উত্তরায় র্যাবের পোশাক পরে ছিনতাই: শনাক্ত হয়নি কেউ
Published: 17th, June 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় নগদ ডিস্ট্রিবিউটরের দিনে দুপুরে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার কোনো কূল কিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি এ ঘটনায় নগদের লোকজনকেও সন্দেহে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, “যারা অপরাধী তারা পুলিশ বা র্যাবের দুর্বলতা, ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে থাকে। সেদিন ছুটির দিন ছিল, তার মধ্যে সকালে মোটা অঙ্কের টাকা কেন নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের এমডি আব্দুল খালেক নয়নের বাসা থেকে দুটি মোটরসাইকেলে বহন করা হচ্ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঝুঁকি বিবেচনায় পুলিশের মানি স্কট সেবা পেতে যোগাযোগ করা হয়নি পুলিশের সঙ্গে। এসব জানতে নগদের চার কর্মীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।অনেক সময়ই নয়নের বাসায় টাকা রাখা হতো। মোটরসাইকেলে করেও মাঝে-মধ্যে টাকা বহন করতেন তারা। কিন্তু এটাই প্রথম এতো টাকা নয়ন সাহেবের বাসায় আগে কখনো রাখা হয়নি। এতো সকালে এভাবে কখনো বহনও করা হয়নি।”
পুলিশ জানায়, ছুটির দিন হওয়ায় মাইক্রো, হায়েস বা টাকা বহন করা গাড়িতে না নিয়ে গত ১৪ জুন সকালে ব্যাগে ভরে বাইকের মতো অনিরাপদ যানবাহনে বহন করা হয়েছিল নগদের দুটি ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের সোয়া কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, যে দুজনের উপরে টাকা বহনের দায়িত্ব, তারা ছিলেন অনুপস্থিত। তাদের অবর্তমানে অনভিজ্ঞ দুই সুপারভাইজারসহ ৪ জনের উপরে টাকা বহন করেন। শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে দুটি ব্যাগে ভরে দুটি মোটরসাইকেল যোগে ১ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়ে রওনা দেন ৪ জন। গন্তব্য উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর বাসা। যেখানে উত্তরায় নগদের ডিস্ট্রিবিউটরের অফিস। কিন্তু উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসার সামনে বাম পাশে পৌঁছতে আগে থেকেই ওৎপেতে থাকা ব্যক্তিরা দুই মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় র্যাব পরিচয়ে ৮/১০ জন অস্ত্রের মুখে ৪ জনকে জিম্মি করে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলেই কালো কাপড়ে ছিনতাইকারীদের মুখ ছিল ঢাকা। অস্ত্রের মুখে ৩ জনকে টাকার ব্যাগসহ হায়েস গাড়িতে উঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিধিমালা হালনাগাদ
ডাকসু নির্বাচনের জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ছাড়াও তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো-উত্তর ও পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব। চাঞ্চল্যকর এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোট ৫ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রয়েছেন, নগদের উত্তরা ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম, সুপারভাইজার সঞ্জয় কুমার, ওমর আহমেদ ও তুরাগ অফিসের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান। অন্যদিকে মামলার বাদী আব্দুর রহমানকে ডেকে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “র্যাবের গোয়েন্দা ও অপারেশন বিভাগ ছাড়াও র্যাব-১ গভীরভাবে ছায়া তদন্ত করছে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় যারা সন্দেহের ভেতরে আছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
ঢাকা মেট্রো-উত্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন বলেন, “নিয়মিত কারা টাকা আনা-নেওয়া করতেন? সেদিন কেন অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? আবার দিনের টাকা দিনেই আনা-নেওয়া করা হতো। সেদিন কেন বেশ কয়েকদিনের টাকা বহন করা হচ্ছিল তাও আবার মাইক্রোবাসে নয়, মোটরসাইকেলে কেন বহন করা হচ্ছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। যারা আগে টাকা আনা-নেওয়া করতেন।”
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ডিবির একাধিক টিম তদন্তের পাশাপাশি অভিযানে আছে।”
পড়ুন: উত্তরায় র্যাবের পোশাক পরে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাই
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই ড স ট র ব উটর তদন ত কর ছ নত ই অফ স র র অফ স ঘটন য় নগদ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।