জন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
পরে দল গুলোর সাথে আরেক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদের কপি রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়।
কিছুক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে এই চূড়ান্ত খসড়ায়। কিন্তু সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো রূপরেখা সেখানে দেওয়া হয়নি।
এখন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতেই দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছে ঐকমত্য কমিশন।
ঢাকা/এএএম/রাসেল