সংসদীয় গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দল পাবে। এর বাইরে বিরোধী দলগুলোর সংসদ সদস্যের সংখ্যানুপাতে অন্য জনগুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে সভাপতির পদ দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সবাই একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোড অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সালাউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্তে আসা গেছে, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটিসহ অন্যান্য কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়–সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলের মধ্যে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দল প্রাপ্ত হবে। এ বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছে।’

এই কমিটিগুলোর সভাপতির পদ সাধারণত সরকারি দল থেকে দেওয়া হয়। তবে কিছু রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল, এই চারটি কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়া হলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকবে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংসদ সদস্যদের আস্থা ভোটের বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদ সদস্যরা আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে অর্থবিল ও সংবিধান সংশোধন ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে স্বাধীনভাবে মতামত ও ভোট দিতে পারবেন। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না, এ বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।

জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের বাইরে সংরক্ষিত ১০০ নারী আসনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল মোটামুটি একমত বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদ ব র ধ কম ট র ব এনপ আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর চালুর প্রস্তাব কমিশনের, আলোচনায় উত্তেজনা

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের উদ্দেশে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কটাক্ষ করে বলেন, ‘২৩ সালে কোথায় ছিলেন?’ তাঁর এ মন্তব্যে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে ক্ষমা চান এহসানুল হুদা।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিনের সংলাপের একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, বেলা ১টা ৫০ মিনিটের পরে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না।

উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না। তিনি বক্তব্য শেষ করার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ভোটের সংখ্যানুপাতিকের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাসিন।

তখন সালাহউদ্দিন আহমদ একটি ব্যাখ্যা দেন। তখনই জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ তখনই জাবেদ রাসিন তাঁর প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়াই) এবং এ নিয়ে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়।

তাঁদের দুজনই মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। তখন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ, আজকে যদি সে প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’

তারপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (এহসানুল হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন। আখতার তখন বলতে থাকেন, ‘আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।’

এ পর্যায়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘কারও লোকাস স্ট্যান্ডি (অধিকার/ সামর্থ্য) নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নেই। প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডি আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’ তখন আখতার বলেন, ‘গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।’

আলী রীয়াজ তখন বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’ আখতার তখনো বলতে থাকেন, ‘সবাইক নিয়ে আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা মাঠে নেমে এল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য ওনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি সরি বলেন।’ এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকি এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে আলী রীয়াজ তাঁকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন। তখন জোনায়েদ সাকি কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু মাইক না থাকায় তা শোনা যায়নি। এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ তখন এহসানুল হুদাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে তার জন্য সরি বলেন।’

তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম, ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল? তারপরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’

এরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ঘোষণা করেন। বিরতির সময়ে সম্মেলনকক্ষে এহসানুল হুদাকে আবার আখতারের কাছে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁর সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তখন হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিনক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদেরকে নিয়ে প্রশ্ন করার ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) ছিল না।’ তখন পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, আপনার এটা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। পরে আখতার এহসানুল হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।

আজকে সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ বিধানসম্পর্কিত বিধান; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার; রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব ; তত্ত্বাবধায়ক সরকার; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণসম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

আজকে আলোচনা শুরুর সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যেই আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার পথে কোনো বাধা দেখছি না: নজরুল ইসলাম খান
  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর চালুর প্রস্তাব কমিশনের, আলোচনায় উত্তেজনা
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির