রাজধানীর উত্তরায় নগদ ডিস্ট্রিবিউটরের দিনে দুপুরে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার কোনো কূল কিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি এ ঘটনায় নগদের লোকজনকেও সন্দেহে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ।

মঙ্গলবার  (১৭ জুন) দুপুরে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, “যারা অপরাধী তারা পুলিশ বা র‌্যাবের দুর্বলতা, ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে থাকে। সেদিন ছুটির দিন ছিল, তার মধ্যে সকালে মোটা অঙ্কের টাকা কেন নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের এমডি আব্দুল খালেক নয়নের বাসা থেকে দুটি মোটরসাইকেলে বহন করা হচ্ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঝুঁকি বিবেচনায় পুলিশের মানি স্কট সেবা পেতে যোগাযোগ করা হয়নি পুলিশের সঙ্গে। এসব জানতে নগদের চার কর্মীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।অনেক সময়ই নয়নের বাসায় টাকা রাখা হতো। মোটরসাইকেলে করেও মাঝে-মধ্যে টাকা বহন করতেন তারা। কিন্তু এটাই প্রথম এতো টাকা নয়ন সাহেবের বাসায় আগে কখনো রাখা হয়নি। এতো সকালে এভাবে কখনো বহনও করা হয়নি।”

পুলিশ জানায়, ছুটির দিন হওয়ায় মাইক্রো, হায়েস বা টাকা বহন করা গাড়িতে না নিয়ে গত ১৪ জুন সকালে ব্যাগে ভরে বাইকের মতো অনিরাপদ যানবাহনে বহন করা হয়েছিল নগদের দুটি ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের সোয়া কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, যে দুজনের উপরে টাকা বহনের দায়িত্ব, তারা ছিলেন অনুপস্থিত। তাদের অবর্তমানে অনভিজ্ঞ দুই সুপারভাইজারসহ ৪ জনের উপরে টাকা বহন করেন। শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে দুটি ব্যাগে ভরে দুটি মোটরসাইকেল যোগে ১ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়ে রওনা দেন ৪ জন। গন্তব্য উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর বাসা। যেখানে উত্তরায় নগদের ডিস্ট্রিবিউটরের অফিস। কিন্তু উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসার সামনে বাম পাশে পৌঁছতে আগে থেকেই ওৎপেতে থাকা ব্যক্তিরা দুই মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় র‌্যাব পরিচয়ে ৮/১০ জন অস্ত্রের মুখে ৪ জনকে জিম্মি করে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলেই কালো কাপড়ে ছিনতাইকারীদের মুখ ছিল ঢাকা। অস্ত্রের মুখে ৩ জনকে টাকার ব্যাগসহ হায়েস গাড়িতে উঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিধিমালা হালনাগাদ

ডাকসু নির্বাচনের জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন 

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ছাড়াও তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো-উত্তর ও পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। চাঞ্চল্যকর এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোট ৫ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রয়েছেন, নগদের উত্তরা ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম, সুপারভাইজার সঞ্জয় কুমার, ওমর আহমেদ ও তুরাগ অফিসের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান। অন্যদিকে মামলার বাদী আব্দুর রহমানকে ডেকে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “র‌্যাবের গোয়েন্দা ও অপারেশন বিভাগ ছাড়াও র‌্যাব-১ গভীরভাবে ছায়া তদন্ত করছে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় যারা সন্দেহের ভেতরে আছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

ঢাকা মেট্রো-উত্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন বলেন, “নিয়মিত কারা টাকা আনা-নেওয়া করতেন? সেদিন কেন অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? আবার দিনের টাকা দিনেই আনা-নেওয়া করা হতো। সেদিন কেন বেশ কয়েকদিনের টাকা বহন করা হচ্ছিল তাও আবার মাইক্রোবাসে নয়, মোটরসাইকেলে কেন বহন করা হচ্ছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। যারা আগে টাকা আনা-নেওয়া করতেন।”

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ডিবির একাধিক টিম তদন্তের পাশাপাশি অভিযানে আছে।”

পড়ুন: উত্তরায় র‌্যাবের পোশাক পরে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাই

ঢাকা/এমআর/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই ড স ট র ব উটর তদন ত কর ছ নত ই অফ স র র অফ স ঘটন য় নগদ র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ